ঢাকা: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শাখা ছাত্রদলের নবগঠিত কমিটির নেতাদের ওপরে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীদের হামলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। বলেছেন, ঢাবির ভিসি ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন, তাকে অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।
বুধবার (২৮ সেপ্টেম্বর) দুপুর ১২টায় গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ দাবি জানান।
এ সময় মির্জা ফখরুল বলেন, মঙ্গলবার (২৭সেপ্টেম্বর) ঢাবি ভিসির অনুমতি নিয়ে বিকেল চারটার দিকে ছাত্রদলের নবনির্বাচিত কার্যকরী কমিটি ক্যাম্পাসে প্রবেশ করছিল। সেই সময় তাদেরকে ছাত্রলীগের সন্ত্রাসীরা জঘন্যভাবে হামলা করে, বলা যেতে পারে হত্যার উদ্দেশ্যে প্রচণ্ডভাবে মারধর করে। পত্রিকায় ছবি এসেছে তাদের উদ্দেশ্য ছিল হত্যা করা। এই ছাত্ররা এখন বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন। আমরা এই জঘন্য মধ্যযুগীয় বর্বর হামলার তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কার ও যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি। সেই সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি যিনি ছাত্রদের নিরাপত্তা দিতে সম্পূর্ণরূপে ব্যর্থ হয়েছেন, তাকে অপসারণের দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, অনির্বাচিত অবৈধ সরকারের নির্দেশে সারাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ছাত্রলীগের হামলা, নিজেদের মধ্যে সংঘর্ষ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলো বন্ধ করে দেওয়া ও নৈরাজ্য সৃষ্টি করা হয়েছে। কয়েকদিন আগে ইডেন কলেজে ছাত্রলীগের অন্তর্কোন্দল দেখেছেন। তারা সব জায়গায় নিজেদের মধ্যে গোলমাল করছে। অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের ওপর হামলা করছে। নেত্রকোনায় গণঅধিকার পরিষদ একটি কর্মসূচি শেষ করে আসার সময় হত্যার উদ্দেশ্য আক্রমণ করা হয়। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে যা ঘটছে, রাজনৈতিক অঙ্গনে যা ঘটছে সবগুলোর দায়দায়িত্ব নিয়ে সরকারের পদত্যাগ করে নিরপেক্ষ সরকারের হাতে ক্ষমতা দিয়ে সত্যিকার অর্থে জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠার ব্যবস্থা করা উচিত।
তিনি আরও বলেন, গত ২৬ সেপ্টেম্বর দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে স্থায়ী কমিটির ভার্চ্যুয়াল সভা হয়। মুন্সিগঞ্জে গত ২১ সেপ্টেম্বর বিএনপির পূর্ব ঘোষিত শান্তিপূর্ণ সমাবেশে পুলিশের গুলিতে যুবদল কর্মী শহীদুল ইসলাম শাওন গুলিবিদ্ধ হয়ে মারাত্মকভাবে আহত হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর ২২ সেপ্টেম্বর মৃত্যুবরণ করেন। আরও অসংখ্য কর্মী আহত হন। তাদের মধ্যে ২ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক হওয়ায় সভায় তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আগস্ট থেকে জ্বালানি তেলসহ নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদির অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে চলমান কর্মসূচিতে আজ (২৮সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত ভোলায় নূরে আলম, আব্দুর রহিম, নারায়ণগঞ্জে শাওন, মুন্সিগঞ্জে শহিদুল ইসলাম শাওন, যশোরে আব্দুল আলিমসহ ৫ জন নিহত হয়েছেন। তার মধ্যে ফ্যাসিস্ট সরকারের পুলিশ ৪ জনকে গুলি করে এবং ১ জনকে আওয়ামী সন্ত্রাসীরা হত্যা করেছে।
এসময় ২ হাজার ৭৬৮ জনের অধিক আহত, ২৯৪ জন কর্মী গ্রেফতার, প্রায় ৭৫টি মিথ্যা মামলায় এজাহারভুক্ত ৫ হাজার ৪৭০ জনসহ প্রায় ২৫ হাজার নেতা-কর্মীকে আসামি করে মামলা দায়েরের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানানো হয়।
তিনি বলেন, সভা মনে করে, জনগণের ন্যায় সংগত দাবিতে আন্দোলন দমন করতেই এই অনির্বাচিত সরকার, হত্যা, পুলিশি নির্যাতন, মিথ্যা মামলার আশ্রয় নিচ্ছে। জনগণ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন, নির্যাতনকারী, মানবাধিকার হরণকারী এই খুনী সরকারকে সব হত্যা ও নির্যাতনের দায় স্বীকার করে অবিলম্বে পদত্যাগ করে নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াসহ সব গ্রেফতারকৃত নেতা-কর্মীকে মুক্তি ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ সব নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
সভায় অনির্বাচিত সরকারের দাবিতে চলমান আন্দোলনকে আরও বেগবান করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। পাশাপাশি আগামী ৮ অক্টোবর থেকে ১০ডিসেম্বর সময়ের মধ্যে সারাদেশের ১০টি সাংগঠনিক বিভাগে গণসমাবেশ করার সিদ্ধান্ত হয়। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী ১০ডিসেম্বর ঢাকায় মহাসমাবেশ করা হবে বলে জানান মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম।
>>> আরও পড়ুন: নতুন নতুন কর্মসূচি নিয়ে আসছে বিএনপি
বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৪ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৮, ২০২২
এমএইচ/এমএমজেড