ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৩ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৬ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

সরকারবিরোধী জোটের চিন্তাগতভাবে অনেক অগ্রগতি হয়েছে

মহসিন হোসেন, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১২২৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২২
সরকারবিরোধী জোটের চিন্তাগতভাবে অনেক অগ্রগতি হয়েছে মাহমুদুর রহমান মান্না

ঢাকা: এক সময়ের তুখোড় ছাত্র নেতা, ডাকসুর সাবেক ভিপি ও চাকসুর সাবেক সাধারণ সম্পাদক বর্তমানে নাগরিক ঐক্যর সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না। এক সময় বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেছেন।

তবে এখন সরকারের বিরুদ্ধে সরব। বিভিন্ন সভা সমাবেশে কঠোরভাবে সরকারের সমালোচনা করে কথা বলেন। ২০১৮ সালে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপির নেতৃত্বে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট গঠনেও তার বড় ধরনের ভূমিকা ছিল। শুক্রবার (২২ এপ্রিল) সন্ধ্যায় রাজধানীর তোপখানা রোডে নাগরিক ঐক্যর কার্যালয়ে বসে দেশের সবশেষ রাজনৈতিক অবস্থা নিয়ে একান্তে কথা বলেছেন বাংলানিউজের সঙ্গে। তার সেই আলোচনার চুম্বুক অংশ বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য তুলে ধরা হলো।  

 

বাংলানিউজ: সরকারবিরোধী বৃহত্তর জোটের কথা অনেক দিন ধরেই শোনা যাচ্ছে। তো আপনাদের সেই জোটের অগ্রগতির বিষয়ে কিছু বলেন।

মান্না: আপনি যদি সরকারবিরোধী জোটের বিষয়টা চিন্তাগতভাবে দেখেন তাহলে এর অনেক অগ্রগতি হয়েছে। ক্ষমতাসীনদের গত ১৩ বছরের দুঃশাসনের কারণে, বিশেষ করে নির্বাচনের পুরো ব্যবস্থাটাই ধ্বংস করে দিয়েছে তারা। সবাই মনে করে যে এই সরকারের অধীনে আর নির্বাচন সুষ্ঠু হবে না। আন্দোলন করে এদের সরিয়ে একটা অন্তর্বর্তী সরকার গঠন করতে হবে। এ ব্যাপারে বাস্তব অবস্থার কারণে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে আছে। একটা বিষয় হলো- এই সরকার চলে যাবে, তারপর কারা আসবে, কীভাবে আসবে, কী করবে- আমরা সে আলোচনা ভেতরে ভেতরে করছি। সরকার চলে গেলে বাকি সমস্যার আমরা সমাধান করতে পারব। এতদূর পর্যন্ত অগ্রসর আছে। আর একটা আছে, সব ব্যাপারেই যে ঐক্যমত হবে, এমনটা না। নিজেদের মধ্যে মতপার্থক্য থাকবে। সেক্ষেত্রে যারা যারা মিলবেন তারা একটা জোট করবেন। এরকম চার/পাঁচটা জোট হলে যুগপৎ আন্দোলন হবে।   সুতরাং আমি মনে করি মৌলিক অনেক বিষয়েই ঐক্যমত হয়েছে। আশা করি একটা ভালো ফল আসবে। প্রধানমন্ত্রী যেভাবে বলেছেন, আমাদের নাম ধরে যে এরা ষড়যন্ত্র করছে, একসঙ্গে হওয়ার চেষ্টা করছে। তো একসঙ্গে হওয়ার চেষ্টাতো এর আগে আওয়ামী লীগও করেছে। এরশাদের বিরুদ্ধেও ঐক্যবদ্ধ আন্দোলনই হয়েছিল। এখনও আমরা সেটাই চেষ্টা করছি।

বাংলানিউজ: বর্তমান সরকার না থাকলে কোন ধরনের সরকার, কীভাবে আসবে? তাছাড়া সেই সরকার কেমন হবে- সেটা কি নির্বাচনের আগে না পরে ঠিক করবেন?

মান্না: নির্বাচন আগে কেন? বর্তমান সরকার চলে গেলেইতো একটা সরকার লাগবে। সেটাতো ভোটের মাধ্যমে আসতে পারবে না।

বাংলানিউজ: আগামী নির্বাচন কি আপনারা জোটগতভাবে করবেন?

মান্না: নির্বাচন জোটগতভাবে হবে, নাকি আলাদাভাবে হবে সে ব্যাপারে আলোচনা চলছে। আপনি একটা দল আছেন, আপনি যদি মনে করেন আমি একাই পারি, তাহলে আপনি কারও সঙ্গে যাবেন কেন? আপনারতো একা নির্বাচন করার অধিকার আছে। ওই জায়গাটাই আমরা আলোচনা করছি।

বাংলানিউজ: আপনারা শুনেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান এটা প্রস্তাব দিয়েছেন, নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচনে জয়ী হলে বিজয়ী ও বিজিত সবাইকে নিয়ে একটা জাতীয় সরকার গঠন করবেন। এ বিষয়টিকে আসলে আপনি কীভাবে দেখছেন?

মান্না: উনি (তারেক রহমান) নিরপেক্ষ সরকারের কথা বলেননি, উনি বলেছেন কেয়ার টেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন হবে। নিরপেক্ষ সরকারতো কোনো সরকারের ধারণা হতে পারে না। কেন বলছি, ধরেন আজকে আওয়ামী লীগ সমস্যায় পড়লো একটা সরকার আসলো, কালকেই প্রশ্ন আসবে এই যে দ্রব্যমূল্য বেড়ে গেছে, এটা কন্ট্রোল করতে হবে। এ ব্যাপারে সেই সরকার অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নিতে পারবে? নিতে গেলেতো তখন বলবে সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। তখন আওয়ামী লীগ বলবে নিরপেক্ষ সরকার এটা করতে পারবে না। এরকম নিরপেক্ষ সরকার আমরা চাই না। হাজার হাজার কোটি টাকা পাচার করে ধরা পড়েছে, প্রধানমন্ত্রীর দু’জন আত্মীয় ধরা পড়েছেন। তাদের বিচার করা যাবে না? তখন বলবে বঙ্গবন্ধুর পরিবারের ক্ষতি করা হচ্ছে। এগুলো চলবে না। ওই নিরপেক্ষতার কথা বলছি না। এটা বিএনপিও বলছে বলে আমি মনে করি না। বরং আমরা এই সরকারের পরিবর্তে এমন একটা সরকার চাই যারা সবদিক থেকে একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করবে। আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি তিন মাসের কেয়ারটেকার সরকার দুই বছর দিয়ে শুরু করতে হবে। তাদের মিনিমাম তিন বছর লাগবে।

বাংলানিউজ: আপনি বলছেন যে এই সরকার চলে গেলে যে কেয়ারটেকার সরকার আসবে তাদের নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করতে তিন বছর লাগবে। তাহলে এই তিন বছর আপনারা যারা বিরোধী দলে আছেন তারা সরকারে যাবেন না?

মান্না: কেন যাব না? চাইলেই যাব। তিন বছরের যে সরকারটা আসবে সেটাতো আমরা তথাকথিত নিরপেক্ষ সরকার চাচ্ছি না।

বাংলানিউজ: তাহলে সেই সরকারে কি আওয়ামী লীগেরও প্রতিনিধি থাকবে?

মান্না: আমি বলব না থাকতে। কেন বলব? তারা এত অন্যায় করেছে। নির্বাচনী ব্যবস্থাটা ধ্বংস করে দিয়েছে। তারা যদি সরকারে থাকে তাহলে তাদের ব্যাপারে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাবে না। কোনো বিচার করা যাবে না। সুতরাং তারা না থাকাই ভালো।

বাংলানিউজ: তাহলে জাতীয় সরকারের যে বিষয়টা সেটা নির্বাচনের আগেই চাচ্ছেন?

মান্না: আমি জাতীয় সরকার একবারও বলিনি। জাতীয় নয়, সেটার নাম হবে অন্তর্বর্তী সরকার। জাতীয় বলছি না এজন্য যে, জাতীয় যদি বলেন, তাহলে যারা আছে সবাইকে নিয়েইতো জাতীয় হয়।

বাংলানিউজ: আপনাদের জোটের নেতা আ স ম আবদুর রব তো সব সময় জাতীয় সরকারের বিষয়টা বলেন।

মান্না: এটা আমি বলি না। ওনাকেও বলেছি, আপনি কি এর মধ্যে আওয়ামী লীগ নেবেন? উনি বলেছেন না। তাহলে জাতীয় হয় কীভাবে? আপনি কী জামায়াত নেবেন? হেফাজত নেবেন? তাহলে জাতীয় হলো কীভাবে? জাতীয় বলে ফেলেছেন বলেন, কিন্তু আমি যে ধারণাটা বলছি এই ধারণার সঙ্গে তার দ্বিমত নেই। আপনি প্রশ্ন করে দেখতে পারেন। আওয়ামী লীগ থাকবে? জামায়াত থাকবে? বলবে না, তারা কেউ থাকবে না।

বাংলানিউজ:আপনি যে তিন বছরের কেয়ার টেকার সরকারের কথা বললেন, এর যে রূপরেখা তা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে কোনো আলোচনা হয়েছে?

মান্না: না এখনও হয়নি।

বাংলানিউজ:আপনার বক্তব্য অনুযায়ী মূল ইস্যু বর্তমান সরকারের পতন। সেই লক্ষ্যে আপনারা আন্দোলন করবেন। এই সরকারের মেয়াদ আগামী ২০২৩ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত আছে। আপনাদের আন্দোলন কবে নাগাদ শুরু হবে?

মান্না: আজকেই শুরু করতে চাই। পারলে কালকে ফেলে দিতে চাই।

বাংলানিউজ: এ বিষয়ে জোটের সবাই কি প্রস্তুত?

মান্না: এটা মৌখিকভাবে সবাই হ্যাঁ বলবে। তবে কার্যকরভাবে সবাই নাও করতে পারে।

বাংলানিউজ: তাহলে আন্দোলনটা কবে নাগাদ শুরু হতে পারে?

মান্না: যদি বলেন জোটগত, তাহলে কোনো উত্তর দিতে পারবো না, কারণ সেই জোটটা এখনও হয়নি। আন্দোলন দেশে যখন তখন হতে পারে। এই ঢাকা কলেজে আন্দোলন এটাও একটা সামাজিক অস্থিরতার প্রকাশ। হঠাৎ করে একটা ঘটনা, রাজনৈতিকভাবে ঘটে গেলে ৭ দিনেই শেষ হয়ে যেতে পারে। পৃথিবীর বহু দেশে এরকম হয়েছে।

বাংলানিউজ: ঢাকা কলেজের ছাত্র ও নিউমার্কেটের দোকান কর্মচারীদের মধ্যে মারামারারি ঘটনায় বিএনপি নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে এ বিষয়ে আপনি যদি কিছু বলেন।

মান্না: এটার আর কী বলব, এটা একটা নষ্ট সরকার। এখানে বিএনপির নাম দেওয়ার কী আছে? এটা কী বিএনপির কোনো ব্যাপার? ঢাকা কলেজের ছাত্রদের সঙ্গে। ঢাকা কলেজে কি বিএনপি আছে? ঢাকা কলেজে ছাত্রলীগ ছাড়া অন্য কোনো দল আছে? নিউ মার্কেটের যে হকার্স সমিতি আছে ওখানেও আওয়ামী লীগ ছাড়া অন্য কোনো লোক আছে? দিয়ে দিল নাম, এমন কাজ তো তারা সব সময়ই করে।  

বাংলাদেশ সময়: ১১৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২৩, ২০২২
এমএইচ/এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।