ঢাকা, বুধবার, ৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ২২ মে ২০২৪, ১৩ জিলকদ ১৪৪৫

রাজনীতি

ফরিদপুরে বিএনপির নবগঠিত কমিটি বাতিলে আল্টিমেটাম

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
ফরিদপুরে বিএনপির নবগঠিত কমিটি বাতিলে আল্টিমেটাম

ফরিদপুর: অগণতান্ত্রিক ও অযোগ্যদের দিয়ে ফরিদপুর জেলা ও মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠনের অভিযোগ এনে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে বাতিলের দাবিতে বিক্ষোভ সমাবেশ ও সংবাদ সম্মেলন হয়েছে।  

নবগঠিত এ দুটি কমিটির এক-তৃতীয়াংশের বেশি সদস্য এতে উপস্থিত ছিলেন।

সদ্যগঠিত ১৯ সদস্যবিশিষ্ট জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটির নয়জনের মধ্যে পাঁচজন যুগ্ম আহ্বায়ক ও তিনজন সদস্য এবং ১৯ সদস্যবিশিষ্ট মহানগর কমিটির ১১ জন যুগ্ম আহ্বায়কের মধ্যে পাঁচজন যুগ্ম আহ্বায়ক ও দুজন সদস্য রয়েছেন তাদের মধ্যে।  

সংশ্লিষ্টরা দাবি করেছেন, দুই কমিটির ৩৬ জন সদস্যের মধ্যে প্রায় ২৭ জন সদস্য পদত্যাগ করবেন কমিটি বাতিল না হলে।  

অন্যদিকে দীর্ঘদিন পর হলেও ফরিদপুরে আহ্বায়ক কমিটি গঠনের মধ্য দিয়ে দল গঠনের একটি সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে জানিয়ে পদত্যাগের হুমকিকে দুঃখজনক হিসেবে মন্তব্য করেছেন অপরপক্ষ।  

গত শুক্রবার (১৫ এপ্রিল) বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ১৯ সদস্যবিশিষ্ট জেলা ও ১৭ সদস্যবিশিষ্ট মহানগর বিএনপির এই কমিটির অনুমোদন দেন।


ঘোষিত এই কমিটির প্রতি অনাস্থা জানিয়ে ফরিদপুর প্রেসক্লাবের হলরুমে আজ রোববার (১৭ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টার দিকে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। জনাকীর্ণ এ সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যের শুরুতেই মিথ্যা মামলায় খালেদা জিয়াকে সাজা দেওয়ার প্রতিবাদ জানিয়ে সদ্যগঠিত জেলা বিএনপির ২ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক সৈয়দ জুলফিকার হোসেন জুয়েল বলেন, যে ব্যক্তি দীর্ঘ ৩২ বছর জেলা বিএনপি সুসংগঠিত তো দূরের কথা বরং দলকে ধ্বংস করেছে তাকেই আবার দ্বায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আবার বিগত কমিটির একজন সদস্যকে এবারের কমিটির সদস্য সচিব করে সাবেক কমিটির সম্পাদকদের অমর্যাদা করা হয়েছে। ফরিদপুরের বিতর্কিত ব্যবসায়ী, বিএনপি নেতা বাবুলের পার্টনার ও আওয়ামী লীগের যশোদা জীবন দেবনাথের টাকায় কিবরিয়া স্বপন দলে গ্রুপিং করছেন।  

অঙ্গ সংগঠনের পদধারীরা বিএনপির কমিটিতে থাকতে পারবেন না বলে নীতিগত সিদ্ধান্ত থাকলেও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি খন্দকার নাসিরুল ইসলামকে সদস্য করা হয়েছে। এছাড়া মহানগর কমিটিতে একজন বয়স্ক ব্যক্তিকে আহ্বায়ক করা হয়েছে যার পক্ষে সরকারবিরোধী আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া কষ্টকর। দুষ্টুচক্র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানকে ভুল বুঝিয়ে ব্যক্তিস্বার্থ হাসিলের চেষ্টা করেছে অভিযোগ এনে তারা তিনদিনের মধ্যে এই কমিটি বাতিলের জোর দাবি জানান।  

সংবাদ সম্মেলনে আরও বক্তব্য দেন- জেলা কমিটির ১ নম্বর যুগ্ম আহ্বায়ক আফজাল হোসেন খান পলাশ। পরে রশিদুল ইসলাম লিটনের সভাপতিত্বে প্রেসক্লাব চত্বরে বিক্ষোভ সমাবেশ করেন তারা। এসময় সদ্যগঠিত জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক খন্দকার ফজলুল হক টুলু, আলী আশরাফ নান্নু, দেলোয়ার হোসেন দিলা এবং সদস্য, শহীদ পারভেজ ও জাফর হোসেন বিশ্বাস এবং মহানগর কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক এবি সিদ্দিকী মিতুল, এমটি আক্তার টুটুল, সামসুল আরেফিন সাগর, আরিফুজ্জামান অপু, এমদাদুল হক এমদাদ ও সদস্য কাইয়ুম মিয়া ও রাজন খান উপস্থিত ছিলেন। এছাড়া বিএনপির বিভিন্ন ইউনিট ও অঙ্গ সংগঠনের নেতারা তাদের সঙ্গে ছিলেন।

এদিকে সংবাদ সম্মেলনে উত্থাপিত অভিযোগকে অবান্তর উল্লেখ করে বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক শহিদুল ইসলাম বাবুল বলেন, কিবরিয়া স্বপন দীর্ঘ আন্দোলন সংগ্রাম করে হামলা-মামলা-নির্যাতনের শিকার। নতুন কমিটি দেওয়ায় সবাই উৎফুল্ল।  

এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সৈয়দ মোদাররেস আলী ইছা বলেন, তারা এভাবে সংবাদ সম্মেলন না করে দলীয় ফোরামে বলতে পারতেন। এটি করে তারেক রহমানের সিদ্ধান্তের প্রতিই চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলেন।  

সদস্যসচিব একে কিবরিয়া স্বপন বলেন, না পাওয়ার বেদনা থেকে এসব অভিযোগ করছেন তারা। আমি মনে করি শিগগিরই এসব ঠিক হয়ে যাবে। তারা দলীয় শৃঙ্খলায় ফিরে আসবেন।

জানা যায়- ‘অতিসত্বর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি গঠন করা হবে’ একথা জানিয়ে ২০১৯ সালের ৪ সেপ্টেম্বর বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে ফরিদপুর জেলা বিএনপি কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছিলো। এরপরে গত ১৫ এপ্রিল এ আহ্বায়ক কমিটি গঠিত হলো। প্রতিষ্ঠার পর থেকে ফরিদপুরে বিএনপির রাজনীতিতে দুটি ধারা চলছে। একদিকে সাবেক মন্ত্রী ও দলের সাবেক মহাসচিব কে এম ওবায়দুর রহমান এবং অপরদিকে সাবেক মন্ত্রী ও দলের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান চৌধুরী কামাল ইবনে ইউসুফ। বর্তমানে এই দুই নেতার অবর্তমানে রয়েছেন ওবায়দুর রহমানের মেয়ে বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শামা ওবায়েদ এবং কামাল ইউসুফের মেয়ে মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক নায়াব ইউসুফ।

এ ব্যাপারে শামা ওবায়েদ বলেন, যারা এ প্রতিবাদ করেছেন তারা পরীক্ষিত এবং দলের জন্য জেল-জুলুমের শিকার। প্রতিবাদ করা তাদের গণতান্ত্রিক অধিকার। তবে তাদের সব ব্যাপারেই যে আমি একমত তেমন নয়। তবে তারা এখনো অফিসিয়ালি আমাদের কিছু জানায়নি। জানালে আমরা বিষয়টি নিয়ে দলের শীর্ষ নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব।  

ফরিদপুরের বিএনপির অপরাংশের নেত্রী ও মহিলা দলের কেন্দ্রীয় যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী নায়াব ইউসুফ এ তৎপরতাকে অত্যন্ত দুঃখজনক উল্লেখ করে বলেন, এই গ্রুপিংয়ের কারণেই বিএনপি ক্ষতিগ্রস্ত। জাতীয়বাদী আদর্শকে ভালোবাসেন এমন সবার উচিত এখন এই ভেদাভেদ ভুলে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজপথে আন্দোলন সংগ্রামে শামিল হওয়া।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৭, ২০২২
আরএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।