ঢাকা, বুধবার, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ জুন ২০২৪, ১৮ জিলহজ ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বাপেক্সের কচ্ছপগতি

২০১৩ সালে পড়ে থাকবে ৫টি রিগ

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৫ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১২
২০১৩ সালে পড়ে থাকবে ৫টি রিগ

ঢাকা: ধীর গতিতে চলছে বাপেক্সের উন্নয়ন প্রকল্প। ২০১৩ সালে কাজের অভাবে পড়ে থাকবে বাপেক্সের ৫টি রিগ।

যদিও বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এক্সপ্লোরেশন অ্যান্ড প্রোডাক্টশন কোম্পানি লি. (বাপেক্স) অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে অনেক সফলতা দেখাতে সক্ষম হয়েছে।

সূত্র জানিয়েছে,  অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে  বাপেক্সের বর্তমান সফলতাকে সংশ্লিষ্টরা দেখছেন ভিন্ন আলোকে। তাদের মতে, অতীতে যেহেতু কোনো কাজই হয়নি, সে কারণে এখন অল্প সফলতাকেই মনে হচ্ছে বড় অর্জন।

তাদের অভিমত, এক্ষেত্রে  আরো নিবিড় উদ্যোগ ও কঠোর মনিটরিং অব্যাহত রাখা গেলে আরো অনেক বেশি সফলতা পাওয়া সম্ভব হতো।

ওয়ার্ক ওভার কূপ খনন করতে সময় লাগার কথা দেড় থেকে দুইমাস। সেখানে অনেক ক্ষেত্রে, বছর পার হয়ে যাচ্ছে--বাপেক্সের কাজে এতোটাই ধীরগতি। একইভাবে ড্রিলিং কূপ খনন করতে যেখানে ৫ মাস লাগার কথা সেখানে লেগে যাচ্ছে ১ বছরেরও বেশি সময়। এতে করে একদিকে যেমন গ্যাস পেতে দেরি হচ্ছে, একইসঙ্গে প্রকল্প-ব্যয়ও বেড়ে যাচ্ছে কয়েকগুণ।

পেট্রোবাংলার একটি সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছে, কৈলাশটিলায় ওয়াক ওভার কূপ খননের জন্য গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে সেমুতাং থেকে ওয়ার্ক ওভার রিগ (পি ৮০) নেওয়া হয়। সেখানে ৯ মাস রিগটি বসিয়ে রেখে কাজ শুরু করা হয় চলতি বছরের মে মাসে।

জুন মাসের মধ্যে কূপ খনন শেষ হওয়ার কথা ছিল। অথচ  কাজ এখনও শেষ হয়নি।

চলতি বছরের মে মাসে আইডিকো খনন রিগ কাপাসিয়া থেকে তিতাস ১৭ নম্বরে নেওয়া হয়। সেখানে এতোদিনে কাজ শেষ পর্যায়ে থাকার কথা থাকলেও এখন পর্যন্ত তা শুরুই হয়নি বলে জানা গেছে।

বিজয় -১০ খনন রিগ চট্টগ্রাম থেকে সুনেত্র গ্যাস ফিল্ডে নেওয়া হয় চলতি বছরের মে মাসে। ৩০ ইঞ্চি পিএস পার্ট করা হলেও এখন পর্যন্ত খনন কাজ শুরু করতে পারেনি বাপেক্স। অলস সময় পার করছে খনন রিগ বিজয়-১০।

বিজয়-১১ ( খনন ও ওয়ার্ক ওভার রিগ) চট্টগ্রাম থেকে সালদানদীতে নেওয়া হয় চলতি বছরের মার্চ মাসে। কিন্তু এখন পর্যন্ত কাজ শেষ হয়নি সংশ্লিষ্টদের মনিটরিংয়ের অভাবে।

একইভাবে খনন রিগ আইপিএস কার্ডঅয়েল সালদা থেকে শ্রীকাইলে নিতে অনেক দেরি করা হয়। যথাসময়ে খনন কাজ শুরু করতে পারলেও কপ্লিশন টেস্টিং ও পাইপ লাইনের অভাবে গ্যাস উত্তোলন করা সম্ভব হচ্ছে না।

শ্রীকাইল নিয়ে হাজারো অভিযোগ রয়েছে। একই স্তরে ৩ কিলোমিটার দূরে বাংগুরা থেকে বহুজাতিক কোম্পানি তাল্লো গ্যাস উত্তোলন করছে।   উত্তোলনে যত বিলম্ব হচ্ছে ততই গ্যাসের মজুদ যাচ্ছে কমে---এমনটাই দাবি সংশ্লিষ্টদের।

তেল-গ্যাস-খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ বাংলানিউজকে জানান, বহুজাতিক কোম্পানির স্বার্থেই শ্রীকাইল থেকে গ্যাস উত্তোলনে বিলম্ব করা হচ্ছে। এক সময় গ্যাস উত্তোলন শুরু হলেও আর গ্যাস পাওয়া যাবে না। আমাদের কাজ শুরুর আগেই তাল্লো সব গ্যাস নিয়ে যাবে।

তিনি দাবি করেন, একটি পুকুর থেকে যদি দুই পার্শ্বে পানি তোলা শুরু হয়। এক দিকে বন্ধ থাকলে সেদিকের পানিতো পড়ে থাকবে না। অন্যদিকের পাম্প দিয়ে উঠে যাবে। শ্রীকাইল গ্যাস ফিল্ডের বেলায়ও সেটাই ঘটছে।

এ বিষয়ে বাপেক্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মর্তুজা আহমেদ ফারুক অবশ্য কাজে বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করে বাংলানিউজকে জানিয়েছেন, শ্রীকাইলে গ্যাস উত্তোলন করা যাচ্ছে না পাইপলাইনের জন্য। সেখানে পাইপলাইন তৈরি করছে বাংলাদেশ গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি ( জিটিসিএল)। এতে বাপেক্সর কোনো গাফিলতি নেই।

আগামী নভেম্বর নাগাদ শ্রীকাইলের গ্যাস পাইপলাইনে সরবরাহ করা সম্ভব হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন বাপেক্সের এমডি।

তবে তার এই বক্তব্যের সঙ্গে ভিন্নমত পোষণ করেছেন অনেকেই। দেড় কিলোমিটার পাইপ লাইন তৈরি করতে হবে। এখন পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণই করা হয়নি বলে সূত্র জানিয়েছে।

এসব প্রকল্পে যথেষ্ট তদারকি এবং নজরদারি বাড়ানো গেলে অনেক আগেই উৎপাদনে যাওয়া যেত। আর সেটা যদি হতো তাতে বর্তমানে দেশে যে গ্যাস-সংকট চলছে, তা অনেকাংশেই দূর করা সম্ভব হতো---এ দাবি পেট্রোবাংলারই এক কর্মকর্তার।

এ বিষয়ে পেট্রোবাংলার অনেক গাফিলতি রয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা জানিয়েছেন, যে সব জটিলতার কারণে কাজ বিলম্বিত হয়েছে, তাতে জ্বালানি মন্ত্রণালয় ও পেট্রোবাংলার আমলাতান্ত্রিক জটিলতাও কম দায়ী নয়।

এদিকে রিগ ৫টি যে সব স্থানে রয়েছে এর পরে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে তার কোনো পরিকল্পনা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। শুধু রূপগঞ্জ ছাড়া আর কোথাও স্থান নির্ধারণ করা নেই।

রূপগঞ্জেও এখনও রিগপ্যাড তৈরি হয়নি। চাইলেও সেখানে রিগ নিয়ে যাওয়া যাবে না। রিগ প্যাড তৈরি করতেও কয়েক মাস সময় লাগবে বলে জানা গেছে। আর এ কারণে ২০১৩ সালে অলস বসে থাকার শংকা তৈরি হয়েছে বলে জানা গেছে।

এসব অভিযোগকে সরাসরি নাকচ করে দিয়েছেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান ড. হোসেন মনসুর।   বাংলানিউজকে তিনি বলেছেন, অতীতের যেকোনো সময়ের চেয়ে বাপেক্স বেশি কাজ করছে। যথা সময়েই সব কাজ হচ্ছে।

তার দাবি, কাজের গতির কারণেই দৈনিক প্রায় ৫০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস উৎপাদন বেড়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৩৫০ ঘণ্টা, আগস্ট ৩০, ২০১২
ইএস/সম্পাদনা: আহমেদ জুয়েল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর; জুয়েল মাজহার, কনসালট্যান্ট এডিটর [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।