ঢাকা: পদ্মা সেতু নিয়ে অপপ্রচার চালানোর কারণে বিএনপিকে জাতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমা চেয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠা প্রয়োজন ছিল বলে মন্তব্য করেছেন তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, ফরিদপুরের সমাবেশ শেষে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর লজ্জা শরম না থাকায় চুপিসারে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে এসেছেন।
সোমবার (১৪ নভেম্বর) সচিবালয়ে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে বিশ্ব জলবায়ু সম্মেলনে (কপ-২৭) অংশগ্রহণ শেষে দেশে ফিরে আয়োজিত এক মতবিনিময় সভায় তিনি সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এ মন্তব্য করেন।
ফরিদপুরের সমাবেশ শেষে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় ফেরার বিষয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবদের লজ্জা আসলে নেই। অবশ্য পদ্মা সেতু সবার জন্য বানানো হয়েছে। লজ্জা যদি থাকতো পদ্মা সেতুতে ওঠার আগে তাদের বলা উচিত ছিল- পদ্মা সেতু নিয়ে আমরা যে অপপ্রচার করেছি তার জন্য জাতির কাছে, জননেত্রী শেখ হাসিনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী। ক্ষমা চেয়ে পদ্মা সেতুতে ওঠা প্রয়োজন ছিল। লজ্জা শরম নেই সে জন্য চুপিসারে পদ্মা সেতুর ওপর দিয়ে এসেছে। তবে পদ্মা সেতু সবার জন্যই প্রধানমন্ত্রী, আওয়ামী লীগ সরকার নির্মাণ করেছেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে কত কথা। সোনার মূল্য দিয়ে পণ্যের মূল্য বিবেচনায় নিলে হার্ডিং ব্রিজ বানাতে যে খরচ হয়েছিল সে সময়, তার অনুপাতে পাঁচ ভাগের এক ভাগ হয়েছে পদ্মা সেতুতে।
বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন বর্তমান সরকার মেগা প্রকল্প থেকে বিধবা ভাতা পর্যন্ত সব লুটপাট করে খেয়ে নিচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী বলেন, উনারা পরপর পাঁচবার বাংলাদেশকে দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছেন। চারবার এককভাবে, আরেকবার যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন বানিয়েছেন। যারা চোর, বিশ্ব চোর তারা সবকিছুতেই চুরির গন্ধ খোঁজে। নিজেরা বিশ্ব চোর তো সেজন্য সবকিছুতে চুরির গন্ধ খোঁজে।
তিনি বলেন, যখন ক্ষমতায় ছিল, তখন হাওয়া ভবন বানিয়ে সব ব্যবসার মধ্যে চাঁদাবাজি করেছে। মির্জা ফখরুল একটি কথা বলেছেন এটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। মির্জা ফখরুল সাহেব কয়েকদিন আগে বলেছেন সরকারের পতন হলে তারেক জিয়ার নেতৃত্বে জাতীয় সরকার হবে। অর্থাৎ হাওয়া ভবনের বিশ্ব চোর আবার বাংলাদেশে আসবে এবং উনার নেতৃত্বে ওনারা জাতীয় সরকার গঠন করতে চায়। দেশের মানুষ এটা কখনো মেনে নেবে না।
সাংবাদিকদের আরেক প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, বিএনপি আজ প্রায় ১৪ বছর ধরে বলে আসছে সরকারের পতন ঘটাবে এবং পতন না ঘটলে তারা ঘরে ফিরে যাবে না। অবশ্য প্রত্যেকটা সমাবেশের পর তারা ঘরেই ফিরে যায়। তারা যতই দাবি করছে, এতে একটা লাভ হচ্ছে আমাদের, আমাদের কর্মীরা চাঙ্গা হচ্ছে। আওয়ামী লীগের কর্মীদের একটা গুণ হচ্ছে কেউ যদি খোঁচা দেয় তখন ঐক্যবদ্ধ হয়ে উজ্জীবিত হয়।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপির এই আন্দোলন আন্দোলন ভাবের কারণে আমাদের কর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছে। সেটিরই বহিঃপ্রকাশ আপনারা দেখেছেন, যুবলীগের যে সমাবেশ হয়েছে সেখানে লাখ লাখ যুবকের সমাবেশ হয়েছে। তাদের মতো এতো হাঁকডাক তারা দেয়নি। এটা যুবলীগের সমাবেশ, আওয়ামী লীগের নিজের সমাবেশ না। বিএনপির আন্দোলনের কারণে আমাদের কর্মীরা উজ্জীবিত হচ্ছে, চাঙ্গা হচ্ছে এবং অপশক্তির সঙ্গে মোকাবিলার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে।
বিএনপির সমাবেশের আগে লঞ্চ, বাস, ট্রাক মালিকরা ধর্মঘট ডাকে আর যুবলীগের সমাবেশে ধর্মঘট হয় না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে হাছান মাহমুদ বলেন, কারণ বিএনপি লঞ্চ, বাস, ট্রাক সবকিছু আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ছিল। যখন বিএনপির সমাবেশ করে তখন লঞ্চ, বাস, ট্রাকের মালিকরা আতঙ্কে ধর্মঘট করে। কারণ তারা অতীতে সমাবেশের নামে, আন্দোলনের নামে বাস ট্রাক পুড়িয়েছে। বাস ট্রাকের মানুষ পুড়িয়েছে, যাদের নিয়ে আমরা একটা অনুষ্ঠান করেছি। সেখানে মানুষের যা আহাজারি, কান্না, এই কান্নার জন্য দায়ী বিএনপি। তারা সবাই বিএনপির বিচার দাবি করেছে।
তিনি বলেন, বাস, ট্রাক মালিক-শ্রমিক সমিতিতে সব দল আছে। ওখানে শুধু আওয়ামী লীগের নেতা আছে তা নয়। ওখানে আওয়ামী লীগ আছে, বিএনপি আছে, জাতীয় পার্টি আছে, জাসদ থেকে শুরু করে অন্যান্য দলগুলো সেখানে আছে। তারাই তো ধর্মঘটের ডাক দিয়েছে।
জিয়ার কবর সারানো নিয়ে ‘মায়ের কান্না’ নামের একটি সংগঠনের করা দাবির বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমি মনে করি মায়ের কান্নার দাবি অত্যন্ত যৌক্তিক দাবি। যেভাবে জিয়াউর রহমান হাজার হাজার সেনাবাহিনীর অফিসার, জয়ানদের বিনা বিচারে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে হত্যা করেছেন, আজকে সারাদেশে তাদের পরিবারের সদস্যরা ঢুকরে কাঁদছে। তাদের কান্নার আওয়াজও করার সুযোগ করে দেওয়া হয়নি অতীতে। তাদের দাবি যৌক্তিক দাবি। এ দাবির প্রতি আমার সহমর্মিতা আছে।
বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৪ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৪, ২০২২
জিসিজি/আরআইএস