ঢাকা, সোমবার, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হবে না: ইয়াফেস ওসমান

আনোয়ারুল করিম, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৮১৯ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১১
রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হবে না: ইয়াফেস ওসমান

ঢাকা: বাংলাদেশে স্থাপনের উদ্যোগ নেওয়া পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ঝুঁকিপূর্ণ হবে না বলে মন্তব্য করেছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান।

তিনি বলেন, ‘এটি নির্মাণে সর্বশেষ প্রযুক্তির সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।



বুধবার সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে বাংলানিউজকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে প্রতিমন্ত্রী এ কথা বলেন।

ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘আমাদের এখানে যে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হবে সেটি হবে তৃতীয় প্রজন্মের। ’

‘জাপানের ঘটনার পর আমরা এখানকার কেন্দ্রটিকে আরও নিরাপদ করে নির্মাণের কথা ভাবছি’ বললেন প্রতিমন্ত্রী।

বিশ্বের কয়েকটি দেশে পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রবিরোধী মনোভাব ও চুক্তি বাতিলের কথা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘এখানে ওই ধরনের পরিস্থিতি নেই। তাই আমরা সে ধরনের কিছু ভাবছি না এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিকল্পও আমাদের নেই। ’

তিনি বলেন, ‘রূপপুর কেন্দ্রের এখনও যেহেতু নকশাই করা হয়নি, তাই এর নিরাপত্তা নিশ্চিত করার সব রকম সুযোগ থাকছে। ’

বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণে সরকার সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বন করবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান।

তিনি বলেন, ‘জাপানের অভিজ্ঞতার পর ১০ মাত্রার বা তারও বেশি ভূমিকম্প সহনশীল করে আমাদের কেন্দ্র নির্মাণের কথা আমরা ভাবছি। ’

রাশিয়ার পরমাণু প্রযুক্তির সর্বশেষ সংস্করণ দিয়েই রূপপুরের পারমাণবিক চুল্লি স্থাপন করা হবে বলে তিনি জানান।

পরমাণু তেজস্ক্রিয়া থেকে দেশের মানুষের নিরাপত্তার ব্যাপারে সরকারের ‘সতর্কতা’র কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রাশিয়া থেকে আসা প্রতিনিধিদল এরই মধ্যে আমাদের পুলিশ, কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের প্রশিণ দিয়েছে। এ কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ’   

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রূপপুরের কেন্দ্রটির জন্য এখনও চূড়ান্ত চুক্তি হয়নি। প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফরে চুক্তি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ’

আগামী এপ্রিল মাসের শেষ সপ্তাহে প্রধানমন্ত্রীর রাশিয়া সফর হতে পারে বলেও উল্লেখ করেন ইয়াফেস ওসমান।

জাপানের পরমাণু চুল্লির বিস্ফোরণ প্রসঙ্গ ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘জাপানের ফুকুসিমার কেন্দ্রটি ছিল প্রথম প্রজন্মের, যা ষাটের দশকে নির্মিত হয়। তবে এখন প্রযুক্তি আরও এগিয়ে গেছে। ’

‘তবে জাপানে কিন্তু ভূমিকম্পের কারণে পারমানবিক চুল্লির বিস্ফোরণ হয়নি, সুনামির কারণে এমনটি হয়েছে’ মন্তব্য প্রতিমন্ত্রীর।  

তিনি বলেন, ‘রূপপুরে প্রস্তাবিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি খুব বেশি ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় হচ্ছে না। এছাড়া এটি সাগরের পাশে নয়, স্থাপিত হবে নদীর তীরে। ’

প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আমি নিজে রূপপুর কেন্দ্রটির আশেপাশের স্থানগুলো ঘুরে দেখেছি, নদী ও এর পাশ থেকে দূরে সরে যাচ্ছে। ফলে নদী ভাঙনেও কেন্দ্রটি হুমকির মুখে পড়বে না। ’

তিনি আরও বলেন, ‘নিরাপত্তার স্বার্থে নদীর তীর থেকে বিদ্যুৎকেন্দ্র পর্যন্ত জমি অধিগ্রহণ করে নেওয়া হবে, যেন অন্য কোনো স্থাপনা সেখানে করা না হয়। ’    

জাপানের পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের চুল্লির বিস্ফোরণ-পরবর্তী পরিস্থিতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পুরো ঘটনাপ্রবাহ আমরা প্রতিনিয়ত পর্যবেণ করছি। ’

এসব বিষয় নিয়ে আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি কমিশনের (আইএইএ) সঙ্গেও বাংলাদেশ পরমাণু শক্তি কমিশন নিয়মিত যোগাযোগ রাখছে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়া আমাদের বিদ্যুতের বিপুর চাহিদা মেটানোর সুযোগ নেই। ’

এ প্রসঙ্গে করা এক প্রশ্নের জবাবে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সৌর বিদ্যুতের প্রযুক্তি এখনও সাধারণের জন্য সহজলভ্য ও সুলভ হয়নি। আরও সময় গেলে হয়তো সৌরবিদ্যুৎ জনপ্রিয় হবে। ’

এদিকে রূপপুরের প্রস্তাবিত পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা প্রসঙ্গে পরমাণু শক্তি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. ফরিদ উদ্দিন বাংলানিউজকে বলেন, ‘পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তা অবশ্যই নিশ্চিত করা সম্ভব। বিশ্বের অনেক দেশই নিরাপদভাবে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপন করেছে। আমাদের এখানেও সব ধরনের নিরাপত্তা ব্যবস্থা নিয়েই কেন্দ্রটি করা হবে। ’

প্রতিমন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান জানান, পাবনার রূপপুরে পারমাণুবিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের উদ্যোগের অংশ হিসেবে রাশিয়ার সঙ্গে পারমাণবিক চুল্লি স্থাপনের জন্য গত ২৪ ফেব্র“য়ারি প্রাথমিক চুক্তিপত্রে স্বার করে সরকার।

চুক্তি অনুযায়ী, রাশিয়া সরকারের সহায়তায় রূপপুরে বিদ্যুৎকেন্দ্রের ১ হাজার মতা সম্পন্ন ২টি ইউনিট স্থাপন করা হবে। এ কেন্দ্রের জ্বালানি হিসেবে ইউরেনিয়াম সরবরাহ করবে রাশিয়া, তারা এর বর্জ্যও তারা নিয়ে যাবে।

প্রসঙ্গত, ১৯৬১ সালে এ প্রকল্প শুরুর উদ্যোগ নেয়া হলেও পরবর্তী ৪৯ বছরে প্রকল্পটি নিয়ে কানাডা, সুইডেন, নরওয়ে, রাশিয়া, ফ্র্রান্স, বৃটেন, জার্মানি, দণি কোরিয়ার সঙ্গে নিষ্ফল আলোচনাই শুধু হয়েছে।

মহাজোট সরকার মতায় এসে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে প্রকল্পটি চালুর নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়।

পরমাণু শক্তি কমিশন-সূত্র জানায়, রূপপুরের এই বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম হতে পারে ৬০ থেকে ৭০ পয়সা। স্থাপনের ১৫ বছরের মধ্যে এর ব্যয়ও উঠে যেতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৭৫০ ঘণ্টা, মার্চ ১৬, ২০১১ 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।