ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ধর্মঘট আতঙ্কে পেট্রোল পাম্পে তেল নেওয়ার হিড়িক

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ; ইমরান আলী, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫৫৮ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৩
ধর্মঘট আতঙ্কে পেট্রোল পাম্পে তেল নেওয়ার হিড়িক

ঢাকা: প্রায় ১ঘণ্টা লাইনে থেকে গাড়িতে তেল নেন ব্যবসায়ী মাসুদ রানা। গাড়ির ট্যাংকি ভর্তি করেই তেল নিয়েছেন।

রোববার থেকে শুরু হতে যাওয়া পেট্রোল পাম্প ধর্মঘটে যাতে দুর্ভোগে পড়তে না হয় সে জন্যই তার এই প্রস্তুতি।

মাসুদ রানা জানালেন, গাড়ি বন্ধ রাখলে তো ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে। তাই গাড়ি সচল রাখতে সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও ট্রাস্ট ফিলিং স্টেশনে লাইনে দাঁড়ান গাড়িতে অকটেন নিতে।

সিরিয়াল পড়ে যায় প্রায় জাহাঙ্গীর গেটের সামনে। প্রায় ঘণ্টা খানেক পরে সে তেল নিতে পারেন। ইচ্ছা ছিল তেল ভরে ১১ টার মধ্যে মতিঝিল এক ব্যবসায়ীর সঙ্গে সাক্ষাত করবেন। কিন্তু দীর্ঘ লাইন তার প্রত্যাশায় ছেদ ঘটায়।

তিনি ধর্মঘটের বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সাধারণ মানুষ অনেক ক্ষেত্রেই জিম্মি। ইচ্ছা হলেই ধর্মঘট ডাকা হবে এমনটি মেনে নেওয়া যায় না। সরকারের উচিত হবে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া।

মাসুদ রানার মতো আরও অনেকেই দীর্ঘ লাইনে দাঁড়িয়ে গাড়িতে তেল নেন। তারাও ধর্মঘট নিয়ে আতংকের কথা জানালেন। তারা জানান, গাড়ি ট্যাংকি ভরে নিলে কয়দিন চলবে জানি না। তবে মানুষ বিপদে পড়লে খড়কুটো ধরে বাঁচার চেষ্টা করে আমাদের প্রচেষ্টা ঠিক তেমনটাই।  

অনির্দিষ্টকালের ধর্মঘটের ঘোষণায় আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে গাড়ি ব্যবহারকারিরা। আগে ভাগেই গাড়িতে তেল ভর্তি করে রাখছেন তারা। কেউ কেউ কন্টেইনারে অকটেন নিতে চাইলেও দেওয়া হচ্ছে না নিয়ম নেই বলে।

এই ধর্মঘটে বিদ্যুৎ উৎপাদনের তেল পরিবহনে সমস্যা না হলেও বিপরর‌্যয় নেমে আসতে পারে বিমানের জেট ফুয়েল পরিবহনে।

বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, দীর্ঘ মেয়াদে হলে জেট ফুয়েল পরিবহনে সমস্যা হতে পারে। আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি আলোচনার মাধ্যমে ধর্মঘট প্রত্যাহারের জন্য।

শনিবার দুপুরে রাজধানীর বাড্ডা এলাকার মক্কা পেট্রোল পাম্প, তেজগাঁও এলাকায় ট্রাস্ট ফিলিং স্টেশন, রমনা পেট্রোল পাম্পসহ প্রায় সব পাম্পেই ছিল গাড়ির দীর্ঘ সারি। এছাড়া বিভিন্ন জেলা ও উপজেলা থেকেও তেল নেওয়ার হিড়িকের খবর পাওয়া গেছে।

ট্রাষ্ট ফিলিং স্টেশনে সবচেয়ে দীর্ঘ লাইন দেখা গেছে গাড়ির। এই পাম্পে তেল নিতে আসা গাড়ির লাইন কিলোমিটার ছাড়িয়ে যেতে দেখা গেছে। অনেকটা সিএনজির ফিলিংয়ের লাইনের মতো। দুপুর ১২টায় অকটেন নিতে আসা গাড়ির লাইন প্রধানমন্ত্রীর কারর‌্যলায় ছাড়িয়ে জাহাঙ্গীর গেট পর‌্যন্ত পৌঁছে।

ট্রাষ্ট ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার ওয়ারেন্ট অফিসার (অব.) ফজলুল হক অন্যান্য দিনের চেয়ে প্রায় তিনগুন বেশি তেল বিক্রি হয়েছে বলে বাংলানিউজকে জানান।

সেনাবাহিনী পরিচালিত এই পেট্রোল পাম্পটি ধর্মঘটের আওতায় থাকছে না বলেও জানান তিনি।

মৎস্য ভবন সংলগ্ন রমনা পেট্রোল পাম্পেও লাইনে দাঁড়িয়ে গাড়িতে তেল নিতে দেখা গেছে। এই পাম্পটিও অন্যান্য দিনের তুলনায় কয়েকগুণ বেশি তেল বিক্রি হয়েছে বলে জানান কর্মকর্তা ইকবাল আজিজ বিজু।

তিনি জানান, স্বাভাবিক ভাবে দিনে সর্বোচ্চ ৭ থেকে ৯ হাজার লিটার ডিজেল ও অকটেন বিক্রি হয়। কিন্তু শনিবার বেলা ১টার মধ্যেই তাদের বিক্রি প্রায় ২০ হাজার লিটার ছাড়িয়েছে।

তিনি জানান, রমনা পেট্রোল পাম্পে ডিজেল ও অকটেন বিক্রি করা হয়। তাদের ডিজেল ধারণ ক্ষমতা সাড়ে ৮ হাজার লিটার। আর অকটেন ১১ হাজার লিটার।

শুক্রবার শনিবার বন্ধ থাকায় তেল উত্তোলন করতে পারেন নি তারা। অন্যদিকে শুক্রবার রাত থেকেই তেল বিক্রির পরিমাণ অনেক বেড়েছে। যে হারে বিক্রি হচ্ছে তাতে শনিবার সন্ধ্যা নাগাদ তেল বিক্রি শেষ হয়ে যেতে পারে বলেও দাবি করেন ইকবাল আজিজ বিজু।

অন্যদিকে ডিজেল চালিত জেনারেটর ব্যবহারকারিদের তেল মজুদ করে রাখতে দেখা গেছে।

এখানকার শ্রমিক সালাম বাংলানিউজকে বলেন, “ধর্মঘটের কারণে গাড়ির মালিকরা অতিরিক্ত তেল নিচ্ছেন। কেননা এ ধর্মঘট ক’দিন থাকে এটি তো কেউ বলতে পারে না। এ কারণে গাড়ির মালিকরা অতিরিক্ত তেল নিয়ে যাচ্ছেন। ”

দুপুর ১২টার দিকে মালিবাগ চৌধুরী পাড়ার  একটি সিএনজি স্টেশনের শ্রমিক আব্দুল্লাহ বাংলানিউজকে বলেন, “রোববার থেকে ধর্মঘটের কারণে এ লম্বা লাইন। সকাল থেকেই এ লাইন চলছে। ”

পেট্রোল পাম্প মালিক শ্রমিক ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক নাজমুল হাসান বাংলানউজকে বলেন, জনগণের কষ্টের কথা চিন্তা করে আমরা দফায় দফায় আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম। কিন্তু সরকার কোন পদক্ষেপ নেয়নি। সরকার আমাদের সঙ্গে আলোচনা করারও প্রয়োজন মনে করেনি। আমরা পিঠ দেয়ালে ঠেকে গেছে।

রোববার ভোর ৬টা থেকে ধর্মঘট শুরু হচ্ছে বলেও জানান তিনি।

বিপিসি চেয়ারম্যান জানান, ১৭ জানুয়ারি বিপিসির পরিচালক মার্কেটিং পেট্রোল পাম্প মালিকদের সঙ্গে বসেছিল। আগামী ২১ জানুয়ারি মন্ত্রণালয়ে একটি বৈঠক করবে। ততদিন পর‌্যন্ত তারা ধর্মঘটে না গেলেই পারত।

দীর্ঘ মেয়াদে ধর্মঘট হলে বিপিসির পক্ষে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কঠিন হয়ে পড়তে পারে বলেও স্বীকার করেন তিনি।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) জনসংযোগ পরিদপ্তরের পরিচালক সাইফুল হাসান চৌধুরী বাংলানিউজকে জানান, ধর্মঘট বিদ্যুৎ উৎপাদনে তেল পরিবহনে কোন রকম প্রভাব ফেলবে না। বিদ্যুৎ কেন্দ্রে তেল সরবরাহ করে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন(বিপিসি)।

পেট্রোল পাম্প ও ট্যাঙ্ক-লরি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ দাবিগুলোর মধ্যে রয়েছে, সরকার গঠিত কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জ্বালানি তেল বিক্রিতে ডিজেলে ৩ দশমিক ৪ ভাগ, পেট্রোল ও অকটেনে ৪ ভাগ কমিশন নির্ধারণ ও বাস্তবায়ন। ট্যাঙ্ক-লরির ভাড়া বৃদ্ধি, এর চালকদের প্রয়োজনীয় পরীক্ষা ও কাগজপত্র নিয়ে বিশেষ বিবেচনায় ড্রাইভিং লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন; ট্যাঙ্ক-লরি চালকদের প্রয়োজনীয় প্রিমিয়াম পরিশোধ সাপেক্ষে পাঁচ লাখ টাকার দুর্ঘটনা বীমা চালু, পেট্রোল পাম্প স্থাপনে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন (বিপিসি) কর্তৃক একতরফাভাবে প্রণীত নীতিমালা সংশোধন করে গেজেট প্রকাশ, চট্টগ্রাম, ফতুল্লা, দৌলতপুর-খুলনা, চাঁদপুর ও সিলেটসহ যেসব স্থানে টার্মিনাল নেই সেখানে নতুন টার্মিনাল নির্মাণ ও গোদনাইলে পদ্মা ও মেঘনা টার্মিনাল সংস্কার, তেলের ভেজাল রোধ করা ও অবৈধ তেল বিক্রি বন্ধ, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্ডস অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশনের (বিএসটিআই) টলারেন্স মাত্রা যৌক্তিক পর্যায়ে নির্ধারণ ও শ্রমিক নেতা মীর মোকসেদ ও আমির হোসেনের বিরুদ্ধে মামলা প্রত্যাহার করা।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৫ ঘণ্টা, জানুয়ারি ১৯, ২০১৩
ইএস./সম্পাদনা: নূরনবী সিদ্দিক সুইন, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।