ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

উন্নয়নের নামে সম্পদ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়া চলছে

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩৩৬ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৩
উন্নয়নের নামে সম্পদ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়া চলছে

ঢাকা: তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ, বন্দর ও খনিজ সম্পদ জাতীয় রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব অধ্যাপক আনু মোহাম্মদ বলেন,‘ দেশে উন্নয়নের নামে সম্পদ লুণ্ঠনের প্রক্রিয়া চলছে। নির্বাচনকে সামনে রেখে দেশি ও বিদেশী গোষ্ঠীর সঙ্গে দুই দলের সমঝোতা চলছে।



সোমবার সকালে সাপ্তাহিক আয়োজিত ‘উন্নয়ন, জ্বালানি ব্যবস্থাপনা ও জনস্বার্থ’ শীর্ষক গোলটেবিল আলোচনা সভায় তিনি এসব কথা বলেন।

ধানমন্ডির বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অফ ল অ্যান্ড ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স(বিলিয়া) মিলনায়তনে এই বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।

 উন্নয়ন প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘ মানুষের মধ্যে উন্নয়ন বোধের জায়গাটাকে পরিবর্তন করতে হবে। দেশে গণবিরোধী যে রাজনীতি তৈরি হয়েছে তা রোধ করতে হবে। মানুষ দু ধরনের বিষচক্রে আছে, অর্থনৈতিক বিষচক্র এবং রাজনৈতিক বিষচক্র। রাজনৈতিক বিষচক্র হচ্ছে দুটি দল দুর্নীতি করছে এতে করে মানুষ একবার আ’লীগকে ভোট দিচ্ছে আবার আ’লীগের ওপর ক্ষিপ্ত হয়ে বিএনপিকে ভোট দিচ্ছে। ’

তিনি আরও বলেন, ‘দেশি বিদেশি শক্তির সঙ্গে রাজনৈতিক দলের নেগোশিয়েশন চলছে। কোন দল কাকে বেশি সুবিধা দেবে এই বিষয়ে। রামপাল, সুন্দরবন দখল, ফুলবাড়ি ও বঙ্গপসাগরের বিষয়ে কে বেশি সুযোগ দেবে। উন্নয়ন দর্শনের কারণে বিষচক্র তৈরি হয়েছে।

কয়লা ভিত্তিক বিদ্যুত উৎপাদন থেকে ভারত সরে আসছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘যারা বলছেন এই পদ্ধতিতে বিদ্যুত উৎপাদনে খরচা কম তারা ভুল কথা বলছেন। কয়লা থেকে বিদ্যুত উৎপাদন পৃথিবীতে সব থেকে ব্যয় বহল। এর কারণে পরিবেশ ও স্বাস্থ্যগত যে ক্ষতি হয় তার পূরণীয় নয়। ’

 লেখক, সাংবাদিক ও গবেষক সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন,‘ নির্বাচনের আগে রাজনৈতিক দলগুলো বায়বীয় প্রতিশ্রুতি দেবে। সরকারের যারা প্রধান তারা খেয়াল খুশি মতো দেশ পরিচালনা করেন। আমাদের উন্নয়নের যে মডেল চলছে তাতে কোনো দর্শন নেই। আমরা যেমন উন্নয়ন চাই তেমনি জীবনের মূল্যবৃদ্ধি চাই। উন্নয়নের জন্য যদি জীবন চলে যায় সেই উন্নয়ন আমরা চাই না। ’

 যাত্রাবাড়ি ফ্লাইওভার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘ তাড়াহুড়া করে তৈরি করেছে। বিরাট স্থাপনা হলেই উন্নয়ন হবে না। এটা সময় নিয়ে টেকসই নির্মাণ করতে হবে। রাষ্ট্র এখন তিনভাগে বিভক্ত এ, বি এবং সি। এ-তে আ,লীগ, বি-তে বিএনপি এবং সি-তে  সিটিজেন শিপ। ’
 
সিপিবি’র সভাপতি মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন, ‘ ২৫ অক্টোবর লগি বৈঠার জবাবে লাঠি বল্লমের নৈরাজের‌ মধ্যে দেশ যখন নিমজ্জিত তখন মানুষের মধ্যে উপস্থিত সংকট সৃষ্টি হয়েছে। এর আসল কারণ ও গভীরতায় গেলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়ন কোন দিকে যাচ্ছে তা দায়ী। ’

 দু’দলের বাইরে নতুন একটা বলয় তৈরি করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আ’লীগ বিএনপি বিরোধী দলে থাকলে জনস্বার্থমূলক কাজ করে। তাই আসুন আমরা সারা জীবনের জন্য দল দুটিকে বিরোধীদলে পাঠাই। ’

 উন্নয়ন সম্পর্কে গত দু’ই দশক ধরে যে ধারণা চলছে তা অনেকাংশে সঠিক নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘গাছ কেটে যদি ফার্নিচার তৈরি করি সেটাও উন্নয়ন । তাহলে কি লাখ লাখ গাছ কেটে ফার্নিচার তৈরি করতে হবে? উন্নয়ন সম্পর্কে ধারণা নতুন করে সংজ্ঞায়িত করা দরকার। তা না হলে মানব সভ্যতা সামনের দিকে এগিয়ে নিতে পারবো না। ’

তিনি আরও বলেন, ‘এখন উন্নয়ন হলো জাতীয় আয়ের বৃদ্ধি। আমরা উন্নয়নকে মাথাপিছু আয়ের ওপর ভিত্তি করে চিন্তা করি। পরিবারের মাথা পিছু আয় দেখান হচ্ছে একহাজার ডলারের ওপর। তাহলে সব জনগণ এক হাজার ডলারের ওপর আয় করে। আর যদি না করে তবে সেই টাকা শেখ হাসিনার কাছ থেকে আদায় করতে হবে। ’

ওপর থেকে পরিকল্পনা না করে রুট লেভেল থেকে পরিকল্পনা করতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এতে করে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী হবে। উন্নয়নের কথা জনকল্যাণকে ভিত্তি করে হয় না। এটা হয়ে থাকে একাউন্ট্যান্সের ওপর চিন্তা ভাবনা থেকে। চীনে যেভাবে উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হচ্ছে আমাদের দেশের মতো উন্নয়নশীল দেশকে সেই দিকে নজর দেওয়া দরকার। ’

 অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ বলেন,‘ নিছক মাথাপিছু আয় বাড়লেই তাকে উন্নয়ন বলা যাবে না। আগে চিন্তা করতে হবে এটা দ্বারা মানুষের উন্নয়ন কতো। গড় দিয়ে সব চিন্তা করলে হবে না। ’

 ‘সরকারের আমলে উন্নয়ন হচ্ছে কিন্তু মানুষ তা গ্রহণ করছে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, তাই সিটি কর্পোরেশনের নির্বাচনে ভোটের রাজনীতিতে তারা হেরে যাচ্ছে। তৃণমূলে আ’লীগের বাহিনীগুলো দুর্নীতি করছে। দুর্নীতি দুর করে উন্নয়ন করতে হবে। এখনও সময় আছে রামপাল বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণ থেকে সরে আসার। ’

পাওয়ার সেলের সাবেক মহাপরিচালক বি ডি রহমত উল্লাহ বলেন,‘ বিদ্যুত উৎপাদন তৈরি করার আগে আমাদের চিন্তা করতে হবে জীববৈচিত্র রক্ষা হচ্ছে কি না। যেটা জনস্বার্থে হবে সেটাই কাজে লাগাতে হবে। বিদ্যুত উৎপাদনের সময় যদি মানুষ মারা যায় তবে সেই বিদ্যুত কে ভোগ করবে?

 তিনি আরও বলেন, সরকার বিদ্যুত উৎপাদনের নামে ৩ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। তাড়াতাড়ি টাকা লুট করার জন্য এর নাম দিয়েছেন কুইক রেন্টাল। আমরা বাতাস ও সূর্য থেকে কাঙ্খিত বিদ্যুত উৎপাদন করতে পারি। কিন্তু সরকার এদিকে নজর দেবে না কারণ এই পথে তারা কাড়ি কাড়ি টাকা লুট কর পারবে না। ’

সাপ্তাহিকের সম্পাদক গোলাম মোর্তোজার সঞ্চালনায় গোলটেবিল বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন স্থপতি ইকবাল হাবিব। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সাপ্তাহিকের নির্বাহী সম্পাদক শুভ কিবরিয়া।

 বাংলাদেশ সময়: ১২৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ২১, ২০১৩
এমআইএস/এনএস/বিএসকে

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।