রাজশাহী: রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলামের অপকর্মের সত্যতা যাচাইয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ। পাশাপাশি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের অপকর্মেরও তদন্ত করবে এ কমিটি।
উদ্ভূত পরিস্থিতিতে বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাতে ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় সভাপতি আল-নাহিয়ান খান ও সাধারণ সম্পাদক লেখক ভট্টাচার্য স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে গণমাধ্যম কর্মীদের এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে- কেন্দ্রীয় নির্বাহী সংসদের এক সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ কিছু নেতার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের অধিকতর তদন্তের স্বার্থে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হলো। একই সঙ্গে তদন্ত কমিটিকে আগামী সাত কার্যদিবসের মধ্যে সুপারিশসহ তদন্ত প্রতিবেদন কেন্দ্রীয় দফতর সেলে জমা দেওয়ার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হলো।
তদন্ত কমটিতে সদস্য রাখা হয়েছে- কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের গণযোগাযোগ উন্নয়ন বিষয়ক সম্পাদক শেখ শামীম তূর্য, আইন বিষয়ক উপ-সম্পাদক আপন দাস ও সহ-সম্পাদক তানভীর আবদুল্লাহকে। বর্তমানে তারা রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের তদারকির দায়িত্বেও আছেন।
এদিকে, তদন্ত কমিটি গঠন করলেও ছাত্রলীগের বিজ্ঞপ্তিতে নেতাদের বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের বিষয়ে কিছু বলা হয়নি। তবে বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) রাতে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি সাকিবুল ইসলামের সঙ্গে এক নারী নেত্রীর কথোপকথনের রেকর্ড সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।
নেট দুনিয়ায় ফাঁস হওয়া ৪ মিনিট ২৯ সেকেন্ডের ওই অডিওতে ‘আপত্তিকর’ বিষয় নিয়ে কথোপকথনের একাংশে সাকিবুলকে বলতে শোনা যায়, ‘শোনো, আমার চোখ চারদিকেই থাকে। এসব চিটারি করতে পারবা না। বহুত বড় চিটারি-বাটপারি কইরি আমি প্রেসিডেন্ট (জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি) হইছি...। সব চিটারের দলের সরদার আমি। ’ এই অডিওটি এখন ভাইরাল।
ওই অডিওতে রানাকে বলতে শোনা যায়- ‘তুমি আমার সাথে নাটক করিচ্ছো তাই না?’ মেয়েটি তাকে বলেন, ‘কিসের নাটক ভাইয়া?’ রানা বলেন, ‘তোমার কথা-কাজে মিল পাচ্ছি না। চিটারি করতে পারবা না। বহুত বড় চিটারি-বাটপারি কইরি আমি প্রেসিডেন্ট হইছি। সব চিটারের দলের সর্দার আমি। তুমি না হয়, আসতে চায়া আসলে না, কাকে যে পাঠাতে চাইলে সে কই? একজনের সাথে কইরি তুমি যদি বড় নেত্রী হও, সেটা মানুষ মাইনি লিতে পারে না, তুমি বুঝ না?’ তখন ওই ছাত্রলীগ নেত্রী তাকে বলেন, ‘এগুলো তো ভাইয়া অবান্তর কথা, আর আমার ফাইন্যান্সিয়াল সাপোর্ট দরকার নাই। আমি যথেষ্ট ভালো আছি। সংগঠনটাকে ভালোবেসেই আসছিলাম। ’
তখন রানা বলেন, ‘তাহলে শোনো ঠিক আছে আর শান্ত-মান্তর কোনো বেল নাই। ’ ওই মেয়েটি বলেন, ‘তো ভাইয়া আপনি মেয়ের কথা কালকে বলছিলেন, তো আমি ছবি পাঠাইছিলাম। ’ রানা বলেন, ‘দেখ দেখ পাঠাতে পারো নাকি?’ ওই নেত্রী বলেন, ‘উনিও তো ফ্যামিলির সঙ্গে থাকে। ’ রানা তখন বলেন- ‘এখন আটটা বাজে। কী এমন রাত? দেখ দেখ ফোন দাও। পাঠাও। কেউ যেন না জানে। ’ মেয়েটি তাকে বলেন, ‘কে জানবে, আপনি আমাকে ভরসা করতে পারেন। ’
এর আগেও এক নারীর সঙ্গে রানার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়। এছাড়া গেল কয়েক দিন আগে তার একটি পুরোনো ছবিও ভাইরাল হয়। সেখানে দেখা যায় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা সাবেক মেয়র মিজানুর রহমান মিনুর সঙ্গে ছাত্রদল নেতাদের সারিতে রয়েছেন সাকিবুল ইসলাম রানা।
আর এই অডিও ভাইরাল হওয়ার পর বৃহস্পতিবার দুপুরে ছাত্রলীগের এই নেতার বিরুদ্ধে প্রতারণার মামলাও হয়েছে। মামলাটি করেছেন দুর্গাপুর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আতিকুর রহমান। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাডহকে চাকরি দেওয়ার কথা বলে সাকিবুল এক লাখ টাকা নিয়েছেন বলে অভিযোগ তুলেছেন তিনি। আদালতের বিচারক মো. লিটন হোসেন মামলা আমলে নিয়ে সমন জারি করেছেন বলে জানিয়েছেন বাদীপক্ষের আইনজীবী ইমরান কলিম খান। আগামী ১২ ডিসেম্বর আসামিকে আদালতে আত্মসমর্পণ করতে বলা হয়েছে।
এর আগে রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেনের বিরুদ্ধে এক কলেজছাত্রকে মারধরের অভিযোগ ওঠে। গত ২৫ জুলাই এক কলেজছাত্রকে চুরির অপবাদ দিয়ে রাতভর আটকে নির্যাতন করার অভিযোগ ওঠে। এছাড়া সম্প্রতি ফেনসিডিল পানের একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে। যদিও জাকির বলছেন, তার বিরুদ্ধে এগুলো ষড়যন্ত্র।
আর একই রকমভাবে দলের ভেতর থেকেই তার ষড়যন্ত্রের দাবি করেছেন সভাপতি সাকিবুল ইসলামও। তিনি বলেছেন, অডিও ফাঁস কিংবা মামলা এগুলো সবই মিথ্যা, সবই ষড়যন্ত্র।
বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৬, ২০২২
এসএস/এসএ