ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

ইউপি ভোটের সহিংসতা অতীতের ধারাবাহিকতা: আ.লীগ

শামীম খান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২১
ইউপি ভোটের সহিংসতা অতীতের ধারাবাহিকতা: আ.লীগ

ঢাকা: ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা অতীতের ধারাবাহিকতারই অংশ বলে বলে মনে করছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তবে এ ধরনের ঘটনা যাতে ভবিষ্যতে আর না ঘটে তার জন্য এ সব সহিংসতার কারণ উদঘাটনে তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের নেতারা।

এবারের ইউপি নির্বাচন শুরু হওয়ার পর থেকে গত নভেম্বর মাসেই নির্বাচনী সহিংসতায় ৪৭ জন প্রাণ হারিয়েছেন। একটি বেসরকারি সংস্থা মানবাধিকার সংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) এক বিবৃতিতে এ তথ্য জানানো হয়।

পাঁচ ধাপের ইউপি নির্বাচনের মধ্যে এ পর্যন্ত তিন ধাপের ভোট গ্রহণ শেষ হয়েছে। এই নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হওয়ার পর গত জানুয়ারি থেকেই তৃণমূল পর্যায়ে বিভিন্ন ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয় এবং বিবাদমান গ্রুপগুলোর মধ্যে সংঘর্ষে হতাহতের ঘটনা ঘটতে থাকে। গত মার্চে করোনা পরিস্থিতির অবনতির কারণে নির্বাচন স্থগিত রাখা হয়। এরপর করোনা ভাইরাস সংক্রমণ কমে আসলে নির্বাচন প্রক্রিয়া ফের শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে সংহিসতাও বাড়তে থাকে। গত জানুয়ারি থেকে এ পর্যন্ত ৯০ জনের বেশি মারা গেছেন। গুরুতর আহত হয়েছেন সহস্রাধিক।

এসব সহিংসতার অধিকাংশ ঘটেছে আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী গ্রুপগুলোর মধ্যে। অধিকাংশ ইউপিতেই আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া চেয়ারম্যান প্রার্থীর বিরুদ্ধে দলের একাধিক বিদ্রোহী প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। আওয়ামী লীগের এই প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীদের মধ্যেই সংঘর্ষ ও হতাহতের ঘটনা ঘটছে। দলের কেন্দ্র থেকে বার বার হুঁশিয়ার এবং বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থার কথা বলা হলেও এতে তেমন ইতিবাচক প্রভাব পড়েনি। দলের নীতিনির্ধারকরাও বিষয়টি উপলদ্ধি করছেন। নির্বাচনী সহিংসতার এবং নিজেদের মধ্যে সহিংসতার কারণে তৃণমূল পর্যায়ে দলের সাংগঠনিক শৃঙ্খলার ওপর নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে বলে তারা মনে করছেন।

এদিকে এই পরিস্থিতির জন্য বিভিন্ন কারণকে সামনে নিয়ে আসছে আওয়ামী লীগ। অতীতের ধারাবাহিকতার অংশ হিসেবেই এই সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটছে বলে তারা মনে করছেন।     

আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, অতীতে জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ার সরকারের সময় ইউনিয়ন পরিষদের যত নির্বাচন হয়েছে সব নির্বাচনেই সহিংসতা ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার পেছনে ব্যক্তি স্বার্থ, গোষ্ঠীগত দ্বন্দ্ব কাজ করেছে। তারা এলাকায় নিজেদের প্রভাব ধরে রাখতে গিয়ে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ছেন এবং সহিংস ঘটনার জন্ম হচ্ছে।

তারা আরও জানান, নির্বাচন দীর্ঘদিন ধরে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। এর ফলে একটি এলাকায় সংঘর্ষের ঘটনা ঘটলে অন্য এলাকায় তার প্রভাব পড়ছে এবং পরবর্তী ধাপের নির্বাচনগুলোতেও এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। তাছাড়া বিএনপি নির্বাচনে আসেনি, কিন্তু দলটির নেতা-কর্মীরা স্বতন্ত্রভাবে নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। আবার বিএনপি-জামায়াত ও সাম্প্রদায়িক দলগুলোর নেতাকর্মীরা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে সমর্থন দিচ্ছেন এবং তাদের পেছনে থেকে সংঘর্ষে উস্কানি দিচ্ছেন। রাজনৈতিক স্বার্থ উদ্ধারের জন্য তারা নির্বাচনকে বিতর্কিত করার চেষ্টা করছেন। তবে এই নির্বাচনী সহিংসতার কারণ ও এর তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এসব তথ্য বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে যাতে এ ধরনের ঘটনা আর না ঘটে সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তারা।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পদক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম বাংলানিউজকে বলেন, অতীতেও সব সময়ই ইউপি নির্বাচনে এ ধরনের সহিংসতা-সংঘর্ষ ছিল। ব্যক্তি স্বার্থ, গোষ্ঠী স্বার্থ, প্রার্থীর সংখ্যা বেশি, এলাকায় প্রভাব প্রতিষ্ঠা, গ্রামকেন্দ্রীক প্রভাব ঠিক রাখা ইত্যাদি নানা কারণে এসব সংঘর্ষ ঘটছে।

তিনি বলেন, বিএনপি, জামায়াত ও সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠী নির্বাচন না করলেও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলে তারা আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীদের সমর্থন দিয়ে পেছন থেকে সংহিসংতায় উস্কানি দিচ্ছেন। আমরা এসব ঘটনার কারণসহ বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করছি। এগুলোর বিচার-বিশ্লেষণ করে পরবর্তীতে যাতে এ ধরনের ঘটনা না ঘটে সে ব্যবস্থা আমরা নেব। যারা দলের শৃঙ্খলা মানছেন না, শৃঙ্খলাবিরোধী কর্মকাণ্ডে জড়াচ্ছেন, তাদের বিরুদ্ধে কঠিন ও কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এসব অপরাধী, বিশৃঙ্খলা সৃষ্টিকারী ও সুযোগ সন্ধানীদের আওয়ামী লীগ করার পথ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এস এম কামাল হোসেন বাংলানিজকে বলেন, বাংলাদেশে সব সরকারের সময়েই ইউপি নির্বাচনে প্রাণহানি ঘটেছে। জিয়া, এরশাদ, খালেদা জিয়ার সময় যত নির্বাচন হয়েছে সব নির্বাচনেই মানুষ মারা গেছেন, এখনও তা ঘটছে।

তিনি বলেন, এসব সত্বেও নির্বাচনে ৭০ থেকে ৮০ ভাগ ভোটার কেন্দ্রে উপস্থিত হয়ে ভোট দিচ্ছেন। তবে এই সংঘাত, হানানানিতে তৃণমূল পর্যায়ে কিছুটা ভুল বুঝাবুঝি তৈরি হচ্ছে। এটা আমরা নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এসে দলে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে পারব বলে আশা রাখি।

বাংলাদেশ সময়: ১৯১৫ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৩, ২০২১
এসকে/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।