ঢাকা: দেশে এখনো পর্যাপ্ত গ্যাস আছে, সংকট কাটাতে সরকারের উৎপাদনে নজর দেওয়া জরুরি বলে মন্তব্য করেছেন জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম।
তিনি বলেন, দেশে জ্বালানি সংকটের যে বিকল্প, তাতে আমরা নজর দিই না।
বুধবার (২৯ নভেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তোফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে ‘জ্বালানি রূপান্তরে সুবিচার চাই’ শীর্ষক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন এই জ্বালানি বিশেষজ্ঞ।
বদরুল ইমাম বলেন, বিশ্বের অন্যান্য যেসব দেশে গ্যাসের সম্ভাবনা আমাদের মতো, তারা অনেক দূর এগিয়ে গেছে। কারণ, তারা আমাদের মতো মাটির নিচে সম্পদ রেখে আমদানিতে ঝুঁকে যায়নি। সাগরের তলদেশে জ্বালানির সম্ভাবনা থাকা সত্ত্বেও আমরা তার যথাযথ ব্যবহার করতে পারছি না। কিন্তু অতীত থেকে বর্তমান কোনো সরকারই বিষয়টিকে গুরুত্বসহকারে নেয়নি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে গ্যাসকূপ অনুসন্ধানের হার প্রতি বছরে ১টা। এটা খুবই নিম্নমানের। এটা কোনো জোরালো অনুসন্ধানের ধারেকাছেও নেই। প্রতি বছর যদি ৫-৬টা করে গ্যাসের অনুসন্ধান চালানো হয়, তাহলে আমার মতে পাঁচ বছরের মধ্যে দেশে গ্যাস সম্পদের অভাব থাকবে না।
জ্বালানি খাতের সুবিচার নিশ্চিতে প্রয়োজন বাণিজ্যিকীকরণ পরিহার এমন মন্তব্য করে ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা শামসুল আলম বলেন, জ্বালানি বণ্টনের ক্ষেত্রে সমতা বজায় রাখা হচ্ছে না। বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতকে বাণিজ্যিক খাতে পরিণত করা একটি ভয়াবহ ইঙ্গিত। ১৯৯০ সাল থেকেই সেই চেষ্টা করা হচ্ছে। জ্বালানি খাতে সুবিচার নিশ্চিত করতে হলে বাণিজ্যিক খাত থেকে তাকে সরিয়ে নিয়ে সেবাখাতে পরিণত করতে হবে।
শামসুল আলম আরও বলেন, ২০২৪ সালে জ্বালানি খাতের কী অবস্থা হবে, তা নিয়ে আমরা শঙ্কায় আছি। যদি আমরা ন্যূনতম ব্যয়ে এবং সমতার ভিত্তিতে জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিত করতে পারতাম, তাহলে আজ এ সংকট তৈরি হতো না। আমাদের যদি রপ্তানি চলমান থাকতো, তাহলে আরও গ্যাস-কয়লা উত্তোলন হতো। কিন্তু তখন তা চেয়ে দেখা ছাড়া উপায় ছিল না। তবে জ্বালানি থাকার সুবিধাটাও আমরা পেলাম না, আমদানির পরিবেশ তৈরি করে একটা উন্নয়নের কাহিনী তৈরি করলাম, যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।
সভায় মূল বক্তব্য দেন জ্বালানি বিষয়ক সাংবাদিক আরিফুজ্জামান তুহিন। অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন উন্নয়ন অর্থনীতি বিষয়ক গবেষক মাহা মির্জা, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ বদরুল ইমাম, অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ, ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট হুমায়ুন কবীর ভুইয়া প্রমুখ।
জ্বালানি রূপান্তর সুবিচার নিশ্চিতে ক্যাবের পক্ষ থেকে ১২ দফা দাবি উত্থাপন করা হয়। সেগুলো হলো—
১) সৌর তথা নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উন্নয়ন আইপিপি মডেলে বাণিজ্যিকভিত্তিতে নয়। না লাভ না ক্ষতির নীতিতে উন্নয়ন হতে হবে।
২) সরকারকে এ খাত থেকে রাজস্ব আহরণ পরিহার করতে হবে। প্রয়োজনে নিদৃষ্ট মেয়াদে ভর্তুকি দিতে হবে।
৩) কৃষি ও গ্রামীণ পরিবহনে মাছ চাষ ও সেচ, পশু-পক্ষী পালন ও হালকা পরিবহনে সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার নিশ্চিত হতে হবে।
৪) নিরপেক্ষ/স্বাধীন পক্ষকে দিয়ে পরিবেশগত প্রভাব নিরীক্ষণ (ইআইএ) করাতে হবে। এখানে বিইআরসি, ক্যাবসহ সংশ্লিষ্ট অংশিজনদের প্রতিনিধি থাকতে হবে।
৫) মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে নিরীক্ষা প্রতিবেদন প্রকাশ হতে হবে।
৬) প্রশাসনের বাইরে অংশীজন প্রতিনিধি সমন্বয়ে অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতির নেতৃত্বে গঠিত কমিটি/কমিশন দ্বারা জমি অধিগ্রহণ সংক্রান্ত বিরোধ/অসন্তোষ নিষ্পত্তি হতে হবে।
৭) জমি অধিগ্রহণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পরিবেশ সুরক্ষা আইন, ১৯৯৫ যথাযথভাবে প্রতিপালিত হতে হবে এবং অন্যথায় বাধ্যতামূলক আইনি ব্যবস্থা গৃহীত হতে হবে।
৮) শুধু আবাদ-অযোগ্য জমি ব্যতীত অন্য কোনো জমিতে সৌরবিদ্যুৎ প্রকল্প হবে না, তা বিধি দ্বারা নিশ্চিত হতে হবে।
৯) জ্বালানি রূপান্তরে ন্যায্যতা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে প্রতিযোগিতাহীন কোনো বিনিয়োগে বিদ্যুৎ বা জ্বালানি উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করা যাবে না। তাই দ্রুত বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ (বিশেষ বিধান) আইন ২০১০ অবিলম্বে বাতিল হতে হবে।
১০) স্রেডা আইন ২০১২ এর ৬(১৭) উপধারা অনুযায়ী সৌর তথা নবায়নযোগ্য বিদ্যুতের মূল্যহার বিইআরসি কর্তৃক নির্ধারিত হতে হবে।
১১) জ্বালানি রূপান্তরে সুবিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বিইআরসি আইনের সংশোধনী বাতিল করে গণশুনানির ভিত্তিতে সকল পর্যায়ের বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যহার নির্ধারণের একক এখতিয়ার বিইআরসিকে ফিরিয়ে দিতে হবে।
১২) ৫ শতাংশের চেয়ে কম পরিমাণ জমিতে বসবাসকারী ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের বাস্তুচ্যুত করা হলে সরকারের দায়িত্বে অন্যত্র সমপরিমাণ জমিতে তাদের পুনর্বাসন নিশ্চিত করতে হবে।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৫১ ঘণ্টা, নভেম্বর ২৯, ২০২৩
ইএসএস/এমজেএফ