ঢাকা, শনিবার, ১৪ বৈশাখ ১৪৩১, ২৭ এপ্রিল ২০২৪, ১৭ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

বসিক, পর্ব-২

খুঁটি আছে, বিদ্যুৎ নেই!

ইকরাম-উদ দৌলা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৯০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
খুঁটি আছে, বিদ্যুৎ নেই! ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বরিশাল সিটি করপোরেশনের পশ্চিমাংশ এখনো অন্ধকারে। সিটি গঠনের পর ১৩ বছর পেরিয়ে গেলেও জনপদটি পশ্চাৎপদই রয়ে গেছে।

মূলতঃ নগর কর্তৃপক্ষের ইচ্ছাকৃত অবহেলার কারণেই সাধারণ মানুষের দুর্ভোগের শেষ নেই। অথচ মূল শহরের বাসিন্দাদের মতোই তাদেরও রয়েছে নাগরিক অধিকার। এ নিয়ে তিন পর্বের ধারাবাহিক প্রতিবেদনের মধ্যে প্রকাশিত হলো দ্বিতীয় পর্ব। তৃতীয় পর্ব পড়তে চোখ রাখুন বাংলানিউজে।

বরিশাল থেকে ফিরে: ২০০২ সালের ২৫ জুলাই যাত্রা শুরু করে বরিশাল সিটি করপোরেশন (বসিক)। এরপর কেটে গেছে ১৩ বছর। কিন্তু নগরীর পশ্চিমাংশের ওয়ার্ডগুলো এখনো অন্ধকারে। দীর্ঘদিন আগে কিছু খুঁটি পোতা হলেও বিদ্যুৎ সংযোগ নেই।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, সিটির এক-চতুর্থাংশ এলাকার জনসাধারণ নাগরিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। নেই সুপেয় পানির ব্যবস্থা। ড্রেনেজ ব্যবস্থার বালাই নেই। স্যুয়ারেজ লাইনতো কল্পনাতীত বিষয়।

বিদ্যুৎ না থাকলেও আছে খুঁটি। তবে সে খুঁটি এখন আর আশার আলো জ্বালায় না নগরবাসীর মনে।

এ এলাকাগুলো নগরীর ২৩ নম্বর থেকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ড পর্যন্ত বিস্তৃত। বরিশালে ওয়ার্ড আছে ৩০টি। অর্থাৎ এক-চতুর্থাংশ এলাকার মানুষ নগরীর সুবিধা থেকে বঞ্চিত।

পূর্ব ও পশ্চিম হরিণাফুলিয়া (২৬ নম্বর ওয়ার্ড), রুপাতলী (২৪ নম্বর ওয়ার্ড), ডেপুলিয়া (২৭ নম্বর ওয়ার্ড), কাশিপুর (২৮ নম্বর ওয়ার্ড) ও সাগরদী (২৩ নম্বর ওয়ার্ড) এলাকা ঘুরে বৈদ্যুতিক সংযোগহীন খুঁটির অস্তিত্ব মিলেছে। তবে এগুলোর মধ্যে কিছু কিছু মহল্লায় পল্লীবিদ্যুতের কিছু সংযোগ রয়েছেও। সংযোগহীন যে খুঁটিগুলো রয়েছে সেগুলোও একই প্রতিষ্ঠানের। কিন্তু খুঁটি পোতার পর সেখানে আর সংযোগ দিতে পারেনি সংস্থাটি।

জানা গেছে, এ এলাকাগুলো আগে ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরে অন্তর্ভুক্ত ছিলো। ২০০২ সালে বরিশাল পৌরসভার সঙ্গে ওয়ার্ডগুলো যুক্ত করে বরিশাল সিটি করপোরেশন গঠন করা হয়। সেই থেকেই তারা বঞ্চিত হয়ে আসছেন বলে সেখানে বসবাসরতদের অভিযোগ।

এলাকাবাসী বলছেন, ওই ওয়ার্ডগুলো যখন ইউনিয়ন পরিষদের ভেতরে ছিলো, তখন পল্লীবিদ্যুতের কিছু সংযোগ দেওয়া হয়েছিলো। পরবর্তীতে সিটির ভেতরে পল্লীবিদ্যুতের কোনো সংযোগ দিতে দেয়নি সিটি করপোরেশন। তারা নাকি পিডিবি’র সংযোগ দেবে। এজন্যই খুঁটি পোতা হলেও সংযোগ আর আসেনি। এদিকে বর্ষার সময় কিছু কিছু এলাকার ভেতরে পানি চলে আসে। নিষ্কাশনের ব্যবস্থা না থাকায় সহজে তা সরতেও চায় না। তখন দুর্ভোগের সীমা থাকে না। এছাড়া স্যুয়ারেজ বা ড্রেনেজ সিস্টেমের সুবিধাও দেওয়া হয়নি প্রায় এক লাখ মানুষকে।

বর্তমান মেয়র ক্ষমতাসীন দলের নয় বলেই উন্নয়ন কাজ করতে পারছেন না বলে মন্তব্য নাগরিকদের। এক্ষেত্রে সাধারণ মানুষ সাবেক মেয়র শওকত হোসেন হিরণের অভাব বোধ করছেন। কেননা, সিটি করপোরেশনের দ্বিতীয় মেয়র হলেও হিরণই অপেক্ষাকৃত বেশি উন্নয়ন করেছেন। বিশেষ করে রাস্তার উন্নয়ন সব হিরণেরই করা।

অবহেলিত এলাকাবাসীর একজন প্রিয়লাল সরকার। পুলিশের চাকরি থেকে সম্প্রতি অবসর নিয়েছেন। তিনি বাংলানিউজকে বলেন, ২৩ নম্বর থেকে ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে বিদ্যুৎ ও পানির সংযোগ নেই। আবার স্যুয়ারেজ লাইন, ড্রেনেজ সিস্টেমও করা হয়নি। কিছু কিছু এলাকায় পল্লীবিদ্যুতের কিছু সংযোগ আছে। কিন্তু সেগুলো থাকা না থাকা একই কথা। কেননা, পল্লী বিদ্যুতের লোডশেডিং বর্ণনা করার মতো নয়।

বরিশাল সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা রনজিৎ কুমার দাশ বাংলানিউজকে বলেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ দেওয়া যায়নি, একথা সত্য। তবে রাস্তায় ল্যাম্পপোস্ট দেওয়া হয়েছে। ধীরে ধীরে সকল বাড়িতেই বিদ্যুতের সংযোগ দেওয়া হবে। মূল শহরে উন্নয়নের জন্যই ওই সব এলাকার উন্নয়ন একটু দেরিতে করতে হচ্ছে। শিগগিরিই ড্রেন, স্যুয়ারেজ লাইন ইত্যাদির জন্যও প্রকল্প হাতে নেওয়া হবে।
 
২০০২ সালে সিটি করপোরেশন ঘোষণার পর ২০০৩ সালে প্রথম নির্বাচিত মেয়র হয়েছিলেন বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মো. মজিবুর রহমান সারওয়ার। এরপর ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগের নেতা শওকত হোসেন হিরণ (প্রয়াত) নির্বাচিত মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০১৩ সালের নির্বাচনে জয়লাভ করে বর্তমানে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন বিএনপি নেতা মো. আহসান হাবীব কামাল।

বরিশাল সিটির লোকসংখ্যা প্রায় ছয় লাখ। এর মধ্যে অবহেলিত পশ্চিমাংশে প্রায় এক লাখ লোক বসবাস করেন।

বাংলাদেশ সময়: ০৯০০ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৬, ২০১৫
ইইউডি/এএসআর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।