ঢাকা: সরকারের বিরুদ্ধে জনগণ আগ্নেয়গিরির মতো ফুঁসে উঠছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
বুধবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন চৌধুরী হলে বিএনপির গঠিত মওলানা ভাসানী মৃত্যুবার্ষিকী পালন জাতীয় কমিটির উদ্যোগে মজলুম জননেতা মওলানা আবদুল হামিদ খান ভাসানীর ৪৬তম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ মন্তব্য করেন।
তিনি বলেন, এরা (সরকার) কত কাপুরুষ, কাওয়ার্ড দেখেন। এই যে সমাবেশগুলো হচ্ছে প্রত্যেকটা সমাবেশ কত শান্তিপূর্ণভাবে অনুষ্ঠিত হচ্ছে। কোথাও কোনো ধরনের সমস্যা হচ্ছে না। এরমধ্যেও তারা আমাদের ৫শ এর অধিক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করে ফেলেছে, মিথ্যা মামলা দিচ্ছে। আবার গায়েবি মামলা দেওয়া শুরু হয়েছে। ১৫ বছর ধরে তো এই মামলা বহু দিয়েছে, ১৫ বছর ধরে বহু মানুষ খুন করেছে, ৬শ মানুষকে গুম করে দিয়েছে। এতে করে রোখা যাবে না। রোখা কী গেছে? যায়নি। এখন আবার অত্যন্ত তীব্র আগ্নেয়গিরির মতো সব ফুঁসে উঠছে মানুষ। এটাই ফুঁসে উঠবে। এই ফুঁসে উঠার মধ্য দিয়েই এই সরকারের পতন হবে। আমরা বিশ্বাস করি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, এটা আশার কথা আপনারা নিশ্চয় লক্ষ্য করেছেন, বিভাগীয় সমাবেশগুলোতে যোগ দিচ্ছে কারা? দেখবেন, লুঙ্গি পড়ে আসছে, হাতে একটা ব্যাগ নিয়ে আসছে এবং তিন দিনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছে চিড়া-মুড়ি-গুড় নিয়ে এসেন তারা। এসব সমাবেশগুলোকে সফল করছে তিন দিন খোলা আকাশের নিচে থেকে। এটা অভূতপূর্ব। আমরা যদি এটাকে ধারন করে সঠিক লক্ষ্যে নিয়ে যেতে পারি শুধুমাত্র যে আমাদের জন্য তা নয়, গোটা বাংলাদেশের মানুষের জন্য, গোটা বাংলাদেশের মানুষের মুক্তির জন্য, মানুষের অধিকারগুলোকে ফিরিয়ে আনার জন্য তাহলেই এটাকে আমরা সফল হব। কে কোথায় কী বললো না বললো, সেদিকে বেশি কান দেওয়ার দরকার নেই। কে কী বলছে, খেলা হবে বলছে না কী বলছে, বলতে দিন। আমরা আমাদের লক্ষ্যে অটুট থাকবো। এবার আমাদেরকে বিজয় অর্জন করতে হবে। এর কোনো বিকল্প নাই।
তিনি বলেন, আমরা কঠিন যুদ্ধ শুরু করেছি, আমরা কঠিন লড়াই শুরু করেছি। এই লড়াইয়ে আমাদেরকে জয়ী হতে হলে মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে প্রতি মুহূর্তে স্মরণ করতে হবে। কীভাবে উনি হেঁটে হেঁটে ফারাক্কা বাঁধে গেছেন, কীভাবে উনি মানুষকে সঙ্গে নিয়ে গ্রামের পর গ্রাম ঘুরেছেন, কীভাবে উনি মানুষের দুঃখের সময়ে মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়িয়েছেন। সেই মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে আমরা মনে করব, তাকে স্মরণ করব, তার পথে আমরা চলব। তাহলে আমরা মনে করি যে, আমরা সফল হতে সক্ষম হবো। আমাদের দলের প্রতিষ্ঠাতা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানও কিন্তু সেই পথ (ভাসানীর পথ) দেখিয়েছেন, দেশনেত্রী খালেদা জিয়া শুধু ৯ বছর স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম করেননি। উনি এখনো ৪ বছর ধরে ভয়াবহ ফ্যাসিবাদী আওয়ামী লীগ সরকারের নির্যাতনে কারাগারে বন্দী হয়ে আছেন। আমাদের নেতা তারেক রহমান নির্বাসিত হয়ে বিদেশে আছেন। ৩৫ লাখ মানুষের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা।
মওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানীকে বিরল রাজনীতিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে অভিহিত করে তার আদর্শ অনুসরণ করার আহ্বান জানান বিএনপি মহাসচিব।
তিনি বলেন, এখন তো রাজনীতি বদলে গেছে। আমার প্রায় মনে হয় যে, এখন নষ্ট সময় চলছে। এই নষ্ট সময়ে মওলানা ভাসানীকে স্মরণ করা, তাকে অনুসরণ করার লোক খুঁজে পাওয়া যাবে না। তিনি (ভাসানী) নিজের জন্য কোনো কিছু চাননি। ১৯৫৪ সালে তার দল নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করেছে মওলানা ভাসানী মন্ত্রিত্বও নেননি। এই হচ্ছে মওলানা ভাসানী। এখনকার যে রাজনীতি সেই রাজনীতিতে আমরা যেটুকু দেশের জন্য, মানুষের জন্য চেষ্টা করছি, দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষার জন্য চেষ্টা করছি। একটা জিনিস তার কাছ থেকে নেওয়া দরকার সেটা হচ্ছে যে, আমাদের যে লক্ষ্য যেন আমরা কখনো আপস না করি। সেই লক্ষ্যে এগিয়ে যাওয়ার জন্য আমরা যেন সর্বশক্তি দিতে পারি।
জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমানের সভাপতিত্বে ও সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্য্যালয়ে সাবেক শিক্ষক অধ্যাপক মাহবুব উল্লাহ, বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, শামসুজ্জামান দুদু, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা কাউন্সিলের সদস্য নজমূল হক নান্নু, আবদুস সালাম, কেন্দ্রীয় নেতা আবদুস সালাম আজাদ, মীর সরাফত আলী সপু, মুক্তিযোদ্ধা দলের সাদেক আহমেদ খান, মৎস্যজীবী দলের আব্দুর রহিম, মওলানা ভাসানীর স্বজন মাহমুদুল হক সানু প্রমুখ।
১৯৭৬ সালের ১৭ নভেম্বর মওলানা ভাসানী মারা যান। দিবসটি উপলক্ষে দুই দিনের কর্মসূচি নিয়েছে বিএনপি।
বৃহস্পতিবার (১৭ নভেম্বর) বিএনপির নেতারা টাঙ্গাইলে সন্তোষে প্রয়াত নেতার কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ করে তাকে শ্রদ্ধা জানাবেন।
বাংলাদেশ সময়: ১৫১৬ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০২২
এমএইচ/এএটি