ঢাকা: ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিতে (ডেসকো) চলছে রমরমা নিয়োগ বাণিজ্য। এ নিয়োগ বাণিজ্যে জড়িত রয়েছেন উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
ডেসকোর সংশ্লিষ্ট সূত্র অভিযোগ করেছে, কর্মকর্তারা প্রভাব খাটিয়ে তাদের আত্মীয়-স্বজনদের নিয়োগ দিচ্ছেন। এছাড়াও বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই তারা চাকরিবিধি লঙ্ঘন করছেন।
ডেসকো’র চাকরিবিধির ৩ অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তাদের কোনো নিকট আত্মীয়কে নিয়োগ দেওয়া যাবে না। তারপরও অনেক কর্মকর্তাই প্রভাব খাটিয়ে তার ভাই, বোন, ভগ্নিপতি, ভাতিজাসহ নিকট আত্মীয়কে নিয়োগ দিচ্ছেন।
সূত্র জানায়, একই কর্মকর্তা একাধিক গাড়ি ব্যবহার করেন। এছাড়াও শুধু সম্মানী নেওয়ার জন্য মাসে ৭টি সভা করার অভিযোগ উঠেছে পরিচালনা বোর্ডের নামে।
ডেসকো সম্পর্কে মন্তব্য করতে গিয়ে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ইসরাফিল আলম এমপি বাংলানিউজকে জানান, ‘‘এ সংস্থাটি দুর্নীতিতে ভরা। দুর্নীতির যদি কোনো ক্লাসিফিকেশন করা হয়, তাহলে দুর্নীতিগ্রস্থদের তালিকায় এক নম্বরে থাকবে ডেসকো। ”
অনুসন্ধানে জানা গেছে, ডেসকো’র মিরপুর জোনের উপ-মহাব্যবস্থাপক জাকির হোসেনের আপন ভাইকে গুলশান বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের অফিস সহকারী পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, ‘‘থাকতে পারে। তবে খোঁজ নিয়ে জানতে হবে আমার ভাই আছে কিনা। ’’
তিনি জানান, এরকম অনেকেরই আত্মীয় আছেন ডেসকোতে।
ব্যবস্থাপক নজিবুল আলম খন্দকারের আপন ভগ্নিপতি দবির উদ্দিনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে উত্তরার সহকারী ব্যবস্থাপক হিসেবে। এ কর্মকর্তার শ্যালক ইকবাল হোসেনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে টঙ্গীর সহকারী ব্যবস্থাপক পদে।
এ বিষয়ে জানতে নজিবুল ইসলামের মোবাইল টেলিফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি ফোন ধরেননি।
জেনারেল ম্যানেজার (প্রকল্প) প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদের ভাতিজি জামাই জয়নাল আহমেদকে স্টোর কিপার, ভাতিজা হারুণকে এমএলএসএস পদে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। প্রকৌশলী নূর মোহাম্মদ বাংলানউজকে জানান, এ নামে তার কোনো ভাতিজা বা জামাই নেই।
ডেসকো’র উপ-মহাব্যবস্থাপক (সংগ্রহ) শরিফুল ইসলামের আপন ভাই আরিফুল ইসলামকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে পল্লবীর সহকারী ব্যবস্থাপক পদে। শরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মালামাল ক্রয়ে নানা রকম দুর্নীতির অভিযোগ পাওয়া গেলেও শরিফুল ইসলাম এ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন।
পরিচালক (সংগ্রহ) মোস্তফা কামালের আপন ভাই ও ভাতিজাকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে বলে ডেসকো সূত্র বাংলানিউজকে জানিয়েছেন। সূত্রটি বাংলানিউজকে জানান, এরকম হাজারো অনিয়ম রয়েছে নিয়োগ প্রক্রিয়ায়।
সহকারী ব্যবস্থাপক পদে নিয়োগ পেতে একজন আবেদন করলে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় উপ-ব্যবস্থাপক পদে। এরকম ‘তোঘলকি’ কারবারেরও প্রমাণ পেয়েছে সংসদীয় স্থায়ী কমিটি।
ডেসকো’র এক বোর্ড সদস্যের শ্যালক সাদেক মো. টিপুকে নিয়োগ দেওয়া হয় চাকরিবিধি ভঙ্গ করে। কোনো বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ ছাড়াই সাদেক মো. টিপুকে ডেপুটি ম্যানেজার পদে নিয়োগ দেওয়া হয় গত বছরের এপ্রিল মাসে। তার বেতন নির্ধারণ করা হয় ৫৬ হাজার টাকা।
ওই পদে নিয়োগের বয়সসীমা ৩৫ বছর থাকলেও তাকে নিয়োগ দেওয়া হয় ৪১ বছর বয়সে।
চাকরি নেওয়ার জন্য গ্রামীণ ফোনের ম্যানেজার (এইচআইডি) পদে চাকরির ভূয়া অভিজ্ঞতা সনদ জমা দেন তিনি।
সংসদীয় কমিটির তদন্তে অভিজ্ঞতার সনদটি ভূয়া বলে প্রমাণিত হয়েছে। সংসদীয় কমিটির এক সদস্য তার অভিজ্ঞতার সনদ জাল প্রমাণিত হওয়ার বিষয়টি বাংলানিউজকে নিশ্চিত করেছেন।
জানা গেছে, গত বছরের ৯ মে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতি তদন্তের জন্য ৬ নম্বর সাব কমিটি করা হয়। এতে আহ্বায়ক করা হয় ওমর ফারুক চৌধুরীকে। সদস্য করা হয় ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস ও ইসরাফিল আলম এমপিকে।
সংসদীয় কমিটির সদস্য ইসরাফিল আলম এমপি বাংলানিউজকে জানান, ‘‘ওমর ফারুক চৌধুরী প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় আহ্বায়কের পদ শূন্য হয়ে পড়েছে। ৬ জানুয়ারি স্থায়ী কমিটির সভায় নতুন আহ্বায়ক মনোনয়ন দেওয়া হতে পারে। তারপর পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে। ”
এদিকে ডেসকো’র পরিচালনা পর্ষদ সদস্যরা বেতনভুক্ত নন। তারা প্রতিটি সভার জন্য ৫ হাজার টাকা হারে সম্মানী পেয়ে থাকেন। মাসে একটি সভা ম্যান্ডেটরি থাকলেও একমাসে ৭টি সভা করারও নজীর রয়েছে। গত ডিসেম্বর মাসে পরিচালনা পর্ষদের সভা করা হয়েছে ৭টি। অনেকেই একে অহেতুক বলে দাবি করেছেন।
পর্ষদ সভায় কেউই অনুপস্থিত থাকেন না। অথচ ২ জানুয়ারি বার্ষিক সাধারণ সভায় ৩ পরিচালক বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব নুরুল আলম, পরিচালক (আইন মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব) সালমা বিন কাদের, পরিচালক প্রকৌশলী হারুন-উর রশীদকে অনুপস্থিত থাকতে দেখা যায়। এ নিয়ে অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। প্রশ্ন তুলেছেন নীতি- নৈতিকতা নিয়ে।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ডেসকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আরজাদ হোসেনের সেল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ব্যস্ত আছেন বলেই ফোন কেটে দেন।
বাংলাদেশ সময়: ১০৫৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৩, ২০১২
ইএস/এআর/ সম্পাদনা: মীর সানজিদা আলম, নিউজরুম এডিটর ও অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর [email protected]