ঢাকা, শনিবার, ১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ১৬ নভেম্বর ২০২৪, ১৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে মসিকের ‘নৌকা বাতি’, তদন্ত দাবি 

মো. আমান উল্লাহ আকন্দ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৯৩৫ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৪
সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে মসিকের ‘নৌকা বাতি’, তদন্ত দাবি 

ময়মনসিংহ: তৎকালীন ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগকে খুশি করতে ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) এলাকার প্রধান প্রধান সড়কে ‘নৌকা আকৃতির সড়ক বাতি’ স্থাপন করে কোটি কোটি টাকা লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।  

তবে গত ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার গণঅভ্যুত্থানে সরকার বদলের পর হঠাৎ সরিয়ে নেওয়া হচ্ছে এসব নৌকা বাতি।

এ ঘটনা তদন্ত করে সড়ক বাতি প্রকল্পের পিডি ও মসিক বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিল্লুর রহমানসহ জড়িতদের বিচার দাবি করেছেন নগরবাসী।  

নগর ঘুরে দেখা যায়, গত কয়েকদিন ধরে নগরের নতুন বাজারসহ বিভিন্ন সড়ক থেকে সিটি করপোরেশনের গাড়ি দিয়ে ক্রেন লাগিয়ে খুলে নেওয়া হচ্ছে নৌকা বাতি। এসময় জানতে চাইলে মসিকের বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মচারীরা বলেন, কর্তাদের নির্বাহী আদেশে নৌকা বাতি খুলে নেওয়া হচ্ছে। তবে কেন বাতি খুলে নেওয়া হচ্ছে, তা আমাদের জানা নেই।

একই ধরনের মন্তব্য করেছেন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইউসুফ আলী। তিনিও বিষয়টি জানেন না দাবি করেন এবং এ বিষয়ে কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।  

তবে মসিক সূত্রে জানা গেছে, সড়ক বাতি উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় এ নৌকা বাতি স্থাপন করা হয়েছে। আর এ প্রকল্পের পরিচালক (পিডি) মসিক বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিল্লুর রহমান। তিনি নিজেই ঠিকাদার হিসেবে এ নৌকা বাতি স্থাপন করেন। কিন্তু সরকারের এ প্রকল্পে কত টাকা বরাদ্দ ছিল, কোন ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করেছে এবং কত কিলোমিটারজুড়ে কতগুলো নৌকা বাতি লাগানো হয়েছে, তা প্রকাশ করতে রাজি হননি প্রকৌশলী মো. জিল্লুর রহমান।

তবে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, নগরের দিঘারকান্দা ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের সিটি করপোরেশনের সীমানা থেকে শম্ভুগঞ্জ, রহমতপুর, গাঙ্গিনাপাড়, নতুন বাজার, কাঁচিঝুলিসহ নগরের প্রধান প্রধান সড়কে স্থাপন করা হয়েছে এ নৌকা বাতি।  

সংশ্লিষ্ট সূত্রের অভিযোগ, ময়মনসিংহ সিটি করপোরেশন (মসিক) পৌরসভা থাকাকালে জিল্লুর রহমান ছিলেন উপসহকারী প্রকৌশলী। কিন্তু করপোরেশন ঘোষণার পর তিনি হয়ে গেছেন বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী এবং সড়ক বাতি উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি। গত কয়েক বছরে এসব পদে দায়িত্ব পালন করে অনিয়ম-দুর্নীতির মাধ্যমে তিনি হয়েছেন কোটি কোটি টাকার মালিক। বাড়ি-গাড়িসহ নগরের বিভিন্ন এলাকায় নামে-বেনামে গড়েছেন সম্পদের পাহাড়। এমনকি বিদ্যুৎ বিভাগের কোনো কর্মকর্তা বা কর্মচারী জিল্লুর রহমানের সঙ্গে কোনো বিষয়ে দ্বিমত পোষণ করলে বিভিন্ন কায়দায় তাকেও সরিয়ে রাখা হয় কাজের বাইরে। বর্তমানেও বিদ্যুৎ বিভাগের দক্ষ ও অভিজ্ঞ একাধিক কর্মকর্তাকে নামমাত্র চেয়ার-টেবিলে বসিয়ে রাখা হয়েছে। এসব নিয়ে প্রতিষ্ঠানের ভেতরে-বাইরে নানা গুঞ্জন রয়েছে।  

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, বিদ্যুৎ বিভাগে বিগত কয়েক বছরে শত শত কোটি টাকা লুটপাট হয়েছে। কাজের নিম্নমানসহ সিডিউল অনুযায়ী অনেক যন্ত্রাংশ ব্যবহার না করে অধিক মূল্যের বিল-ভাউচার তৈরি করে হাতিয়ে নেওয়া হয়েছে কোটি কোটি টাকা। এ প্রকল্পের নথিপত্র তদন্ত করলে এসব অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ মিলবে।

গত ৮ আগস্ট এ বিষয়ে জানতে চাইলে সড়ক বাতি উন্নয়ন প্রকল্পের পিডি ও মসিক বিদ্যুৎ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জিল্লুর রহমান বলেন, কতগুলো বাতি কত কিলোমিটারজুড়ে লাগানো হয়েছে, তা আপনারা সরেজমিন গিয়ে জেনে আসুন। বরাদ্দ আমার মনে নেই। তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেন, কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে পরে দেখা যাবে।  

এসময় নানা অনিয়ম-দুর্নীতি বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।  

এসব বিষয়ে জানতে গত ১১ আগস্ট দুপুরে মসিকের প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রফিকুল ইসলাম মিঞার কাছে গেলে তিনি এসব বিষয় জানেন না বলে জানান।  

তবে ১৩ আগস্ট তিনি এ প্রতিবেদককে বলেন, গত জুন মাসে এ প্রকল্পটি শেষ হয়ে গেছে। নৌকা বাতি মসিকের সৌজন্যে স্থাপন করা হয়েছে। এতে কোনো বাজেট বরাদ্দ নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ১৯৩৩ ঘণ্টা, আগস্ট ১৩, ২০২৪
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।