ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১২ বৈশাখ ১৪৩১, ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১৫ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

দেরিতে হলেও উদ্যোগটি ভালো: টিআইবি

সেরাজুল ইসলাম সিরাজ, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৫
দেরিতে হলেও উদ্যোগটি ভালো: টিআইবি ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

রামপাল (বাগেরহাট) থেকে: সরকার দাবি করে আসছে রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্ট পরিবেশবান্ধব। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের কারণে সুন্দরবনের ক্ষতি হওয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।



অন্যদিকে সুন্দরবন রক্ষা কমিটি ও পরিবেশবিদরা অনেকে এর চরম বিরোধিতা করে আসছেন। তাদের দাবি, সুন্দরবনের এতো কাছে কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র (রামপাল) নির্মিত হলে হুমকির মুখে পড়বে বনের অস্তিত্ব।

এমন কি সুন্দরবনের ভেতর দিয়ে কয়লা আনা নেওয়াতে শব্দ দূষণ হবে। রাতে জাহাজ চলাচল করবে, সেই জাহাজের হাইভোল্টের সার্চ লাইটে বণ্যপ্রাণি আতঙ্কিত হবে। এসব কারণে ব্যাহত হবে বন্যপ্রাণির স্বাভাবিক জীবনচক্র। হুমকির মুখে পড়বে সুন্দরবনের জীববৈচিত্র্য।

কিন্তু পরিবেশবিদদের এ দাবি পাত্তাই দিচ্ছে না বিদ্যুৎ বিভাগ। খোদ বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মনোয়ার ইসলাম একাধিক সভায় বলেছেন, যারা এর বিরোধিতা করছেন তারা না বুঝে, না দেখেই বিরোধিতা করছেন।

পরিবেশবাদীরা যেমন বসে নেই, আবার সরকারও বসে নেই। অধিগ্রহণ করা (১৮২১ একর) জমির মধ্যে ৪শ ২০ একরে মাটি ভরাটের কাজ শেষ করেছে। শেষ হয়েছে সীমানা প্রাচীর নির্মাণের কাজও। নির্মাণ করা হয়েছে সাইট অফিস, প্রকল্প এলাকায় সরবরাহের জন্য নির্মাণ করা হয়েছে বিদ্যুতের নতুন লাইন। চলছে বিদ্যুৎ কেন্দ্র নির্মাণের ঠিকাদার নিয়োগ প্রক্রিয়া।

এমন একটি সময় সরকার সুন্দরবন রক্ষা কমিটির নেতা, পরিবেশবিদ, শিক্ষাবিদ, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ ও সাংবাদিকদের সরেজমিন দেখানোর উদ্যোগ নেয়। সরকারের লক্ষ্য বিরোধিতাকারীদের মতামত গ্রহণ ও তাদের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে ঐক্যমতে পৌঁছানো।

তেল-গ্যাস বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটি একে বনভোজন আখ্যা দিয়ে বর্জন করলেও অন্য অনেকে ঠিকই সাড়া দিয়েছেন। প্রথম দফায় পরিদর্শনে আসা দলটিকে মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) খুলনা কাস্টমস ঘাট থেকে জাহাজে তোলা হয়।

দলটিকে প্রস্তাবিত বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির নির্ধারিত স্থান রামপালে নেওয়া হয়। সেখান থেকে পশুর চ্যানেল ধরে হারবাড়িয়া পয়েন্ট, আকরাম পয়েন্ট হয়ে হিরণ পয়েন্টে নেওয়া হয়। যেখানে মাদার ভেসেল থেকে কয়লা আনলোড করে রামপালে নেওয়া হবে।

পশুর চ্যানেল নিয়ে পরিবেশবাদীদের উদ্বেগের কোনো কারণ দেখছেন না রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টের (বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া ফ্রেন্ডশিপ পাওয়ার কোম্পানি লিমিটেড) প্রধান প্রকিউরমেন্ট কর্মকর্তা।

কাজী আফসার উদ্দিন বলেন, বলা হচ্ছে পশুর চ্যানেল দিয়ে জাহাজ চলাচলের কারণে শব্দ দূষণ হবে এবং রাতে জাহাজের সার্চ লাইটের কারণে বণ্যপ্রাণি ভয় পাবে।

রামপালের এ কর্মকর্তা হারবাড়িয়া পয়েন্ট দেখিয়ে বলেন, আপনারা দেখেন এখানে পশুর চ্যানেলের প্রস্থ ৫ কিলোমিটার উপরে। এখানে জাহাজ গেলে বনের মধ্যে থাকা প্রাণী কেন ভয় পাবে। এ শব্দ কোনোভাবেই বণ্যপ্রাণির আতঙ্কের কারণ হতে পারে না।

আবার সার্চলাইটের কথা বলা হচ্ছে। লাইট কোনোভাবেই বন ভেদ করে ভেতরে যাওয়ার কথা নয়। তাই এসব যুক্তির কোনো ভিত্তি নেই। আবার ব্যাপক মাত্রায় জাহাজ চলাচল নিয়ে উদ্বেগেরও কোনো ভিত্তি নেই। বিদ্যুৎ কেন্দ্রটিতে দৈনিক কয়লা প্রয়োজন পড়বে ১০ হাজার টন। যা মাত্র একটি লাইটারেজে করে বহন করা সম্ভব। সে হিসেবে দিনে মাত্র একটি জাহাজ চলাচল করবে এ বিদ্যুৎকেন্দ্রের জন্য।

কাজী আফসার উদ্দিন বলেন, কয়লাবাহী এ লাইটারেজ হবে হপার টাইপ। এ কারণে পরিবহনের সময় কয়লা ছড়িয়ে পড়ার কোনো সম্ভাবনা থাকবে না। আর সপ্তাহে একটি বার্জ হিরণ অথবা আকরাম পয়েন্টে আসবে।

বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির চিমনি দিয়ে নির্গত কলো ধোঁয়া নিয়ে বড় উদ্বেগ জানিয়েছেন পরিবেশবাদীরা। তাদের বক্তব্য, চিমনি দিয়ে ধোঁয়ার সঙ্গে নির্গত বিষাক্ত ছাই (কার্বন, সালফার) বের হবে। তা বাতাসের মাধ্যমে সুন্দরবনের দিকে যাবে। বিশেষ করে শীত মৌসুমে বাতাস উত্তর থেকে দক্ষিণে প্রবাহিত। তখন এই বিষাক্ত ছাই সুন্দরবনের গাছপালা ধ্বংস করবে।

এ বিষয়ে কাজী আবসার উদ্দিন আহমেদ বক্তব্য, এখান থেকে সুন্দরবনের নিকটতম দূরত্ব হচ্ছে ১৪ কিলোমিটার। এছাড়া সমীক্ষায় দেখা গেছে শীত মৌসুমে বায়ু উত্তর থেকে সরাসরি দক্ষিণে প্রবাহিত হয় না। দক্ষিণ-পূর্বকোণে প্রবাহিত হয়। তাই এই কালো ধোঁয়া কোনোভাবেই সুন্দরবনকে আক্রান্ত করবে না।

দ্বিতীয় দলটি বৃহস্পতিবার (১৯ নভেম্বর) বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রীর সঙ্গে হেলিকপ্টারযোগে রামপালে আসেন। এ দলে ছিলেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান, জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. ইজাজ হোসেন, অধ্যাপক ড. শামসুল আলম, বাংলাদেশ পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন’র মহাসচিব ডা. আব্দুল মতিন, সুন্দরবন রক্ষা কমিটির সদস্য শরীফ জামিল ও পরিবেশবাদী আইনজীবী সমিতির নির্বাহী পরিচালক মাহফুজুর রহমান মুকুল।

রামপালের বিরুদ্ধে সরব এ প্রতিনিধি দলটি সাড়ে ১০টায় রামপালে পৌঁছেই রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেন প্রতিমন্ত্রী ও রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টের কর্মকর্তাদের সঙ্গে। রুদ্ধদ্বার বৈঠক শেষে পশুর চ্যানেল ভিজিট করেন তারা।
tib_bg
পরিদর্শন প্রসঙ্গে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, দেরিতে হলেও উদ্যোগটি ভালো। এটি গণতান্ত্রিক চর্চার বিষয়। হয়তো এখনই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে পরবো না। আমরা ফিরে গিয়ে মতামত দিতে পারবো। আমরা এ বিষয়ে কোনো বিশেষ দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে চাই না। সামগ্রিকভাবে দেখতে চাই।

রুদ্ধদ্বার বৈঠকে কি বিষয়ে আলোচনা হয়েছে জানতে চাইলে বলেন, সেখানে রামপাল পাওয়ার প্ল্যান্টের উপর একটি প্রেজেন্টেশন দিয়েছে। তারা বলেছে পরিবেশ অধিদপ্তর যে ৫৯টি শর্তসাপেক্ষে ছাড় দিয়েছে তার মধ্যে ৫০টি বিষয়ে কাজ শুরু করা হয়েছে।
অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, আমি এখনই কোনো বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। তারা দেখতে ডেকেছে। দেখলাম পরে এ বিষয়ে মতামত দেওয়া হবে।

অধ্যাপক শামসুল আলম ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা। তেল-গ্যাস ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির সব আন্দোলনের সঙ্গে যুক্ত। তিনি কোনো সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করছেন এমন প্রশ্নের জবাবে অধ্যাপক শামসুল আলম বলেন, আমাকে কোনো সংগঠনের নামে ডাকেনি। আমাকে ডেকেছে অধ্যাপক শামসুল আলম হিসেবে। কোনো সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করছি না।

দুপুরে স্থানীয় জনগণের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রতিমন্ত্রী। সভায় রামপাল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহযোগী ও অঙ্গ সংগঠনগুলো মিছিলে যোগ দেয়।

বাংলাদেশ সময়: ১৪২৭ ঘণ্টা, নভেম্বর ১৯, ২০১৫
এসআই/এএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।