ঢাকা, সোমবার, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ০১ জুলাই ২০২৪, ২৩ জিলহজ ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ রিপোর্ট প্রহসনমূলক’

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০১২৪ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৩
‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ রিপোর্ট প্রহসনমূলক’

ঢাকা: রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পরিবেশ প্রভাব নিরূপণকে (ইআইএ) মনগড়া ও প্রহসনমূলক উল্লেখ করে রিপোর্ট প্রত্যাক্ষান করেছেন পরিবেশবিদ ও তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির নেতারা।
 
শুক্রবার বিকেলে বিদ্যুৎ ভবনে ‘রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ইআইএ বিষয়ে জনমত পর‌্যালোচনা’ শীর্ষক সেমিনারে তারা এ মন্তব্য করেন।


 
বিশ্ব সাহিত্য কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আবু সাইয়ীদ সেমিনারে বলেন, যে কোনো কিছু করতে গেলে তার খারাপ দিক থাকে। কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে প্রথম থেকেই বিতর্ক উঠেছে। সবকিছু পলিটিক্যালি বা টেকনিক্যালি না দেখে জনগণের কথাও ভাবা উচিত।
 
জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ড. শামছুল আলম বলেন, ইআইএ রিপোর্টের ভিত্তিতে সেখানে কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র করা যাবে কিনা, সে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা। কিন্তু রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রে নির্মাণের চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এরই মধ্যে যৌথ কোম্পানি গঠন করা হয়েছে। জমি অধিগ্রহণ করা হয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছে। এতো সবের পরে ইআইএ কে প্রহসন ছাড়া আর কি বলা যায়?
 
সুন্দরবন রক্ষার প্রশ্নে কোনো ছাড় দিয়ে রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হতে পারে না বলেও দাবি করেন তিনি।
 
তেল-গ্যাস খনিজ সম্পদ ও বিদ্যুৎ-বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, এই বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ হলে সুন্দরবনের কি পরিমাণ ক্ষতি হবে তার, কোনো সঠিক বিশ্লেষণ নেই রিপোর্টে।
 
শব্দ ও পরিবেশ দূষণ সম্পর্কে ভুল তথ্য তুলে ধরা হয়েছে। এ রিপোর্ট গ্রহণ করা যায় না বলেও দাবি করেন তিনি।
 
পরিবেশবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, ইআইএ’র আগে পুলিশ লেলিয়ে দিয়ে জমি দখল করা হয়েছে। একে ইআইএ না বলে ইএমপি (পরিবেশ ব্যবস্থাপনা প্লান) বলাই উচিত। শীতের সময় উল্টোদিকে বাতাস বয়ে যায়। তখন সুন্দরবন থেকে মাত্র ১০ কিলোমিটার দূরের এই বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ছাই ও ধোয়া সুন্দরবনের ক্ষতি করবে।
 
বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির বিরুদ্ধে রিটকারী আইনজীবী অ্যাড. তাহসিন বলেন, রিট থাকা অবস্থায় একের পর এক চুক্তি করে সরকার আইন ভঙ্গ করেছে।
 
পরিবেশবিদ ড. আবদুল মতিন বলেন, ‘‘খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশবিদরা একটি সমীক্ষা করে দেখিয়েছেন, সুন্দরবনের কি পরিমাণ ক্ষতি হবে। তারা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন করেন। কিন্তু এসব রিপোর্টকে আমলে নেওয়া হয় নি। সরকার যদি দরোজা-জানালা বন্ধ করে থাকে, তাহলে আমাদের করার কিছু নেই। ’’
প্রকৌশলী কল্লোল মোস্তফা বলেন, সুন্দরবন এলাকার বাতাসে ক্ষতিকারক সালফার ও নাইট্রোজেনের মাত্রা বর্তমানে প্রতি কিউবিক মিটারে ৩০ মাইক্রোগ্রাম রয়েছে। বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলে ঘনত্ব ৫৩.৪ মাইক্রোগ্রামে গিয়ে ঠেকবে। এতে বিপন্ন হয়ে পড়বে সুন্দরবনের অস্তিত্ব।
 
বিদ্যুৎ সচিব মনোয়ার ইসলাম বলেন, ‘‘আমাদের কথাও আপনাদেক বিবেচনা করতে হবে। বিদ্যুৎ দিতে না পারায় একটা গ্রুপ প্রতিনিয়ত আমাদেক ধোলাই করছে। আপনারা তো আছেনই। ’’
 
পরিবেশ অধিদফতরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক শাহজাহানকে মতামত দেওয়ার আহ্বান করা হলে তিনি বলেন, ‘‘আমরা এখনও ছাড়পত্র দেইনি। কিছু গাইডলাইন দিয়েছে। আজকের সভাও সেই গাইড লাইন অনুসারে হচ্ছে। সে কারণে এই মুহূর্তে কোনো মন্তব্য করতে চাই না। ’’
 
এফবিসিসিআই’র সাবেক সভাপতি একে আজাদ বলেন, কয়লা ভিত্তিক বড় বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে বিশ্বব্যাংক অর্থায়নে রাজি ছিল পিপিপি’র আওতায় হলে। আমরা ব্যবসায়ীরাও আগ্রহী ছিলাম। আমরা হঠাৎ শুনতে পেলাম, ভারতের সঙ্গে সমঝোতা স্বারক স্বাক্ষর করা হয়েছে। ’’
 
বিকেলে শুরু হওয়া এই সেমিনার চলে গভীর রাত পর‌্যন্ত। এতে পরিবেশবিদ, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও ভুক্তভোগীদের ডাকা হয়।

সেমিনারে প্রধান অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা ড. তৌফিক-ই-ইলাহী চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ এনামুল হক এমপি, স্থানীয় এমপি হাবিবুন্নাহার তালুকদার, ননী গোপাল বিশ্বাস এমপি, রামপাল উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোল্লা আব্দুর রউফ।
 
ইআইএ রিপোর্টটি তৈরি করেছে সেন্টার ফর এনভাইরনমেন্ট এন্ড জিওগ্রাফিক ইনফরমেশন সায়েন্স। শুরুতে রিপোর্ট উপস্থাপন করেন ড. ওয়াজি উল্লাহ। পরে বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন পেট্রোবাংলার সাবেক পরিচালক মকবুল ই-এলাহী চৌধুরী।
 
সকলেই পরিবেশের প্রশ্নে একটি উচ্চ পর‌্যায়ের যৌথ বিশেষজ্ঞ কমিটি দিয়ে মনিটরিং করার বিষয়ে একমত পোষণ করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০১২০ ঘণ্টা, এপ্রিল ১৩, ২০১৩
ইএস/ সম্পাদনা: অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর- [email protected]

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।