ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

জামায়াত-শিবিরের ধ্বংসযজ্ঞ

হারিয়ে গেল কৃষকের স্বপ্ন

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ ও একেএস রোকন | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১০৬ ঘণ্টা, মার্চ ১৩, ২০১৩
হারিয়ে গেল কৃষকের স্বপ্ন

ঢাকা: শিবগঞ্জের ৮শ‘ হেক্টর জমিতে ১০ দিন ধরে সেচ বন্ধ। কৃষকের স্বপ্ন গাঁথা বোরো ক্ষেত হলদে বর্ণ ধারণ করেছে ।

৪৫ হাজার গ্রাহক অন্ধকারে নিপতিত । বিদ্যুৎ বাতির বদলে তাদের ঘরে জ্বলছে মোম ও কুপি বাতি।
 
অবশ্য কিছু বোরো চাষী বিকল্প উপায়ে সেচ দিচ্ছেন। তারা দাবি করেছেন বিদ্যুৎ দিয়ে সেচ দিতে মাসে খরচ হতো ৯০ টাকা। ডিজেল দিয়ে সেচ দিতে একদিনেই খরচ হচ্ছে ৮০ টাকা। এতে ধান রক্ষা হলেও মূলধন রক্ষা হবে না বলে জানিয়েছেন শিবগঞ্জবাসী।
 
দু’একদিনের মধ্যে সেচ নিশ্চিত করা না গেলে ধান ক্ষেত পুড়ে যাওয়ার আশংকা করছেন বোরো চাষীরা। তারা অবিলম্বে বিদ্যুৎ সরবরাহের দাবি জানিয়েছেন।
 
শিবগঞ্জ উপজেলার মনাকষা ইউনিয়নের ঠুঠাপাড়া গ্রামের কৃষক হুমায়ূন জানান, তিনি এ বছর ১৫ বিঘা জমিতে ধান চাষ করেছেন। জামাত-শিবির বিদ্যুৎ কেন্দ্র পুড়ে দেওয়ার পর থেকে তার জমিতে সেচ দিতে পারেন নি।
 
তার এলাকার অনেকে ডিজেল দিয়ে সেচ দিতে সমর্থ হলেও তিনি এ ব্যবস্থা করতে পারেন নি। যে কারণে বোরো ক্ষেত নিয়ে চরম শঙ্কায় রয়েছেন। আর প্রধান ফসল ধান ঘরে তুলতে না পারলে কি হবে তা ভাবতেও ভয় পাচ্ছেন।
 
কবে বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে সে বিষয়ে নিশ্চিত করে বলতে পারছেন না কেউই বলে জানিয়েছেন তিনি।
 
দুর্লভপুর ইউনিয়নের তোজাম্মেল বাংলানিউজকে জানান, বিদ্যুৎ না থাকায় ৩ বিঘা জমিতে সেচ দিতে সংকটে পড়েছেন। বাধ্য হয়ে ডিজেল চালিত অগভীর নলকূপ দিয়ে জমিতে সেচ দিচ্ছেন।
 
তোজাম্মেল হোসেন দাবি করেন, “বিদ্যুৎ থাকলে তার জমিতে সেচ দিতে মাসে ৯০ টাকা লাগত। এখন একবার সেচ দিতেই খরচ হচ্ছে ৮০ টাকা। ”
 
২৮ ফেব্রুয়ারি জামাত-শিবিরের তান্ডবের পর থেকে মোকামপুর ও শাহবাজপুর ইউনিয়নে বোরো ক্ষেতে সেচ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া ধায়নগর ও দায়পুকুরিয়া ইউনিয়নের অংশিক এলাকাতেও সেচ বন্ধ রয়েছে।  
 
 
বরেন্দ্র বহুমুখি উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের সহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান বাংলানিউজকে জানান, “যে বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ওই বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির আওতায় ১ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে বোরো সেচ রয়েছে। ”
 
বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ হয়ে যাওয়ার পর ৪শ’ হেক্টর জমিতে বিকল্প উপায়ে সেচ দেওয়া হচ্ছে। তবে এখন ৮শ’ হেক্টর জমিতে সেচ দেওযা সম্ভব হয় নি। ১০ দিন ধরে সেচ দিতে না পারায় ফলন ক্ষতিগ্রস্ত হবে। খুব দ্রুত সেচ দিতে না পারলে বড় ক্ষতি হয়ে যাবে বলেও মনে করেন তিনি।
 
কবে নাগাদ বিদ্যুৎ সরবরাহ স্বাভাবিক হবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি জানান, এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, এই প্রশ্নের উত্তর আমরাও খুঁজে পাচ্ছি না।  
 
শিবগঞ্জ থানার ‍ভার প্রাপ্ত পুলিশ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, জামাত-শিবির কোন রকম উস্কানী ছাড়াই ৭ ঘণ্টা ধরে ধ্বংসযজ্ঞ চালায় চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তরে। তাদের এই ধ্বংসলীলায় পুড়ে ছাই হয়ে যায় সব কিছু।
 
পেট্রোল ও গান পাউডার দিয়ে আগুন দেওয়ার কারণে সমিতির সদর দপ্তরের সব যন্ত্রপাতি পুড়ে যায়। মাত্রাতিরিক্ত তাপের কারণে গুদামে রক্ষিত এলুমিনিয়ামের তার, ট্রান্সফরমার গলে মাটির সঙ্গে মিশেছে বলে দাবি করেছেন পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড (আরইবি)চেয়ারম্যান মঈন আহমেদ।
 
তিনি জানিয়েছেন, এমনকি আবাসিক ভবনেও তারা লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে। আগুন দেওয়ার পর রাস্তা অবরোধ করে রাখে। যাতে কেউ গিয়ে আগুন নিভাতে না পারে। এ কারণে ৩০ ঘণ্টা ধরে আগুন পুড়েছে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদর দপ্তর।
   
বিদ্যুৎ অফিসে আগুন দেওয়ায় শিবগঞ্জ উপজেলার ৭টি ইউনিয়ন সম্পূর্ণভাবে ও ৪টি ইউনিয়নের আংশিক এলাকায় এখন ভুতুড়ে অবস্থা বিরাজ করছে। মোম ও কুপি বাতি তাদের একমাত্র ভরসা। আতংকিত গ্রামবাসী  সন্ধ্যার আগেই ঘরে ফিরে যাচ্ছেন।
 
প্রসঙ্গত, চাঁপাইনবাবগঞ্জ পল্লীবিদ্যুৎ সমিতির অধীনে বিদ্যুৎচালিত ১শ’ ৫০টি গভীর নলকূপের অধীনে ১ হাজার ২শ’ হেক্টর জমিতে ১ হাজার ৪শ’ ৯৯টি অগভীর নলকূপের মাধ্যমে ৩ হাজার ৮ হেক্টর জমিতে বোরো চাষ হয়েছে।
 
উল্লেখ্য, শিবগঞ্জে অবস্থিত চাপাইনবাবগঞ্জ পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির সদরদপ্তরে ২৮ ফেব্রুয়ারি ধ্বংসযজ্ঞ চালায় জামাত-শিবির। এতে প্রায় ২০০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। ট্রান্সফরমার রিপেয়ারিং ওয়ার্ক সপটিও পুড়ে দিয়েছে তারা।
 
এ ঘটনায় তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এরমধ্যে আরইবি গঠন করেছে ২টি ও মন্ত্রণালয়ের ১টি। মামলা দায়ের হয়েছে ৩টি। এতে বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বদলী করা হয়েছে আরইবি মহাব্যবস্থাপককে। ওসি ও ইউএনওকে প্রত্যাহার করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৮৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১১, ২০১৩
ইএস/ সম্পাদনা: সুকুমার সরকার, কো-অর্ডিনেশন এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।