ঢাকা, বুধবার, ১১ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

রাজনীতি

নব্বইয়ের মতো গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য চান ফখরুল

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৮ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ৬, ২০২১
নব্বইয়ের মতো গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য চান ফখরুল

ঢাকা: বর্তমান সরকারকে হটাতে নব্বইয়ের মতো সব গণতান্ত্রিক শক্তির ঐক্য চান বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

সোমবার (৬ডিসেম্বর) দুপুরে রাজধানীর রমনায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনে স্বৈরাচার পতন ও গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসা ও মুক্তির দাবিতে আলোচনাসভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।

বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘এই সরকারের পায়ের নিচে মাটি নেই। এর বিরুদ্ধে আমাদের সবাইকে আজ ঐক্যবদ্ধ হতে হবে। নব্বইয়ের আন্দোলনলন সফল হয়েছিল তখনই, যখন গণতন্ত্রের পক্ষের সব শক্তিগুলো এক হয়েছিল। তখনই স্বৈরাচার এরশাদের পতন ঘটেছিল। আজকেও ঠিক একইভাবে সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ করে, দেশপ্রেমিক শক্তিগুলোকে ঐক্যবদ্ধ করে আমাদেরকে দুর্বার আন্দোলনের মধ্য দিয়ে এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারের পতন ঘটাতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই।

রাজধানীর এভার কেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন খালেদা জিয়াকে দ্রুত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানোর দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, ‘দেশনেত্রী আজকে বন্দি, তার চিকিৎসা হচ্ছে না। ডাক্তাররা বলেছেন, তার চিকিৎসা আমাদের হাতে শেষ। বর্তমানে বাংলাদেশে এমন কোনো চিকিৎসা কেন্দ্র নেই যে যেখানে খালেদা জিয়ার উন্নত ও পরবর্তী চিকিৎসা সম্ভব। সেটা একমাত্র আছে বিদেশের উন্নত সেন্টারে। যখন সারা দেশ, জাতি বলছে যে, তাকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো দরকার; তখন এই সরকার যারা জনগণের ও গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে এবং দেশকে সত্যিকার অর্থে বিক্রি করে দিয়ে নতজানু একটা অবস্থা তৈরি করতে চায় সেই সরকার তাকে বিদেশে যেতে দিচ্ছে না।

তিনি আরও বলেন, ক্ষমতাসীনরা বিভিন্ন রকম কথা বলছেন, আইনের কথা বলছেন। খালেদা জিয়ার বিদেশে চিকিৎসায় আইন নয়, বাধা হচ্ছে সরকার। আইনে পরিষ্কার ভাবে বলা হয়েছে ৪০১ ধারার অধীনে খালেদা জিয়াকে বিদেশে চিকিৎসার জন্য পাঠানো যেতে পারে।


‘তথ্য প্রতিমন্ত্রীকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে প্রশ্ন’

মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তথ্য প্রতিমন্ত্রী সোশ্যাল মিডিয়ায় জিয়া পরিবারের বিরুদ্ধে অত্যন্ত জঘন্য, নিকৃষ্ট কথা বার্তা বলছেন। একজন ভুইফোঁড়, ডাক্তার ছিলেন শুনেছি, সম্ভবত জামালপুরের সরিষাবাড়ীর। এটাও শুনেছি সে নাকি একসময় ছাত্র দল করতো। দুঃখের কথা, দুর্ভাগ্যের কথা। আগে সে ছাত্রদল করতো। সে ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজের প্রচার সম্পাদক ছিল। পরবর্তীকালে ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছে। ধিক্কার দেই তাকে, সেইম।

তিনি বলেন, ওই বক্তব্যের (তথ্য প্রতিমন্ত্রীর) শেষের যে অংশ টুকু সেটা অত্যন্ত মারাত্মক। বলেছে,  আমি যা কিছু করছি, প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশেই করছি এবং তিনি সবকিছু জানেন। আামি এই সভা থেকে প্রধানমন্ত্রীকে বলতে চাই এ কথা সত্য, না মিথ্যা- আপনাকে জানাতে হবে। কারণ আপনি প্রধানমন্ত্রী। দেশের মানুষের নিরাপত্তা, তার ( তথ্য প্রতিমন্ত্রী) নিজের মর্যাদাকে রক্ষা করা এবং একই সঙ্গে এই ভয়াবহ উক্তি যদি মিডিয়ার উদ্দেশ্যে একজন মন্ত্রী করতে পারে তাহলে আপনার সরকারের অবস্থান কী আমরা জানতে চাই। এর উত্তর দিতে হবে। কারণ আপনাকে জড়িয়ে এই কথা বলা হয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা জানতে চাই যে, আপনি কী এমন একটি সরকার গঠন করেছেন, যে সরকার দেশের সব কৃষ্টি, সৌজন্যবোধ, ঐহিত্য আছে তাকে বিনষ্ট করবে? রাজনীতিকে তো ধবংস করেছেনই, এখন ন্যুনতম মূল্যবোধ যেটুকু আছে, আমাদের মা-বোনদের প্রতি আমাদের সম্মান-শ্রদ্ধা সেটাও কি আপনি ধ্বংস করে দেবেন? আমরা তীব্রভাবে শুধু প্রতিবাদ নয়, আমাদের ঘৃণা প্রকাশ করছি, ধিক্কার জানাচ্ছি সেসব বক্তব্যের জন্য।

ফখরুল বলেন, এটা তাদের চরিত্র। এই যে বর্ণবাদী কথা, এই যে নারী বিদ্বেষী কথা; আমার বোনদের অনুরোধ করব আপনারা প্রতিবাদ করেন। আজকে আমি ধন্যবাদ জানাই কয়েকজন নারী নেত্রীকে, তারা প্রতিবাদ করেছেন।

ডা. মুরাদকে নিয়ে হৈ চৈ

বিএনপি মহাসচিবের বক্তব্যের এক পর্যায়ে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউটের দ্বিতীয়তলায় যুবদলের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের আহ্বায়ক গোলাম মাওলা শাহিন দাঁড়িয়ে মির্জা ফখরুলের বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে বলেন, ‘মুরাদ ছাত্রদল করেনি’। এ সময় মহাসচিবের সঙ্গে বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন এই তরুণ যুবদল নেতা। মির্জা ফখরুল তাকে থামিয়ে বলেন, ‘ইউ ডোন্ট নো। তুমি বাজে কথা বলবে না। তুমি জানো না। আমি জেনে বলছি। ’

তারপরও শাহিন পুনরায় মহাসচিবের সঙ্গে তর্ক শুরু করলে সারা মিলনায়তনে কর্মীরা ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। তখন মহাসচিব তাকে চুপ করতে বলেন এবং নিচে নেমে মঞ্চে আসার জন্য বলেন। তখন মিলনায়তনে ছাত্রদলের নেতা-কর্মীরা খালেদা জিয়া ও তারেক রহমানের পক্ষে শ্লোগান দিতে থাকেন।

এ সময় মঞ্চে থাকা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ, দক্ষিণের আবদুস সালাম হাত উঠিয়ে তাকে চুপ করতে বলেন।

বিএনপি মহাসচিব এই পর্যায়ে সবাইকে শান্ত হয়ে বসার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘দুর্ভাগ্য আমাদের যে, এক সময়ে সে ছাত্রদল করেছে, পরবর্তীতে ছাত্রলীগের নেতা হয়ে সভাপতি হয়েছে। এটা দুর্ভাগ্য আমাদের এরকম একটা ছেলে ওই সময়ে ছাত্রদলে ছিল। দিস ইজ দ্যা মোস্ট আনফোরচুনেট। এজন্যই বলছি, বড় কথা সেটা নয়, বড় কথা আজকে আমাদের ঐক্য সৃষ্টি করতে হবে, ঐক্যের মধ্য দিয়ে এই জালেম, এই ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী সরকারকে পরাজিত করতে হবে।

ডাকসুর সাবেক ভিপি আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে ও ছাত্ দলের সাবেক সভাপতি ফজলুল হক মিলনের পরিচালনায় আলোচনা সভায় নব্বইয়ের সাবেক ছাত্র নেতাদের মধ্যে আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, খায়রুল কবির খোকন, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, নাজিম উদ্দিন আলম, জহির উদ্দিন স্বপন, মোস্তাফিজুর রহমান বাবুল, সাইফুদ্দিন মনি, খন্দকার লুৎফুর রহমান, আসাদুর রহমান খান, কামরুজ্জামান রতন, এবিএম মোশাররফ হোসেন, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দীন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের আবদুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল, কৃষক দলের শহিদুল ইসলাম বাবুল, শ্রমিক দলের মুস্তাফিজুল করীম মজমুদার, ছাত্রদলের ফজলুর রহমান খোকন, ইকবাল হোসেন শ্যামল প্রমুখ বক্তব্য দেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৭০২ঘণ্টা, ডিসেম্বর ০৬, ২০২১
এমএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।