ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

জ্বালানির দাম কমানো হলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
জ্বালানির দাম কমানো হলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে

ঢাকা: জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে আসছে। তাই দেশের জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম কমানো উচিত।

জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করছেন সংবাদপত্রের সম্পাদক এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রধানরা।  

মঙ্গলবার (২১ মার্চ) ভার্চ্যুয়ালি অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সংবাদপত্রের পত্রিকা এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সম্পাদকদের সঙ্গে প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় তারা এ কথা বলেন।  

সভায় অর্থ সচিব ফাতিমা ইয়াসমিন, জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান আবু হেনা মো. রহমাতুল মুনিম এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের নতুন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার ভার্চ্যুয়ালি প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় অংশ নেন।  

সভায় অর্থ বিভাগের যুগ্ম সচিব আবু দাইয়ান মোহম্মদ আহসানুউল্লাহ গত অর্থ বছরের প্রাক বাজেট আলোচনায় মিডিয়া প্রধানদের সুপারিশগুলোর বাস্তবায়ন তুলে ধরেন।  

প্রাক বাজেট আলোচনা সভায় সংবাদপত্রের সম্পাদক এবং ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার প্রধানরা বলেন, আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি পণ্যের দাম কমে গেছে। বিশেষ করে জ্বালানি তেলের দাম কমানো হলে অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।

সভায় তারা আরও বলেন, আগামী অর্থ বছরের বাজেট সাত লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এতো বড় বাজেটের রেভিনিউ আসবে কোথা থেকে এর একটা বাস্তব সম্মত ব্যাখ্যা থাকতে হবে। আগামী বাজেটে ভর্তুকি আর সুদের বরাদ্দ বাবদ টাকা রাখা হবে। তা যৌক্তিক হতে হবে। একই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকের অনিয়ম দুর্নীতিগুলো লাগাম টেনে ধরতে হবে। ব্যাংকের বড় ঋণ গ্রাহীতাদের কেন এতো ঢালাও ঋণ সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। এসব ঢালাও ঋণ সুবিধার কোনো যৌক্তিকতা নেই।
 
এ বিষয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল বলেন, আপনাদের পরামর্শ আমাদের খুব ভালোভাবে উপকৃত করবে। কিন্তু আলোচনায় সবাই আয় কমানো পরামর্শ দিলেন কিন্তু আয় বাড়ানোর কোনো পরামর্শ পেলাম না। আয় না বাড়াতে পারলে সরকার এবং কোম্পানিগুলো সিএসআর করবে কীভাবে?  

তিনি বলেন, কীভাবে সরকার সম্পদ অর্জন করবে। তার একটা রোডম্যাপ থাকতে হবে। এ সম্পদ আর আয় সরকার জনগণের কল্যাণে ব্যয় করতে পারবে। এখন করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে সরকার এখন খরচের কৃচ্ছ্র সাধন করে যাচ্ছে। এজন্য সরকারের খরচ কমাতে হচ্ছে। এ অবস্থা তো সবসময় থাকবে না।  

তিনি আরও বলেন, দেশের উন্নতি করতে হলে নিজের এলাকায় গিয়ে কাজ করতে হবে। এভাবে দেশ উন্নত পর্যাযে চলে যাবে। এ সম্পদ থেকেই।

ফিনান্সিয়াল এক্সপ্রেসের সম্পাদক শামসুল হক জাহিদ বলেন, জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম আন্তর্জাতিক বাজারে কমে আসছে। তাই দেশের জ্বালানি তেলের মূল্যটা বিবেচনার দাবি রাখে। তেলের দামটা একটু কমিয়ে দিলে অর্থনীতিতে বেশ প্রভাব পড়বে। যখন দুই বার জ্বালানি তেলের দাম বাড়ানো হয় তখন প্রতি ব্যারেল জ্বালানি তেলের দাম ছিল ১১০ ডলার, এখন তা কমে ৭২ থেকে ৭৩ এ ডলারে নেমে এসেছে।

তিনি বলেন, বড় বড় ঋণ গ্রাহীতাগুলো অনেক ধরনের ব্যাংকের বিশেষ ঋণ সুবিধা পাচ্ছে এসব সুবিধা আর কত দিন দেওয়া হবে। বড় খেলাপিদের ঋণ রিসিডিউলের সুবিধা দেওয়ার ফাঁক-ফোকর বন্ধ করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, পত্রিকায় দেখেছি আগামী বাজেট হবে সাত লাখ ৪৬ হাজার কোটি টাকা। এতো বড় বাজেটে রেভিনিউ আসবে কোথা থেকে এর একটা বাস্তব সম্বত ব্যাখ্যা থাকতে হবে। আগামী বাজেটে ভর্তুকি আর সুদের বরাদ্দ বাবদ যে টাকা রাখা হবে তা যৌক্তিক হতে হবে।

বাংলাদেশ প্রতিদিন সম্পাদক নঈম নিজাম বলেন, বিভিন্ন ব্যাংকের অনিয়ম ও দুর্নীতিগুলোর লাগাম টেনে ধরতে হবে। এ পর্যন্ত ব্যাংকে যেসব টাকা আটকে গেছে সেগুলো কীভাবে উদ্ধার করা যায় এবং মানি লন্ডারিং হয়ে যেসব টাকা চলে সে গেছে টাকা কীভাবে ফেরত আনা যায় সে বিষয়ে সৃজনশীল পদ্ধতিতে বের করতে হবে।

তিনি বলেন, দেশের সংবাদপত্রকে বাঁচাতে হলে অবশ্যই সরকারের সব ধরনের সুবিধা দিতে হবে, এটা সেবা খাত। গার্মেন্টের রপ্তানি থেকে আমাদের ট্যাক্স, আমদানি কর বেশি দিতে হচ্ছে। এটা কমাতে হবে। বিজ্ঞাপন বিলের ওপর ৪ শতাংশ ট্যাক্স কমাতে হবে। দেশীয় নিউজ প্রিন্টের ওপর ৫ শতাংশ ট্যাক্স কেন নিতে হবে। দেশীয় শিল্পকে বাঁচাতে হবে।

তিনি আরও বলেন, ব্যাংকের এ বিশাল অনিয়মগুলো নিয়ে জনগণ এক ধরনের আতঙ্ক আছে। কিন্তু ব্যাংক বা অন্য কর্তৃপক্ষ থেকে এ ব্যাপারে স্পষ্ট কোনো ধারণা বা চিত্র কখনো দেওয়া হচ্ছে না।

আমাদের নতুন অর্থনীতির সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, দেশীয় নিউজপ্রিন্টের প্রতি টনের দাম এখন ৯৫ হাজার টাকা থেকে এক লাখ টাকা। গত বছর এর দাম ছিল ৩৫ হাজার টাকা। দেশীয় নিউজপ্রিন্টের দাম এতো বাড়লো কেন? এটা সরকারকে অনুসন্ধান করতে হবে।  

তিনি বলেন, অনেকেই দেশের ব্যাংকের টাকা বিদেশে নিয়ে যাচ্ছে। এরা কি সরকারের ধরা ছোঁয়ার বাইরে থাকবে। বাজেটে এ নিয়ে ব্যাখ্যা থাকতে হবে। এছাড়া পিপলস লিজিং কোম্পানিকে বাঁচাতে সরকারকে আরও উদ্যোগী হতে হবে।

চ্যানেল আই বার্তা প্রধান শাইখ সিরাজ বলেন, করোনা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ এ দুই সংকটেই দেশের অর্থনীতি অনেকটা টিকে আছে কৃষির ওপরে। কৃষিতে বরাদ্দ অনেক বাড়াতে হবে। বিশেষ করে কৃষি গবেষণা, জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় স্মার্ট কৃষিপণ্য সহজলভ্য করা, কৃষি বৈচিত্র্যকরণ, পোল্ট্রি শিল্প ও খামার খাতে।  

তিনি বলেন, কৃষির উপখাত পোল্ট্রি ও খামার, ফিশারিজসহ প্রাণিসম্পদে খাদ্য ব্যয় দুই গুণের বেশি হয়ে গেছে, এতে আমদের প্রায় ৩০০ টাকায় ব্রয়ালার খেতে হচ্ছে। এ প্রাণি খাদ্যের দাম কমাতে ভর্তুকি দিতে হবে। তবে কৃষি খাতে ভর্তুকি কমানোর জন্য দাতাগোষ্ঠী বরাবর চাপ দিয়ে যাচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর রউফ তালুকদার বলেন, ব্যাংকগুলো এনজিও মাধ্যমে আর কৃষি ঋণ দিতে পারবে না। কোনো ব্যাংক কৃষি ঋণের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে না পারলে সেই ঋণের টাকা আমরা গবেষণা, কৃষি যন্ত্রপাতি ক্রয় করতে ব্যয় করবো। এ ব্যাপারে ১২টি ব্যাংকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ২০৪৯ ঘণ্টা, মার্চ ২১, ২০২৩
জিসিজি/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।