ঢাকা, বুধবার, ১০ বৈশাখ ১৪৩১, ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১৪ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

অনৈতিক সুবিধায় শত শত কোটি টাকা হাতিয়েছে এনার্জি প্যাক

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
অনৈতিক সুবিধায় শত শত কোটি টাকা হাতিয়েছে এনার্জি প্যাক

ঢাকা: মন্ত্রী ও আমলাদের সঙ্গে আঁতাত করে বিদ্যুৎ খাতে আধিপত্য বিস্তার করেছে এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। কোম্পানিটি শুধু ফরিদপুর পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণেই ১২৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে।

 

সম্প্রতি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাতের মাধ্যমে বাড়তি দরে বেশ কিছু কাজ বাগিয়ে নিয়েছে। এতে রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা লোকসান হয়েছে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সূত্র।

এনার্জি প্যাককে ফরিদপুর ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের জন্য ঠিকাদার নিযুক্ত করা হয়। এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির জন্য রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে অর্থ পরিশোধ করা হয় ৪৩৭ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। ৮২০ মেগাওয়াট প্রকল্পের আওতায় ওই প্রকল্প নেওয়া হয়।

একই প্রকল্পের আওতায় চীনা প্রতিষ্ঠান ডংফেং ইলেক্ট্রনিক্স করপোরেশন একই ক্ষমতা সম্পন্ন কাঁটাখালী ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট নির্মাণের কাজ পায়। এতে ব্যয় হয় মাত্র ৩১১ কোটি ৮৬ লাখ টাকা। যা এনার্জি প্যাকের পরিশোধিত দরের চেয়ে প্রায় ১২৫ কোটি ৫৯ লাখ টাকা কম।

ডংফেং শান্তাহার ৫০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট স্থাপন করে মাত্র ৩১৯ কোটি ৯৪ লাখ টাকায়। কিন্তু একই মানের বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণে এনার্জি প্যাককে কেন ৪৩৭ কোটি ৭৪ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে তার যৌক্তিক কোন কারণ দেখছে না সংশ্লিষ্টরা।

প্রকৃত দরের চেয়ে বাড়তি দরে এনার্জি প্যাককে কাজ দেওয়ার এ রকম অসংখ্য নজির রয়েছে। এতে রাষ্ট্রের হাজার কোটি টাকা অপচয় হলেও সংশ্লিষ্টরা নীরব ভূমিকা পালন করছে। কথিত আছে, সরকারের কয়েকজন প্রভাবশালী মন্ত্রীর সঙ্গে আঁতাত করে নির্বিঘ্নে অনৈতিক কর্মকাণ্ড চালিয়ে আসছে এনার্জি প্যাক।

এনার্জি প্যাকের সিইও হুমায়ুন রশীদ ১২৫ কোটি টাকা বেশি দরে কাজ দেওয়ার কথা স্বীকার করে বাংলানিউজকে জানান, ভূমি উন্নয়নের কারণে অনেক সময় দর কমবেশি হতে পারে। এতে দোষের কিছু নেই।

তবে তার এ যুক্তির কোন সত্যতা পাওয়া যায়নি ফরিদপুর পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট এলাকা পরিদর্শন করে। স্থানীয়রা জানিয়েছে, ফরিদপুর পিকিং পাওয়ার প্ল্যান্ট যেখানে স্থাপন করা হয়েছে সেই জায়গাটি পুরোপুরি সমতল। যদি ভূমি উন্নয়ন প্রসঙ্গ গুরুত্ব পায় তাহলে অন্যগুলোর চেয়ে দর কম হওয়া কথা।
এ বিষয়ে এনার্জি প্যাকের সিইওর দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে সরাসরি উত্তর না দিয়ে বলেন, এখানে কোন অনিয়ম করা হয়নি।

তিনি বলেন, চীনে সব কিছুর দাম কম। আর তারা এ কাজের জন্য দেশ থেকে প্রণোদনা পায়। তাই তারা এত কম দামে কাজ করতে পেরেছে। আমরা যৌক্তিক দামেই কাজটি পেয়েছি।

প্রভাবশালীদের সঙ্গে যোগসাজসে শতকোটি টাকা লুটপাটের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলেও দাবি করেন হুমায়ুন রশীদ।

পিডিবির এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এলে হঠাৎ করেই সামনের কাতারে চলে আসে এনার্জি প্যাক পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি। বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড, পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ড, ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি ও ঢাকা ইলেক্ট্রিক সাপ্লাই কোম্পানিতে একচ্ছত্র অধিপত্য বিস্তার করেছে। টেন্ডার মানেই এনার্জি প্যাক।

আর বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই স্টিমেটেড(প্রাক্কলিত মূল্যের) চেয়ে বাড়তি দরে কাজ দেওয়া হয়েছে এনার্জি প্যাককে। এদিকে আরইবি’র ‘ইমার্জেন্সি রিহাবিলেটেশন অ্যান্ড এক্সপেনশন অব আরবান এরিয়া পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন প্রকল্প’র আওতায় ৯টি সাব-স্টেশন নির্মাণে টেন্ডার মূল্য ছিল ৬২০ মিলিয়ন টাকা।

কিন্তু কাজটির এনার্জি প্যাককে দেওয়া হয়েছে ৬৫০ মিলিয়ন টাকা। এ প্রকল্পেও ৩০ মিলিয়ন টাকা বাড়তি অপচয় হয়েছে রাষ্ট্রের। এ ক্ষেত্রেও ৩০ মিলিয়ন টাকা ভাগ বাটোয়ারা করার অভিযোগ উঠেছে।

এনার্জি প্যাক শুধু বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণ নয়, চট্টগ্রামের পটিয়ার একটি ১০৮ মেগাওয়াট আইপিপি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের কাজ বাগিয়ে নেয়। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটি এনার্জি প্যাক ও কনসোর্টিয়াম অব কনফিডেন্স সিমেন্ট লি যৌথ মালিকানায় নির্মাণ করছে। এছাড়া কোম্পানিটির বিরুদ্ধে নিম্নমানের ট্রান্সফরমার ও জেনারেটর বাজারজাত করার অভিযোগ উঠেছে।

কোম্পানিটির দৌরাত্ম্যের কাছে পিডিবির অনেক কর্মকর্তাই অসহায়। বেশ কয়েকটি ক্ষেত্রে চুক্তির পর দর পরিবর্তন করা হয়েছে।

এনার্জি প্যাকের সিইও হুমায়ুন রশীদ দাবি করেছেন, তারা সব নিয়ম মেনেই কাজ পেয়েছেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৮২০ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৯, ২০১৫
এসআই/জেডএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।