ঢাকা, রবিবার, ৯ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

রাজনীতি

৭ থানায় ‘ককটেল বিস্ফোরণ’ দাবি পুলিশের

পাবনায় বিএনপির ৬ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে একাধিক মামলা

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১৩০ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
পাবনায় বিএনপির ৬ শতাধিক নেতাকর্মীর নামে একাধিক মামলা

পাবনা: পাবনার সাতটি উপজেলা ও থানা এলাকার বিভিন্ন স্থানে একরাতে ১৮টি ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে। সেই সঙ্গে ঘটনাস্থল থেকে অন্তত অবিষ্ফোরিত ২০টি ককটেল জব্দের দাবি করেছে পুলিশ।

আর এসব ঘটনায় জেলা ও উপজেলা বিএনপির প্রায় ৬শ নেতাকর্মীকে আসামি করে ৭টি মামলা করা হয়েছে।

মঙ্গলবার (২২ নভেম্বর) রাতে ও বুধবার (২৩ নভেম্বর) দুপুরে মামলাগুলো দায়ের করা হয়। কোনো মামলায় পুলিশ, আবার কোনো মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা বাদী হয়েছেন। তবে, এসব মামলায় এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।

এদিকে ককটেল বিস্ফোরণ, ককটেল উদ্ধার ও মামলাগুলোকে ‘সাজানো ও গায়েবি মামলা’ হিসেবে দাবি করেছে বিএনপি। তারা বলছে, আগামী ৩ ডিসেম্বর বিএনপির রাজশাহী বিভাগীয় সমাবেশ বানচালের ষড়যন্ত্রের অংশ হিসবে এসব মামলা করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।

ভাঙ্গুড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রাশেদুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাত সোয়া নয়টার দিকে স্থানীয় পৌর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা বিশ্বকাপ ফুটবল খেলা দেখার সময় হঠাৎ করে চারটি ককটেল বিস্ফোরণ হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে চারটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় উপজেলা আওয়ামী লীগ সদস্য আব্দুল জব্বার বাদী হয়ে মামলা করেছেন। মামলায় উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক রফিকুল ইসলাম, যুগ্ম আহ্বায়ক শহীদুল ইসলাম, পৌর বিএনপির সদস্য সাইদুল ইসলামসহ নয়জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাতনামা আরও ৬০/৭০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

ঈশ্বরদী থানার পরিদর্শক (তদন্ত) হাদিউল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার রাত সাড়ে আটটার দিকে আলহাজ্ব টেক্সাইল মিলস হাইস্কুলে নাশকতার উদ্দেশ্যে বিএনপির নেতাকর্মীরা বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গেলে বিএনপির নেতাকর্মীরা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। এ সময়  ছয়টি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় থানার এসআই শীতল কুমার বাদী হয়ে উপজেলা বিএনপির সদস্য সচিব আজমল হোসেন সুজনসহ নয়জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও দেড়শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

চাটমোহর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জালাল উদ্দিন জানান, পৌর সদরের আফ্রাতপাড়ায় উপজেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও ডায়মন্ড ফুড অ্যান্ড বেভারেজের মালিক হাসাদুল ইসলাম হীরার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে মঙ্গলবার রাতে বিএনপি নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠক করছিলেন। খবর পেয়ে পুলিশ সেখানে অভিযান চালায়। পুলিশের উপস্থিতি টের পেয়ে বিএনপি নেতাকর্মীরা দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পালিয়ে যায়। পরে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে অবিস্ফোরিত অবস্থায় চারটি ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় নাশকতার অভিযোগ এনে পুলিশ বিএনপি নেতা হাসাদুল ইসলাম হীরাসহ ৬ জনের নাম উল্লেখ এবং অজ্ঞাতনামা আরও শতাধিক বিএনপি নেতাকর্মীকে আসামি করে মামলা করা হয়েছে।

আটঘরিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আনোয়ার হোসেন বলেন, মঙ্গলবার রাত সোয়া ১১টার দিকে পৌর সদরের কড়ইতলা মোড়ে দলীয় অফিসে বসে খেলা দেখছিলেন আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। এ সময় হঠাৎ করে অফিসের পাশে একটি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় পৌর আওয়ামী লীগের যুগ্ম আহ্বায়ক জাহিদুল ইসলাম মুকুল বাদী হয়ে বুধবার দুপুরে একটি মামলা করেছেন। মামলায় বিএনপির দশ নেতার নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও অর্ধশত জনকে আসামি করা হয়েছে।

সুজানগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল হান্নান বলেন, নতুন কমিটি গঠন নিয়ে স্থানীয় বিএনপির দুই গ্রুপের মধ্যে বিরোধ ও শক্তি প্রদর্শণের মহড়া চলছে কয়েকদিন ধরে। পৌর সদরের ভবানীপুর মোড়ে মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে বিএনপির নেতাকর্মীরা গোপন বৈঠক করছিল। সেখানে ৩টি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটে। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় মামলা দায়েরের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

সাঁথিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রফিকুল ইসলাম জানান, উপজেলার ধোপাদহ ইউনিয়নের হাপানিয়া গ্রামে মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বৈঠক করার সময় ৩টি ককটেল বিস্ফোরিত হয়। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করে। এ ঘটনায় আওয়ামী লীগ নেতা মনছুর আলী বাদী হয়ে বিএনপির ছয়জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা আরও অর্ধশত জনকে আসামি করে মামলা করেছেন।

আতাইকুলা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান বলেন, মঙ্গলবার রাতে আতাইকুলায় একটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটেছে। এ সময় একটি অবিস্ফোরিত ককটেল জব্দ করেছে পুলিশ। মামলার প্রস্তুতি চলছে।

এর আগে গত ২১ নভেম্বর পাবনা শহরের খেয়াঘাট সড়ক এলাকায় দুটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে জনমনে আতঙ্ক ও নাশকতা সৃষ্টির অপচেষ্টার অভিযোগে জেলা বিএনপি, যুবদল ও ছাত্রদলের সাতজনের নাম উল্লেখসহ ১৫০ জনের নামে মামলা করে সদর থানা পুলিশ। এ ঘটনায় তিনটি ককটেল জব্দের দাবি করেছে তারা (পুলিশ)।

এ বিষয়ে পাবনা জেলা বিএনপির সদস্য সচিব অ্যাডভোকেট মাসুদ খন্দকার বলেন, এসব ঘটনা স্থানীয় আওয়ামী লীগ ও পুলিশের সাজানো নাটক। মিথ্যা মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের হয়রানির ষড়যন্ত্রের অংশ। আগামী ৩ ডিসেম্বর রাজশাহী বিভাগীয় গণসমাবেশে যাতে বিএনপির নেতাকর্মীরা অংশ নিতে না পারে, সে জন্যই এসব ঘটনা সাজানো হয়েছে, আর নাশকতার মামলা দেওয়া হচ্ছে। তারপরও মনে করি বিএনপির সমাবেশ সফল হবে। মিথ্যা গায়েবি মামলা দিয়ে বিএনপি নেতাকর্মীদের আর দমানো যাবে না।

নাশকতার বিষয়ে পাবনা জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি রেজাউল রহিম লাল বলেন, নিজেদের বাঁচাতে বিএনপি আবোল তাবোল কথা বলছে। তারা নিজেরাই ককটেল বিস্ফোরণ ঘটাচ্ছে। দেশের স্বাভাবিক পরিস্থিতিকে অস্বভাবিক করতে নাশকতার চেষ্টা করছে। বিএনপি ঘোলা পানিতে মাছ শিকারের চেষ্টা করছে। নিজেরা পরিকল্পিতভাবে বোমা ফাটাচ্ছে সরকার ও আমাদের ভয় দেখানোর জন্য। কোনো লাভ হবে না নাশকতার চেষ্টা করে। দেশের মানুষ জানে কারা এসব অন্যায় কাজ করতে পারে। দলের নির্দেশ আসলেই মাঠে নেমে সব ষড়যন্ত্র মোকাবিলা করা হবে।

এ বিষয়ে পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ ও প্রশাসন) মাসুদ আলম বলেন, ঘটনা যা ঘটছে, তার আলোকে পুলিশ ব্যবস্থা নিয়েছে, মামলা নিচ্ছে। এখন এটা নিয়ে কে কী বলছে তা দেখার বিষয় নয়। পুলিশ জনগণের জানমাল রক্ষা আর নিরাপত্তায় দায়িত্ব পালন করছে। সব ধরনের নাশকতা প্রতিরোধে পুলিশ তৎপর রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০১২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৪, ২০২২
এমএমজেড

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।