ঢাকা: বিএনপির ঢাকায় সমাবেশ করার অনুমতি পাওয়া নিয়ে তৈরি হতে পারে নানা ধরনের জটিলতা। উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরির আশঙ্কা থাকলে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা তা নিয়ে সরকারের মধ্যে নানা হিসাব-বিশ্লেষণ রয়েছে।
সরকার ও আওয়ামী লীগের কয়েকজন নীতিনির্ধারণী পর্যায়ের নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, আগামী ১০ ডিসেম্বর বিএনপি ঢাকায় যে সমাবেশ ডেকেছে ওই কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে দলটি ইতোমধ্যেই বিভিন্ন হুমকি দিতে শুরু করেছে।
উত্তেজনা, আতঙ্ক ছড়িয়ে একটা বিশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তারা তৈরি করতে পারেন এমন আশঙ্কা উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না। সরকার ও দলের সংশ্লিষ্টরা সবকিছু পর্যবেক্ষণ ও পর্যালোচনা করছে।
তারা আরও জানান, বিএনপির নেতারা বলছেন ১০ ডিসেম্বরের পর দেশ চলবে খালেদা জিয়ার নির্দেশে ৷ ওইদিন খালেদা জিয়াকে সমাবেশ মঞ্চে নিয়ে আসা হবে এমন ঘোষণাও দিচ্ছেন বিএনপি নেতারা। খালেদা জিয়া দুর্নীতির মামলায় একজন সাজাপ্রাপ্ত আসামি। করোনা পরিস্থিতি এবং খালেদা জিয়ার বার্ধক্যজনিত শারীরিক অবস্থা বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সরকারের নির্বাহী ক্ষমতা বলে প্যারোলে মুক্তি দিয়ে বাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করেছেন। খালেদা জিয়াকে নিয়ে যদি এ ধরনের কোনো সুযোগ খোঁজার চেষ্টা হয় তবে সরকার চুপ থাকবে না ৷ প্রধানমন্ত্রীও বলেছেন বাড়াবাড়ি করলে খালেদা জিয়াকে কারাগারে যেতে হবে ৷ প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেছেন কারণ খালেদা জিয়া আদালত থেকে মুক্তি পাননি, পেয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর নির্বাহী আদেশে। তাই নির্বাহী আদেশ তুলে নিলে আবারও তাকে জেলে যেতে হবে এটাই স্বাভাবিক।
তবে সমাবেশের এখনও এক মাস সময় বাকি রয়েছে এর মধ্যে পরিস্থিতি কোনো দিয়ে যায় তার ওপর সরকার ও আওয়ামী লীগের অবস্থান এবং পদক্ষেপগুলো নির্ভর করবে। ঢাকায় সমাবেশ করার আগে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বহিনীর অনুমতি নিতে হয়। অনুমতির আগে সার্বিক বিষযগুলো বিবেচনায় নিয়ে সিদ্ধান্ত হবে।
এদিকে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশের কর্মসূচিকে দলটির নেতারা সরকার পতনের আন্দোলনের কথা বলছেন ৷ সব বিভাগের শেষে আগামী ১০ ডিসেম্বর ঢাকায় বিভাগীয় সমাবেশ ডেকেছে।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র থেকে জানা যায়, ঢাকায় বড় ধরনের জমায়েতের মাধ্যমে সরকার ও আওয়ামী লীগকে চাপের মধ্যে ফেলতে চায় বিএনপি। এ বিষয়টি আওয়ামী লীগের কাছে স্পষ্ট।
রাজধানীতে বড় ধরনের জনসমাগম ঘটিয়ে আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতি ও বিশৃঙ্খলা তৈরির অপচেষ্টাও চালাতে পারে বলে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারকরা মনে করছেন। এসব বিষয়ের ওপর সতর্ক দৃষ্টিও রাখছে সরকার।
৫ নভেম্বর ঢাকা মহানগর উত্তর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিএনপির নেতাদের উদ্দেশ্যে কড়া হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, এখন ছাড় দিচ্ছি, শেখ হাসিনা এখন ছাড় দিচ্ছেন। কিন্তু ডিসেম্বরে ছেড়ে দেবো না। আপনারা নাকি আমাদের হটিয়ে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে খোমিনী (ইরানের আয়াতুল্লাহ খোমিনী) স্টাইলে বিপ্লব করবেন। সেই স্বপ্ন কর্পূরের মতো উড়ে যাবে। খেলা হবে, আগামী ডিসেম্বরে ফাইনাল খেলা।
এদিকে বিএনপির অন্য বিভাগের সমাবেশগুলোর মতো ঢাকার সমাবেশেও পরিবহন সংকট দেখা দিতে পারে ৷ বাইরে থেকে ঢাকায় যাতে লোক প্রবেশ করতে না পারে সেজন্য যোগাযোগ ব্যবস্থায় প্রতিবন্ধকতা তৈরি হতে পারে। এছাড়া আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো ওইদিন রাজপথে অবস্থান নেবে বলে দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে জানা যাচ্ছে।
আওয়ামী লীগের নেতারা জানান, ওইদিন দলের নেতাকর্মীরা রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় অবস্থান করবেন। যেকোনো পরিস্থিতি প্রতিহত করার জন্য সতর্ক অবস্থানে থাকবেন কর্মীরা৷ তাছাড়া ওইদিন আওয়ামী লীগের কর্মসূচিও দেওয়া হতে পারে। এসব বিষয়ে দলের উচ্চপর্যায় থেকে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। সবকিছু পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত ও আগে থেকেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠন যুবলীগ ইতোমধ্যেই ১০ ডিসেম্বর মাঠে থাকার কথা জানিয়েছে।
৩১ অক্টোবর এক সভায় যুবলীগের চেয়ারম্যান ফজলে শামস পরশ বিএনপির উদ্দেশ্যে বলেন, ১০ ডিসেম্বরের হুমকি দেন? ১০ ডিসেম্বরেও আমরা রাজপথে আপনাদের অপেক্ষায় থাকব। দেখি শেখ হাসিনাকে কে উৎখাত করে?
বাংলাদেশ সময়: ০৯২৫ ঘণ্টা, নভেম্বর ১২, ২০২২
এসকে/এএটি