ঢাকা, শুক্রবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

মানুষ যেভাবে গণসমাবেশে যাচ্ছে তা অভ্যুত্থানের মতোই: মান্না

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৩৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ৪, ২০২২
মানুষ যেভাবে গণসমাবেশে যাচ্ছে তা অভ্যুত্থানের মতোই: মান্না

ঢাকা: বিএনপির চলমান বিভাগীয় গণসমাবেশের দিকে ইঙ্গিত করে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, মানুষ যেভাবে সমাবেশগুলোতে অংশ নিচ্ছে, এগুলো অভ্যুত্থানের মতোই।  

তিনি বলেন, সব কিছু বন্ধ, তারপরও মানুষ যাচ্ছে।

এরা সবাই বিএনপির সমর্থক নয়। এখানে সাধারণ মানুষও আছে, যারা মনে করেন জিনিসপত্রের দাম কমা দরকার।

শুক্রবার (০৪ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া মিলনায়তনে ৫০তম সংবিধান দিবস উপলক্ষে আয়োজিত ‘সংবিধান সংস্কার কেন প্রয়োজন এবং কিভাবে সম্ভব’ শীর্ষক এক আলোচনা সভায় মান্না এ কথা বলেন।

মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, মানুষ এখনকার ক্ষমতাসীনদের অত্যাচারে জর্জরিত। দ্রব্যমূল্যের কষাঘাতে যাকে পায় তাকে আঁকড়ে ধরার চেষ্টা করছে, কারণ তাদের তো বাঁচতে হবে।

গণতন্ত্র মঞ্চ জনগণের প্রতিনিধিত্ব করবে জানিয়ে নাগরিক ঐক্যের সভাপতি বলেন, গণতন্ত্র মোর্চার যে বইগুলো আছে সেগুলো নিশ্চয় পড়ে দেখেছেন। যেগুলো বলেছি, তার ভিত্তিতে থাকতে চাই, লড়াইটা করতে চাই। লাগাতারভাবে এই কথাগুলো বলতে চাই। জনগণের ভাষায় কথা বলতে হবে। এই জোট সম্পর্কে মানুষের মধ্যে যেন সবচাইতে ভালো আগ্রহ জন্মে। মানুষ মনে করবে মুক্তি এরাই (গণতন্ত্র মঞ্চ) দিতে পারে, ওরা (অনান্য রাজনৈতিক দল) যতোই বড় দল হোক বড় বড় কথা বলুক ওদের দিয়ে হবে না।  

সংবিধানে পরিবর্তন আনা প্রয়োজন জানিয়ে মান্না বলেন, সংবিধান পরিবর্তন করতে হলে জেনে-বুঝে ধীরে এগিয়ে যেতে হবে। এই সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে জারের মতো ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে। বেশিরভাগ লোকই সংবিধানের ধারা সম্পর্কে জানে না। সংবিধানের ৭ ধারা থাকলে এই সরকারের বিরুদ্ধে কোথাও কিছু বলা যাবে না। ৭ ধারা থাকলে মানুষের অধিকার থাকবে না। সুতরাং মানুষকে সংবিধান সম্পর্কে সহজ করে বলতে হবে, যাতে মানুষ বিশ্বাস করে এই সংবিধান পরিবর্তন করা দরকার।

তিনি আরও বলেন, মানুষকে সংবিধান বুঝিয়ে আন্দোলনে আনা কষ্ট। মানুষকে ‘দ্রব্যমূল্য বেশি রাখা হচ্ছে’, ‘এরা (ক্ষমতাসীনরা) চোর’ বলে আনতে পারবেন।  

বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান যখন তৈরি করা হয়, ইংরেজিতে করা হয়। পরে প্রফেসর আনিসুজ্জামানদের অনুবাদের দায়িত্ব দেওয়া হয়। সংবিধানের যে স্বৈরতান্ত্রিক কাঠামো, প্রধানমন্ত্রীকে কেন্দ্র করেই তৈরি করা হয়েছে। ৩টি সংশোধনীর বাইরে যে সংশোধনীগুলো এগুলো সামরিক সরকারকে বৈধতা দেওয়ার জন্য করা হয়েছে।  সংবিধান নিয়ে প্রধান আপত্তিটা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর জবাবদিহিতার কোনো বিধান নেই। একজন নাগরিক হিসেবে প্রশ্ন করার কোনো সুযোগ নেই এবং নেই বলেই প্রধানমন্ত্রী গতকাল (বৃহস্পতিবার) বললেন, বিএনপি বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে জেলে পাঠাবেন। কি নির্মম সত্যি তিনি অবলীলায় উচ্চারণ করলেন। জাতীয় পার্টিকে নিয়েও সরকার খেলাধুলা করছে। এই যে চাপ, ব্ল্যাকমেইলিংয়ের রাজনীতি সংবিধান পরিবর্তন ছাড়া এটি পরিবর্তন সম্ভব নয়। এরা সংবিধানকে কাগজের টুকরার বাইরে কিছুই মনে করে না। দরকার হলে ডাস্টবিনে ফেলো, দরকার হলে তুলে এনে পবিত্র শব্দটা লাগিয়ে দাও। বাংলাদেশে একজন মাত্র লোক স্বাধীন, তিনি হচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী, এটা আমি আগেও বলেছি। এমনকি, রাষ্ট্রপতিরও কোনো স্বাধীনতা নেই।

রাষ্ট্রপতির প্রসঙ্গে সাইফুল হক বলেন, একটা কোনো নজির আছে যেখানে বিরোধীদল বা সাধারণ জনগণের দাবির মুখে তিনি কোনো আইন পর্যালোচনার জন্য ফেরত পাঠিয়েছেন? তার অর্থ কি? তার অর্থ হচ্ছে, নাক, কান, গলা কেটে সংবিধানকে একটা কিম্ভূতকিমাকার বস্তুতে পরিণত করা হয়েছে।

রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সমন্বয়ক অ্যাডভোকেট হাসনাত কাইয়ুম বলেন, সংবিধান নিয়ে যারা প্রশ্ন তুলেছেন ১৯৭২ সাল থেকে তাদের প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা। এর মধ্যে যতটুকু যৌক্তিক, আমরা নিজেদের মধ্যে ধারণ করেছি। আমরা মনে করি, আমরা এখানে যারা আছি, যারা নাই তারা কেউ হয়ত ৭টা, ৫টা, ২টা জায়গায় সংস্কার করার কথা বলি। আমরা যদি, সংস্কারের পথটা যদি ঠিক করে মানুষের সামনে তুলে ধরতে পারি, তাহলে অতিদ্রুত দেশের প্রেক্ষাপট পাল্টে যাবে। দেশের মানুষ আজ এই পরিবর্তনের দিকে তাকিয়ে আছে।

গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি বলেন, বাংলাদেশে স্বাধীনতা এলো, দেখা গেলো শাসকরা সেটার উপযোগী রাষ্ট্র ব্যবস্থা করার ব্যাপারে আগ্রহী নন। প্রচণ্ড এক স্বৈরতান্ত্রিক মনোভাব শাসকগোষ্ঠীর মধ্যে রয়ে গেছে। সংবিধান প্রণয়নের মূল দৃষ্টিভঙ্গি দেখলে মনে হবে একটা দল তাদের কাছে চিরদিন ক্ষমতা রাখতে হবে, তারাই চিরদিন দেশ চালিয়ে যাবে। একজন ব্যক্তি কি চিরদিন থাকবেন? নানা কারণেই তো না থাকতে পারেন তিনি। ফলে, এই যে পুরো সংবিধান নির্মাণের প্রক্রিয়া, তাতে একটা গৌরব তো আছেই, কিন্তু পাশাপাশি যে গলদ আছে, সেটা আমাদের তুলতে হবে। এ কারণেই ইতিহাস অতীত নয়, ইতিহাস আমাদের বর্তমানের দিশা তৈরি করে। বর্তমান রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা একটা কর্তৃত্ববাদী মডেল, যা ৯০ এর দশক থেকে বিভিন্ন দেশে চালু আছে। তবে, দেশে বর্তমান সরকারের নেতৃত্বে এই মডেল চালু হয়েছে।  কাজেই আমরা এমন জায়গায় দাঁড়িয়ে আছি, যেখানে ফ্যাসিবাদকে আমাদের ভবিতব্য হিসেবে চিন্তা করা হচ্ছে। ফলে, এই অবস্থায় এই অবস্থায় পরিবর্তন আসতে হলে, আমাদের সংবিধান পরিবর্তন করতে হবে, সংস্কার করতে হবে। সরকার যদি নিরাপত্তা চায়, তাহলে অবশ্যই সংবিধান পরিবর্তন করেই সেটি নিশ্চিত করতে হবে।

সমাবেশে গণতন্ত্র মঞ্চের বিভিন্ন স্তরের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ০৪, ২০২২
এমকে/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।