ঢাকা, শনিবার, ১৫ আষাঢ় ১৪৩১, ২৯ জুন ২০২৪, ২১ জিলহজ ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ডেসকোতে বড় রদবদল

নন টেকনিক্যাল ও দুর্নীতিবাজরা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে!

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮০৬ ঘণ্টা, জানুয়ারি ৮, ২০১৩
নন টেকনিক্যাল ও দুর্নীতিবাজরা গুরুত্বপূর্ণ স্থানে!

ঢাকা: ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিতে (ডেসকো) বড় ধরনের রদবদল করা হয়েছে। এক আদেশে ১০ উপ-মহাব্যবস্থাপককে বদলি করা হয়েছে।

৯ জানুয়ারি বুধবারের মধ্যে তাদেরকে নতুন কর্মস্থলে যোগদান করতে বলা হয়েছে আদেশে।

এবারের বদলিতে নন টেকনিক্যাল ও দুর্নীতিবাজদের গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এ কারণে ডেসকো’র কর্মকর্তাদের মধ্যে ক্ষোভ  ছড়িয়ে পড়েছে। ‍

সোমবার এক আদেশে উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী একেএম মহিউদ্দিনকে বিক্রয় ও বিতরণ অপারেশন (গুলশান জোন) থেকে বদলি করে প্ল্যানিং অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগে, প্রকৌশলী জাকির হোসেনকে বিক্রয় ও বিতরণ অপারেশন(মিরপুর জোন)থেকে ম্যাটিরিয়াল প্ল্যানিং অ্যান্ড স্টোরস বিভাগে।

উপ-মহাব্যবস্থাপক প্রকৌশলী শামীম আহসান চৌধুরীকে প্রকল্প বিভাগ থেকে ম্যাটিরিয়াল বিভাগে, তৌফিক আবদুল্লাহকে ইন্টারনাল অডিট বিভাগ থেকে এইচআরএম বিভাগে, জুলফিকার তামহিদকে প্লানিং অ্যান্ড ডিজাইন বিভাগ থেকে এইচআরএম বিভাগে বদলি করা হয়েছে।

উপ-মহাব্যবস্থাপক এসএম জামিল হুসাইনকে এইচআরএম বিভাগ থেকে ইন্টারনাল অডিট বিভাগে, জ্যোতিষ চন্দ্র রায়কে অর্থ বিভাগ থেকে প্রকল্প বিভাগে, প্রকৌশলী আবদুস সালামকে আইসিটি বিভাগ থেকে অর্থ বিভাগে এবং প্রকৌশলী জগদীশ চন্দ্র মণ্ডলকে ম্যাটেরিয়াল প্ল্যানিং অ্যান্ড স্টোরস বিভাগ থেকে বিক্রয় ও বিতরণ, অপারেশনে(মিরপুর জোন) পদায়ন করা হয়েছে।

ডেসকোতে দুর্নীতিবাজ ও নন টেকনিক্যাল হিসেবে অভিযুক্ত প্রকৌশলী এনামুল হক। তাকে উত্তরা জোন থেকে বদলি করে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ গুলশান জোনের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।

ডেসকো সূত্র জানিয়েছে, এনামুল হক একজন কৃষি প্রকৌশলী। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে গুলশান জোনের। এতে একদিকে যেমন সেবার মান পড়ে যেতে পারে, অন্যদিকে সিনিয়র ও টেকনিক্যাল পার্সনরা কাজে আগ্রহ হারিয়ে ফেলবেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সূত্রটি অভিযোগ করেছে, এনামুল হক উত্তরা জোনের দায়িত্বে থাকার সময় শত শত অবৈধ সংযোগ দিয়েছেন। রাজউকের নকশা বর্হির্ভুত ভবন নির্মাণ হওয়ায় এসব এলাকার বেশ কিছু ভবনে বিদ্যু‍ ৎ সং‍যোগ প্রদানে নিষেধাজ্ঞা ছিল। কিন্তু ভূয়া ছাড়পত্র তৈরি করে এ রকম শত শত সংযোগ দিয়েছেন এনামুল হক। আর প্রতিটি সংযোগে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা পর‌্যন্ত অর্থ আদায় করার অভিযোগ উঠেছে।
 
উত্তরা ১১ নম্বর সেক্টরের ( রোড- ১৪, বাড়ি-৬৭) মকবুল হোসেন, ৯ নম্বর সেক্টরের ( রোড-৬, বাড়ি-২৬) হাবিবুর রহমানসহ অনেককে ভুয়া ছাড়পত্রের মাধ্যমে বিদ্যু‍ ৎ সংযোগ দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

মকবুল হোসেন ও হাবিবুর রহমানের ওই ভবন রাজউকের নকশাবর্হির্ভুত হওয়ায় ভবন দু’টিতে সব ধরনের সেবা প্রদানে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল রাজউক। একই আদেশে রাজউক ভবন দু’টির বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলারও নির্দেশ দেয়।

রাজউক হাবিবুর রহমানকে ২০১০ সালের মে মাসে দ্বিতীয় দফায় নোটিশ পাঠায় (স্মারক রাজউক/নঅঅ/এসি-৩০৪৩/০৬/২৪০)। নোটিশে নকশাবহির্ভুত অংশ কেন ভেঙে ফেলা হবে না, সে জন্য কারণ দর্শাতে বলা হয়েছিল।

নোটিশে আরও বলঅ হয়, নোটিশ জারির সাত দিনের মধ্যে অনুমোদিত নকশাবহির্ভুত অংশ ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দেওয়া হলো। ব্যত্যয় হলে রাজউক নিজেই বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলবে।

একইভাবে মকবুল হোসেনকেও তার নকশাবহির্ভুত অংশ ভেঙে ফেলার জন্য নির্দেশ দেয় রাজউক।

নোটিশে ভবন দুটিতে সব ধরনের সেবা ( পানি, বিদ্যু‍ ৎ ও গ্যাস সংযোগ) বন্ধ রাখার জন্য বলা হয়। নোটিশের অনুলিপিও দেওয়া হয় ডেসকোকে। কিন্তু তাদের ভবনের বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলার আগেই বিদ্যু‍ ৎ সংযোগ দেয় ডেসকো।

এ জন্য রাজউকের দু’টি পৃথক  ভুয়া অনাপত্তিপত্র তৈরি করা হয়। এতে মহাখালী নকশা অনুমোদন শাখার অথরাইজড অফিসার-২-কে প্রেরক দেখানো হয় (স্মারক এ-৩সি-৩৪৩/০৬/২৪০)।

এদিকে রাজউক সূত্রও জানায়, ২০১০ সালে বর্ণিত নামে এ ধরনের কোনো অনাপত্তিপত্র ইস্যু করা হয়নি।

রাজউকের মহাখালী নকশা অনুমোদন শাখায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, হাবিবুর রহমানের নামে ইস্যু করা অনাপত্তিপত্রটির স্মারক নম্বরের সিরিয়াল দেখানো হয়েছে ২৪০। অথচ ২০১০ সালে মহাখালী থেকে এতোসংখ্যক অনাপত্তিপত্রই দেওয়া হয়নি। সর্বশেষ ২২ ডিসেম্বর অনাপত্তিপত্র দেওয়া হয়েছে, যার নম্বর হচ্ছে ১১৭।

এনামুল হক উত্তরা জোনের দায়িত্বে থাকার সময় এ রকম ভূয়া ছাড়পত্রের মাধ্যমে ৫৯১০২-১১২, ৫৯৪৪৬-৫৫, ৫৭৬৯৪-৯৬, ৫৭৬৯৭-৭০, ৫৭৭৪২-৪৮, ৫৮৩৩৪-৪৪, ৫৮৪৪৬-৫৬, ৫৬৮৯০, ৫৭২২৯-৩৩, ৫৬৭২৪-৩২, ৬৩৮৪১-৫৯, ৬৩৬১৪-২৪, ৬৩৩৩৯-৪৯, ৬৩২৪৮-৫৬ নম্বরের ফাইলে অনুমোদন দেন। যা তদন্ত হলেই বেরিয়ে আসবে বলে মনে করেন ডেসকো’র কর্মকর্তারা।

সূত্রের অভিযোগ, এ বিষয়ে অভিযোগ হলেও রহস্যজনক কারণে তদন্তের বিষয়টি চেপে যান ব্যবস্থাপনা পরিচালক আরজাদ হোসেন। আর এবারের রদবদলে বড় ধরনের অর্থ লেনদেনের বিষয়েও অভিযোগ উঠেছে। যারা অর্থ দিতে পেরেছেন তারা ভালো পোস্টিং পেয়েছেন বলেও অনেকে মন্তব্য করেছেন। সে কারণে অনেকের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে।

ডেসকো’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) আরজাদ হোসেন বলেন, এই রদবদল রুটিন ওয়ার্ক। এর পেছনে কোনো কারণ নেই। প্রতিষ্ঠান যাকে যেখানে যোগ্য মনে করেছে, তাকে সেখানে পদায়ন করেছে।

দুর্নীতিবাজদের ভালো পদে পদায়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, অনেকের নামেই তো অভিযোগ শোনা যায়। কিন্তু খুঁজতে গেলে দেখা যাবে কিছুই না।

আর নন টেকনিক্যাল এনামুল হক প্রসঙ্গে বলেন, ডেসকোতে উপ-মহাব্যবস্থাপক পদে খুব বেশি টেকনিক্যাল হতে হয় না। এনামুল হকতো তবুও কৃষি প্রকৌশলী।

বাংলাদেশ সময়: ১৮০০ ঘণ্টা, জানুয়ারি ০৮, ২০১২
ইএস/এআর/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর[email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি এর সর্বশেষ