ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

পল্লী বিদ্যুতেরই দাম বেশি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৭ ঘণ্টা, এপ্রিল ৫, ২০১২
পল্লী বিদ্যুতেরই দাম বেশি

ঢাকা: পল্লী বিদ্যুতের দাম বেশি। অপেক্ষাকৃত ধনিক শ্রেণীর গ্রাহক বলে পরিচিত রাজধানীবাসীকেই কম দামে বিদ্যুৎ দিচ্ছে সরকার।

অন্যদিকে গ্রামের কম আয়ের মানুষদের বেশি দামে পল্লী বিদ্যুৎ কিনতে হচ্ছে এখনও।

বাংলাদেশ এনার্জি অ্যান্ড রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) দাবি করেছে, অতীতে এই দামে অনেক বেশি ব্যবধান ছিলো, এখন তারা ব্যবধান অনেকটা কমিয়ে এনেছেন।

ধনী গরিবের বৈষম্য কমাতে লাইফলাইন সাপোর্টের কথা বলা হলেও গরীব শ্রেণীর গ্রাহক বলে পরিচিত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) গ্রাহকদের বিদ্যুতের মূল্য গুণতে হচ্ছে অনেক বেশি। এমনকি বোরো চাষীরাও এর বাইরে যেতে পারেন নি। তাদেরও প্রতি ইউনিট বিদ্যুতে ১.৩১ টাকা বেশি গুণতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) প্রকাশিত এক গেজেটে দেখা গেছে, পল্লীবিদ্যুতের সেচ-গ্রাহকরা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের জন্য ৩.৫৭ টাকা পরিশোধ করছেন।

একই সময়ে শহরাঞ্চলের ধনিক শ্রেণীভূক্ত গ্রাহক বলে পরিচিত ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো), ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি), বিদ্যুতায়ন বোর্ড এবং নর্থ-ওয়েস্ট পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (নওজোপাডিকো) গ্রাহকরা প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করছেন ১.৩১ টাকা কমে ২.২৬ টাকা মাত্র।

একইভাবে পল্লী বিদ্যুতের ১০০ ইউনিট ব্যবহারকারী আবাসিক গ্রাহকরা যখন প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম পরিশোধ করছে ৩.৫৫ টাকা সেখানে অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকদের জন্য ৪৫ পয়সা কমে ৩.০৫ টাকা দরে বিদ্যুৎ দেওয়া হচ্ছে। একই ভাবে ৫০১ ইউনিট ব্যবহারকারী আরইবির গ্রাহকরা ৯.৩৮ টাকা অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকরা ৭.৮৯ টাকা দরে বিদ্যুতের মূল্য পরিশোধ করছে।

দাতব্য প্রতিষ্ঠানে আরইবি ৩.৯৩ টাকা আদায় করলেও অন্যান্য সংস্থা থেকে নিচ্ছে ৩.৯২ টাকা।

আরইবির সঙ্গে অন্যান্য সংস্থার গ্রাহকদের ক্ষেত্রে বিদ্যুতের ব্যবহারের ইউনিট তারতম্য ভেদে ৪টি ধাপে কিছুটা পাথর্ক্য আনা হয়েছে। আরইবি গ্রাহকদের ০ থেকে ১০০, ১০১ থকে ৩০০, ৩০১ থেকে ৫০০, এবং ৫০১ এর উর্ধ্বে ৪টি ধাপ করা হয়েছে। অন্যদিকে ওই ৪টি সংস্থার গ্রাহকদের ০ থেকে ১০০, ১০১ থেকে ৪০০, ৪০১ এর উর্ধ্বে ৩টি ধাপ করা হয়েছে।

‘সি’ শ্রেণীর গ্রাহক ক্ষুদ্রশিল্প/সাধারণ শিল্প, ‘ই’ শ্রেণীর গ্রাহক বাণিজ্যিক অফিস, ‘এফ’ শ্রেণী মধ্যম চাপ সাধারণ ব্যবহার/ বৃহৎ শিল্প, ‘এইচ’ শ্রেণীর গ্রাহক উচ্চ চাপে ( ৩৩ কেভি) এবং ‘জে’ শ্রেণীর গ্রাহক রাস্তার বাতি এবং পানির পাম্পে অভিন্ন রেটে বিদ্যুৎ বিল আদায় করছে সরকার।

পিডিবির একটি সূত্র জানিয়েছে, আরইবি সিসটেম লসের নামে দুর্নীতি কমাতে না পারায় গ্রাহকদের সেই মাসুল গুণতে হচ্ছে। বর্তমানে আরইবির সাড়ে ১৪ শতাংশ সিসটেম লস রয়েছে বলে জানা গেছে।

সিসটেম লস পুষিয়ে নিতে তারা চড়া দাম আদায় করছে গ্রাহকদের কাছ থেকে। তবে আরইবি এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন, আমরা দাম বেশি নিই এটা সত্য, তবে এর মূল কারণ সিসটেমলস নয়। আমাদের চাহিদার চেয়ে অনেক কম বিদ্যুৎ দেওয়া হয়। এতে আমাদের কম ব্যবসা হচ্ছে এটাই প্রধান কারণ।

কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক সামছুল আলম বাংলানিউজকে জানান, ``আমার এ বিষয়ে জানা নেই। তবে এই দেশে যা হওয়ার কথা নয়, সব সময় তাই হয়। ``

তার মতে, গ্রামের অনগ্রসর শ্রেণীর গ্রাহকদের কম দামে বিদ্যুৎ দেওয়ার কথা। কারণ বৈষম্য কমিয়ে আনতে এই পদ্ধতি নেওয়া হয়।

বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) সদস্য প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, এখন তবুও অনেকটা কমিয়ে আনা হয়েছে। আমরা দায়িত্ব নেওয়ার আগে অনেক ব্যবধান ছিলো।

প্রকৌশলী ইমদাদুল হক দাবি করে বলেন, ‘আমরা দায়িত্ব নেওয়ার আগে বাণিজ্যিক এবং শিল্পেও ব্যবধান ছিলো। এখন শুধু সেচ, আবাসিক ও দাতব্য প্রতিষ্ঠানে ব্যবধান রয়েছে। এই বৈষম্য কমাতেই আমরা কাজ করছি। আগে শিল্পে দাম বেশি ছিলো। তখন অসম প্রতিযোগিতা হতো তাই পরিবর্তন করা হয়েছে। ’

সম্প্রতি দাম বাড়ানোর সময়ে একই হারে বাড়নো হয়েছে, এ কথা মনে করিয়ে দিলে তিনি বলেন, ‘ভবিষ্যতে অবশ্যই দাম সমান করা হবে। ’

প্রকৌশলী ইমদাদুল হক বলেন, ‘আমি জানি না কেন এমন বৈষম্য করা হয়েছে। তবে আমার মনে হয়, আরইবির বিতরণ খরচ বেশি, তাই এমনটি হয়ে থাকতে পারে। শহরে এক কিলোমিটারে কয়েক হাজার গ্রাহক রয়েছে। অন্যদিকে আরইবিতে এক কিলোমিটারে মাত্র কয়েকজন গ্রাহকও থাকতে পারে। ’

উল্লেখ্য, বর্তমানে দেশে ১ কোটি ৩০ লাখ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এর মধ্যে চার-তৃতীয়াংশ গ্রাহক আরইবির। আরইবি বর্তমানে দেশের ৪৪৩ উপজেলার ৪৮ হাজার ৯৬৮টি গ্রামে বিদ্যুৎ সরবরাহ করছে। তাদের নির্মিত মোট লাইন রয়েছে ২ লাখ ২৮ হাজার ২৮৮ কিলোমিটার।

অন্যদিকে ২০১২ সালে সারাদেশের ৩ লাখ ১ হাজার ৬৩১ টি বিদ্যুৎ চালিত সেচ পাম্পের মধ্যে ২ লাখ ৬০ হাজার ৮৯টি আরইবির আওতাভুক্ত।

বাংলাদেশ সময়: ০৯৫০ ঘণ্টা, এপ্রিল ০৫, ২০১২

ইএস
সম্পাদনা : আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর;

জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর।

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।