ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

সামিটের দাপটে পিছু হটছে পিডিবি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৩ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৩
সামিটের দাপটে পিছু হটছে পিডিবি

ঢাকা: শান্তাহার ও সৈয়দপুরে ভিন্ন দু’টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে ব্যর্থ হওয়ায় সামিট গ্রুপের জামানত বাজেয়াপ্তের নোটিস দিয়েছিল সরকার। কিন্তু প্রভাবশালী মন্ত্রীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠানের চাপের কাছে শেষমেশ অসহায় আত্মসমর্পন করতে হচ্ছে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ সংস্থাকে।



জানা গেছে, সরকারের উচ্চ পর্যায়ের চাপে সামিটের বিরুদ্ধে জারি করা নোটিস প্রত্যাহার করে নেওয়া হচ্ছে।

প্রসঙ্গত, বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি নির্মাণের সময় নতুন করে বর্ধিত ও স্থানান্তরের সুপারিশ করেছে বিদ্যুৎ বিভাগ। আগামী সপ্তাহে ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে বিষয়টি উঠতে যাচ্ছে বলে বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে।

সম্পূর্ণ বেআইনিভাবেই বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি স্থানান্তরের এ সুপারিশ করা হয়েছে। এ ধরনের ঘটনা সম্পূর্ণ নজিরবিহীন বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট মহল।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, ২০১১ সালে ১ জুন বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটির অনুমোদন দেয় সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। চুক্তি স্বাক্ষর হয় ওই বছরেই।

কিন্তু নির্ধারিত সময়ে শান্তাহারের ৫২ এবং সৈয়দপুরের ১০০ মেগাওয়াট আইপিপি (বেসরকারি বিদ্যু কেন্দ্র) দুটির নির্মাণ কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হয় সামিট।

চুক্তির শর্ত মোতাবেক নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করতে ব্যর্থ হলে জামানত বাজেয়াপ্ত করার কথা। সে অনুযায়ী উদ্যোগও নিয়েছিল পিডিবি। কয়েক দফায় সময় বাড়িয়ে দিয়েও কাজ করে নিতে ব্যর্থ হয় পিডিবি। শেষ অবধি সামিট গ্রুপের জামানত ১২ লাখ ডলার বাজেয়াপ্ত করার সিদ্ধান্তের কথা জানিয়ে দেয়।
 
কিন্তু পিডিবির এ সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করে মামলা করে সামিট। একই সঙ্গে চলতে থাকে ওপর তলার প্রভাব বিস্তারের কাজ। শেষ অবধি সামিটের প্রভাবের কাজে পরাজিত হয় আইন ও পিডিবি।

এবার সামিট গ্রুপ জেদ ধরে শুধু জামানত ফেরত বা সময় বর্ধিত করলেই চলবে না। স্থানও পরিবর্তন করে দিতে হবে। সামিট বিদ্যুৎ কেন্দ্র দুটি নারায়ণগঞ্জের মদনগঞ্জ ও বরিশালে স্থাপনের অনুমতি চায়।

শেষমেশ পিডিবির কোনো মাস্টার প্লান ছুড়ে ফেলে সামিটের ফরমায়েশ মতো ফাইল তৈরি করা হয়। আইপিপি সেল-৩ স্থানান্তর ও সময় বৃদ্ধির সুপারিশসহ বিদ্যুৎ বিভাগে প্রেরণ করে। একই সঙ্গে জামানত বাজেয়াপ্তের সিদ্ধান্ত স্থগিত করার কথাও বলা হয়।

আইপিপি সেলের এ প্রস্তাব পিডিবির বোর্ড সভায় অনুমোদন হয়ে এখন মন্ত্রণালয়ে অপেক্ষমান। বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব বিষয়টি সুপারিশসহ ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রীসভা কমিটির জন্য প্রস্তাব তৈরি করেছে।

এ প্রসঙ্গে আইপিপি সেল-৩ এর পরিচালক জাকির হোসেন বাংলানিউজকে জানান, আমরা ফাইলটি মন্ত্রণালয়ে পাঠিয়েছি। এখন তারা চুড়ান্ত করবেন বিষয়টি। এখন কি অবস্থায় আছে বলতে পারব না।
 
জামানত বাজেয়াপ্ত করার চিঠি দেওয়ার পর নতুন করে স্থান পরিবর্তনের আইন সম্মত কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমার কাছে এ প্রশ্নের কোনো সদুত্তর নেই। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ভালো বলতে পারবে।

আইপিপি সেল-৩ প্রস্তাবনা তৈরি করেছে তাহলে মন্ত্রণালয়ের ওপর দায় চাপানো সুযোগ আছে কি না এমন প্রশ্ন করা হলে বলেন, আপনারা বুঝেন না কিভাবে এসব বিষয় হয়।

জাতীয় গ্রিডের ওপর লোড কমাতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপন করছে। সে মাস্টার প্লানকে কোনো গুরুত্ব দেওয়া হলো না। এতে জাতীয় গ্রিডে সমস্যা দেখা দিতে পারে। এমন তথ্য দিয়েছে পিডিবি সূত্র।

প্রসঙ্গত, ১৫ বছর মেয়াদী এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য সামিট পাওয়ার লিমিটেড ও কনসোটিয়াম অব সামিট ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড মার্কেন্টাইল করপোরেশন চুক্তি করে পিডিবি।
 
সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রীর পারিবারিক প্রতিষ্ঠান হওয়ার বেআইনিভাবে এ সুযোগ দেওয়া হচ্ছে সামিটকে। এ প্রতিষ্ঠানকে বেশ কটি বিদ্যুৎ কেন্দ্র দেওয়া হয়েছে। বলতে গেলে এক চেটিয়াভাবে জিম্মি করে রেখেছে বিদ্যুৎ খাতকে।

সামিট গ্রুপের যোগ্যতা না থাকলেও বৃহৎ ৩টি বিদ্যুৎ কেন্দ্র বিবিয়ানা-১ , ২ এবং ৩ সামিটের হাতে তুলে দেয়। কাছাকাছি সময়ে মেঘনাঘাট ৩৫০ মেগাওয়াট কম্বাইন্ড সাইকেল পাওয়ার প্ল্যান্ট।
 
বিবিয়ানায় অর্থায়ন করতে ব্যর্থ হয় সামিট গ্রুপ। দফায় দফায় সময় বাড়িয়ে সম্প্রতি বিবিয়ানার চুক্তি বাতিল করার উদ্যোগ নিয়েছে। আর বিবিয়ানা-২ চলতি বছরের মাঝামাঝি সময়ে এসে কাজ শুরু করেছে। বর্তমান সরকারের সময়ে উপাদনে আসতে পারছে না বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি।

এ মুহূর্তে নতুন ও পুরোনো মিলিয়ে সামিট গ্রুপ ৩১৭ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন করছে। এগুলো হচ্ছে সাভার-৪৫ মেগাওয়াট, চান্দিনা-২৫ মেগাওয়াট, মাধবদী-৩৫ মেগাওয়াট, রূপগঞ্জ-৩৩ মেগাওয়াট, মাওনা-৩৩ মেগাওয়াট, জাঙ্গালিয়া-৩৩ মেগাওয়াট, মদনগঞ্জ (নারায়ণগঞ্জ)-১০২ মেগাওয়াট এবং উল্লাপাড়া-১১ মেগাওয়াট।

এ ছাড়াও অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে খুলনা পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেডের (কেপিসিএল) উৎপাদন ১০০ মেগাওয়াট থেকে বাড়িয়ে এখন ২৬৫ মেগাওয়াট করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১২ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৩
ইএস/এসএইচ/আরআইএস

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।