ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

গ্রামে আতঙ্কের নাম পল্লীবিদ্যুৎ

সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২২১৫ ঘণ্টা, মার্চ ৬, ২০১৪
গ্রামে আতঙ্কের নাম পল্লীবিদ্যুৎ

ঢাকা: গ্রাহকদের প্রশ্নবানে জর্জরিত পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি)চেয়ারম্যান বিগ্রেডিয়ার মঈন উদ্দিন। স্বীকার করলেন ঘুষ-দুর্নীতি ও হয়রানির কথা।


 
তবে খানিকটা দম্ভের সঙ্গেই বললেন, আপনারা ঘুষ দিচ্ছেন, জন্য কর্মকর্তারা নিচ্ছেন। এতে আর বলার কি আছে।
 
বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনে(বিইআরসি) আরইবি’র বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের ওপর গণশুনানিতে গ্রাহকরা তাকে প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন।
 
গণশুনানিতে অংশ নেন গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, আরইবি’র আচার-আচরণের কারণে মানুষ এখন প্রতিষ্ঠানটিকে নব্য নীলকর হিসেবে অভিহিত করছেন। জনগণের কাছে আতঙ্কের নাম আরইবি।
 
আরইবি’র বিরুদ্ধে কোনো কর্মসূচি দেওয়া হলে হাজার হাজার মানুষ জমায়েত হচ্ছে। এ প্রবণতা ভালো না। মানুষের ক্ষোভ বুঝতে হবে। না হলে বড় ধরনের অঘটন ঘটে যেতে পারে বলে মন্তব্য করেন এই গ্রাহক।
 
গণশুনানিতে অংশ নিয়ে গাইবান্ধার গোবিন্দগঞ্জের শাহ মোশফিকুর রহমান বলেন, আমি টাকা দিয়ে মিটার কিনছি। কিন্তু সেই মিটারের জন্য প্রতিমাসে ১শ’ টাকা ভাড়া নিচ্ছে আরইবি। কেন আমার টাকায় কেনা মিটারের জন্য ভাড়া দেবো?
 
প্রতি মাসে সার্ভিস চার্জ দিতে হচ্ছে ৭০ টাকা। রাইস মিলের জন্য ডিমান্ড চার্জ দিতে হচ্ছে ১৯৫০ টাকা। অথচ পিডিবি থেকে বিদ্যুৎ‍ সংযোগ নিলে ডিমান্ড চার্জ দিতে হয় না। মিটার ৩ ফেজ সংযোগ নিতে হলে আরইবিকে ২৪ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। জামানত দিতে হচ্ছে ২ লাখ ৬৮ হাজার টাকা।
 
ট্রান্সফরমার নষ্ট হলে সব টাকাই দিতে হচ্ছে গ্রাহককে। সেই টাকাও তাদের ইচ্ছা মতো দিতে হচ্ছে। উদাহরণ দিয়ে বলেন, একবার ২৫ কেভি একটি ট্রান্সফরমার জ্বলে গেলে তিনি গাইবান্ধা আরইবি’র দ্বারস্থ হন। তারা ২৯ হাজার টাকা দিতে বলে। পরে অফিসের একজন এসে ১৫ হাজার টাকা নেন। যার কোনো রিসিট দেননি। কিন্তু ট্রান্সফরমার মেরামত হয়েছে তার।
 
৩টি বিল দেখিয়ে তিনি বলেন, এখানে ব্যবহৃত ইউনিটের চেয়ে বেশি বিল নেওয়া হয়েছে। তিনি আরইবি’র সঙ্গে যোগাযোগ করেছিলেন। তারা বলেছে, এখানে আড়াই শতাংশ ট্রান্সফরমার সিসটেম লস ধরা হয়েছে। কিন্তু কোনো রকম নিয়ম নেই সিসটেম লস বাবদ টাকা আদায়ের।
 
নির্দিষ্ট করে আরও অনেকগুলো অভিযোগ উস্থাপন করেন এই গ্রাহক।

জবাবে আরইবি’র চেয়ারম্যান বলেন, আপনার অভিযোগের সঙ্গে একমত পোষন করছি। হয়রানি হচ্ছে স্বীকার করি। তবে ঘুষের কারণে গত ২ বছরে ৪ জন জিএম, ১২ জন ডিজিএম এবং দুই ডজনের মতো এজিএমকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
 
ঘুষ গ্রহণ প্রসঙ্গে আরইবি’র চেয়ারম্যান বলেন, আপনি দিচ্ছেন বলে নিচ্ছি। সার্ভিস ও ডিমান্ড চার্জ নেওয়া হচ্ছে।
 
সিপিবি নেতা রুহিন হোসেন প্রিন্স আলোচনায় অংশ নিয়ে বলেন, কানসাটে যে আন্দোলন হয়েছিলো সেখানে প্রধান দাবি ছিলো মিটার ভাড়া না দেওয়া, ন্যূনতম বিল কমানো। কিন্তু আপনারা সেই ভাড়া এবং ন্যূনতম বিল বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়ে অনৈতিক কাজ করেছেন।
 
আরইবি গড়ে ১২.৫৭ শতাংশ বিদ্যুতের দাম বাড়ানোর প্রস্তাব দিলেও সেচ গ্রাহকদের জন্য ২৩.০৪ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে। এ প্রস্তাবে নিয়েও তোপের মুখে পড়েন আরইবি চেয়ারম্যান।
 
রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন, এ প্রস্তাব ঘোরতর অনৈতিক। কৃষি আমাদের বাঁচিয়ে রেখেছে। সেই কৃষিকে মারার টার্গেট করেছে আরইবি।
 
বিইআরসি’র মূল্যায়ন কমিটি আলোচনায় আনে আরইবি’র সিসটেম লসকে। তারা বলেন, ভোলাসহ অনেক সমিতি রয়েছে। যেখানে ২৭ শতাংশ পর্যন্ত সিসটেম লস রয়েছে। অথচ এই বোঝা আপনারা জনগণের কাঁধে চাপাতে চাইছেন।
 
জবাবে আরইবি’র চেয়ারম্যান বলেন, স্বীকার করছি এ কথা। তবে আমরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি, প্রতিনিয়ত কমছে সিসটেম লস।
 
আরইবি’র চেয়ারম্যান বলেন, আমাদের কর্মীদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে। বেতন বাড়াতে পারছি না। মেধা শূন্য হচ্ছে আরইবি। একই সঙ্গে সীমাবদ্ধতা থাকায় কাঙ্খিত সেবা দিতে পারছি না।
 
সেচে আমাদের লোকসান দিতে হচ্ছে ২৫০ কোটি টাকা। দাম না বাড়ালে ভর্তূকি দিতে বলেন সরকারকে। বিগত সময়ে বিইআরসি সরকারকে ভর্তুকি দিতে বলেছিলো। কিন্তু ২১০ কোটি টাকা সরকার দেয়নি বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
 
বাংলাদেশ সময়: ২২০৭ ঘণ্টা, মার্চ ০৬, ২০১৪

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।