ঢাকা, শুক্রবার, ৭ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ২০ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

প্রধান বক্তা আইভীকে নিয়ে বিজয় সমাবেশে নেতারা চাইলেন ভোট!

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০২৩ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২১
প্রধান বক্তা আইভীকে নিয়ে বিজয় সমাবেশে নেতারা চাইলেন ভোট!

নারায়ণগঞ্জ: নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) এলাকায় তফসিল ঘোষণা পর প্রার্থীকে নিয়ে বা তার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দলের সভা সমাবেশ নিষিদ্ধ থাকলেও আওয়ামী লীগ দলীয় মেয়র প্রার্থীকে নিয়ে বিজয় সমাবেশ করেছে দলটি। এতে উপস্থিত কেন্দ্রীয় নেতারা আইভীর পক্ষে ভোট চেয়েছেন এবং মঞ্চে ছিল নৌকা প্রতীক।

এ নিয়ে অন্য মেয়র প্রার্থীরা অভিযোগ তুলেছেন আচরণবিধি লঙ্ঘনের এবং ছদ্মবেশে মেয়র প্রার্থী ডা. সেলিনা হায়াত আইভীর পক্ষে মাঠে নামার এবং নৌকা প্রতীক ও মেয়র আইভীর উপস্থিতির কারণে আচরণবিধির স্পষ্ট লঙ্ঘনের।

শুক্রবার (২৪ ডিসেম্বর) দুপুরে আইভীর বাড়ির এলাকা দেওভোগের শেখ রাসেল পার্কে এ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সমাবেশে নৌকা প্রতীক মঞ্চের সামনে টানিয়ে কর্মসূচি শুরু হয়। সমাবেশ মঞ্চে উঠেই নৌকার পক্ষে স্লোগান দেন আইভী।

মেয়র প্রার্থী আইভী এতে প্রধান বক্তার বক্তব্যে বলেন, আমি ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জের নির্বাচনে দলের পক্ষে জয়লাভ করেছিলাম, তখন বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে আমি নারায়ণগঞ্জের চাবি তুলে দিয়েছিলাম। আমার পিতা ১৯৮১ সালে যখন বঙ্গবন্ধুর কন্যা দেশে ফিরে এলেন তখন নারায়ণগঞ্জে যে সমাবেশ হয়েছিল সেখানে নারায়ণগঞ্জের চাবি তিনি তার হাতে তুলে দিয়েছিলেন। আমি ২০১১ সালে নির্বাচন করেছি। আবার ২০১৬ সালে নৌকার প্রতীকে জয়ী হয়েছি। এবারো আপনাদের সামনে হাজির হয়েছি, আমাকে দোয়া করবেন যেন নৌকার মান সম্মান রাখতে পারি। আপনারা সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে পারেন, কোন ষড়যন্ত্রের দিকে যেন আমরা পা না দেই।  সকল বাধা অতিক্রম করে ১৬ জানুয়ারি আমরা নেত্রীকে নৌকা উপহার দেব এই হলো আমাদের আজকের অঙ্গীকার।  

বিশেষ অতিথি নারায়ণগঞ্জ ২ আসনের (আড়াইহাজার) সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম বাবু বলেছেন, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী এ দেশের খেটে খাওয়া মানুষের একমাত্র ঠিকানা। তিনি বার বার আমাদের প্রিয় নেতা আলী আহমদ চুনকা সাহেবের মেয়ে সেলিনা হায়াৎ আইভীকে মনোনয়ন দিয়েছেন। আমাদের তাকে জয়ী করতে হবে।  বিজয় দিবসের আলোচনাকে সফল স্বার্থক করতে হবে। বার বার নৌকায় ভোট দিয়ে নারায়ণগঞ্জকে উন্নয়নের শহরে রুপ দিতে হবে। আপনাদের প্রতি আমার আহ্বান বার বার নৌকায় ভোট দিয়ে আপনারা শেখ হাসিনার হাতকে শক্তিশালী করুন। বাংলাদেশের মেহনতি মানুষের জন্য

বিশেষ অতিথি আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মির্জা আজম বলেছেন, কয়দিন পর এখানে নির্বাচন। নির্বাচন আসলেই দেশ বিরোধী শত্রুরা বিএনপি-জামায়াত আমাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে প্রার্থী হয়ে দাঁড়াই। আগামী ১৬ জানুয়ারি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিককে নাকি ৭১ এর ঘাতকদের ভোট দেবেন সেই সিদ্ধান্ত আপনাদের।

প্রধান অতিথি ছিলেন নাসিক নির্বাচনের আওয়ামী লীগ দলীয় সমন্বয়ক এবং দলের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর কবির নানক। তিনি বলেন, আপনাদের কাছে অনুরোধ করি, আগামী ১৬ জানুয়ারি আমাদের কাছে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচনে বিএনপির একজন প্রার্থী দাঁড়িয়েছেন। তিনি বলেছেন, তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী। এটি তাদের আরেকটি কৌশল। এই কৌশলের ব্যাপারে আরো সতর্ক থাকতে হবে। আমাদেরকে আরো সতর্ক থেকে আইভীকে জেতাতে হবে। প্রতিটি বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে আইভীর বার্তা পৌঁছে দিতে হবে। কোন পরিস্থিতিতে পা দেবেন না। আমরা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে এই দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

নির্বাচন কমিশনের আচরণবিধির ৫ নং ধারায় বলা আছে, কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে কোনো রাজনৈতিক দল, অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান কোনো জনসভা বা শোভাযাত্রা করতে পারবে না।  

আচরণবিধির ২২ নং ধারায় বলে আছে, সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি এবং কোনো সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারী নির্বাচন পূর্ব সময়ে নির্বাচনী এলাকায় প্রচারণায় বা নির্বাচনী কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করতে পারবেন না। তিনি যদি এ এলাকার ভোটার হন তাহলে শুধু ভোটকেন্দ্রে ভোট দিতে যেতে পারবেন। নির্বাচন পূর্ব সময়ে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কোনো ব্যক্তি, সংস্থা বা প্রতিষ্ঠান নির্বাচনী কাজে সরকারি প্রচারযন্ত্র, সরকারি যানবাহন, অন্য কোনো সরকারি সুযোগ সুবিধা ভোগ এবং সরকারি কর্মকর্তা বা কর্মচারীগণকে ব্যবহার করতে পারবেন না।

আবার ৩০ নং ধারায় বলা আছে, প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী বা তার পক্ষে অর্থ, অস্ত্র ও পেশী শক্তি কিংবা স্থানীয় ক্ষমতা দ্বারা নির্বাচন প্রভাবিত করা যাবে না। আচরণবিধির ১১ এর ২ উপধারায় বলা আছে, নির্বাচন পূর্ব সময়ে কোনো প্রকার মিছিল বা কোনোরূপ শোডাউন করা যাবে না।  

সরকারি সুবিধাভোগী অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি বলতে বোঝানো হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী, জাতীয় সংসদের স্পিকার, সরকারের মন্ত্রী, চিফ হুইপ, ডেপুটি স্পিকার, বিরোধী দলীয় নেতা, সংসদ উপনেতা, বিরোধী দলীয় উপনেতা, প্রতিমন্ত্রী, হুইপ, উপমন্ত্রী বা তাদের সমপদমর্যাদার কোনো ব্যক্তি, সংসদ সদস্য এবং সিটি করপোরেশনের মেয়র।  

স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থী অ্যাডভোকেট তৈমুর আলম খন্দকার জানান, আমি আগে আপত্তি দিয়েছি, আজও বলেছি ইসিকে। আমাদের বিজয় র‍্যালিতে আমি রিটার্নিং কর্মকর্তার নির্দেশ মেনে যাইনি, অথচ সেটা নারায়ণগঞ্জের ইতিহাসে একটি বৃহৎ র‍্যালি ছিল। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নেই, আমি সাংবাদিকদের মাধ্যমে তীব্র নিন্দা জানাই।

ইসলামী আন্দোলনের মেয়র প্রার্থী মুফতি মাসুম বিল্লাহ জানান, নিন্দা জানিয়ে কি হবে যদি ইসি পক্ষপাতমূলক আচরণ করা বন্ধ না করে। আমরা বার বার বলছি সমান অধিকার যেন থাকে কিন্তু তা হচ্ছে না। নির্বাচনী এলাকায় বিজয় সমাবেশের নামে সরকারি দলীয় মেয়র প্রার্থীর শো-ডাউনের তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। এ বিষয়ে ইসি পদক্ষেপ নেবে বলে আমরা বিশ্বাস করতে চাই।

নির্বাচনের সহকারী রিটার্নিং কর্মকর্তা ও জেলা নির্বাচন অফিসার মতিয়ুর রহমান জানান, আমি বিষয়টা আপনার কাছ থেকে মাত্র জানলাম। আমি আগে খোঁজ নেব কী হচ্ছে দলীয় সমাবেশ নাকি নির্বাচনী সমাবেশ। তারপর বিষয়টা জেনে পরবর্তী পদক্ষেপ নেব।

বাংলাদেশ সময়: ২০২২ ঘণ্টা, ডিসেম্বর ২৪, ২০২১

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।