ঢাকা, রবিবার, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৩ অক্টোবর ২০২৪, ০৯ রবিউস সানি ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

নেসকোর ১৫.৩০, ডিপিডিসির ৬.২৪ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১১৪০ ঘণ্টা, অক্টোবর ৪, ২০১৭
নেসকোর ১৫.৩০, ডিপিডিসির ৬.২৪ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব ছবি: ডিএইচ বাদল/বাংলানিউজ

ঢাকা: শেষ হলো বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির আবেদনের উপর গণশুনানি। শুনানি শেষে তিন মাসের মধ্যে সিদ্ধান্ত জানানো হবে বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিইআরসি) চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলাম।

এবারের প্রস্তাবের সবক’টি বিতরণ কোম্পানি বিদ্যুতের দামের সঙ্গে ডিমান্ড ও সার্ভিস চার্জ বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। এতে লাইফ লাইন গ্রাহকের(কম বিদ্যুৎ ব্যবহারকারী গ্রাহকের) বিদ্যুতের বিলের বাইরেও বাড়তি আরো চল্লিশ টাকা পর্যন্ত গুণতে হতে পারে।

বিদ্যুতের দাম নির্ধারণের একক এখতিয়ার সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান বিইআরসির। নিয়ম হচ্ছে, সংশ্লিষ্ট সংস্থা বা কোম্পানি তাদের প্রস্তাব জমা দেবে এবং কমিশনে তাদের প্রস্তাবের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরবে। কমিশন আয়-ব্যয় যাচাই করে কমিশনের বৈঠকে তা তুলবে। কমিশন অনুমোদন দিলে গণশুনানিতে এ বিষয়ে সকল পক্ষের যুক্তিতর্ক শোনা হবে। এরপর ‘নো প্রফিট, নো লস’ পদ্ধতিতে দর নির্ধারণ কো হবে।

গত ২৫ সেপ্টেম্বর শুরু হয় বিদ্যুতের দাম বৃদ্ধির উপর গণশুনানি। প্রথম দিনে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (পিডিবি) পাইকারি দাম বৃদ্ধির প্রস্তাবের উপর শুনানি করা হয়। পিডিবি পাইকারি বিদ্যুতের দাম ৮৭ পয়সা (ইউনিট) হারে বাড়াতে চায়। অন্যদিকে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ইউনিট প্রতি ৫৭ পয়সা হারে ‍বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।  

পিডিবি হচ্ছে বিদ্যুতের একক বিক্রেতা। উৎপাদন যারাই করুক তারা তা পিডিবির কাছে বিক্রি করে থাকে। আর পিডিবি তা বিতরণ কোম্পানিগুলোর কাছে পাইকারি দরে বিক্রি করে থাকে।  

২০১৬-১৭ অর্থবছরে বিদ্যুতের গড় উৎপাদন-ব্যয় ইউনিট প্রতি ৫ দশমিক ৭২ টাকায় গিয়ে দাঁড়িয়েছে। আর বর্তমানে ইউনিট প্রতি ৪ দশমিক ৮৭ টাকা হারে বিক্রি করা হচ্ছে।  প্রতি ইউনিটে লোকসান হচ্ছে ৮৭ পয়সা। এ কারণেই পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো প্রয়োজন।

এ বিষয়ে জিএম বাণিজ্যিক পরিচালন বলেন, ভর্তুকি দেওয়ার কথা বলা হলেও ভর্তুকি না দিয়ে ঋণ দেওয়া হয়েছে। এতে ২০০৬-০৭ অর্থবছর থেকে এখন পর্যন্ত ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৯ হাজার ৬'শ ১০ কোটি টাকা। যার সুদের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৪ হাজার ৪'শ ৮১ কোটি টাকা। এতে করে দিনকে দিন পিডিবির সংকটে বেড়েই চলেছে।

সংকট কাটতে অবচয় তহবিল থেকে ব্যয় পরিচালনা করতে হচ্ছে। অবচয় তহবিলে ২২ হাজার ৩'শ ৭০ কোটি টাকা জমা থাকার কথা। কিন্তু জমা আছে মাত্র ৩'শ ১৯ কোটি টাকা মাত্র। অর্থের সংকটের কারণে ওভারহোলিং ও রক্ষণাবেক্ষণের নিয়মিত কাজ ব্যাহত হচ্ছে।

২৬ সেপ্টেম্বর পিডিবির খুচরা দাম বৃদ্ধির উপর গণশুনানি হয়। পিডিবি একসময় সারাদেশে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্ব পালন করেছে। এখন নতুন নতুন কোম্পানি গঠিত হওয়ায় শুধু ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম ও সিলেটের শহরাঞ্চলে বিদ্যুৎ বিতরণের দায়িত্বে রয়েছে তারা। পিডিবি তার বিতরণ এলাকায় ১৪.৫০ শতাংশ হারে দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে। তবে বিইআরসি কারিগরি কমিটি ১০.৬৫ শতাংশ বৃদ্ধির পক্ষে মত দিয়েছে।

২৭ সেপ্টেম্বর পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) প্রস্তাবের উপর গণশুনানির আয়োজন করা হয়। আরইবি ১০.৭৫ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করলেও ৭.১৯ শতাংশ বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি।  

আরইবি চেয়ারম্যান এ প্রসঙ্গে বলেন, ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩'শ ৫০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। এতে করে সমিতিগুলো তাদের ঋণের কিস্তি পরিশোধ করতে পারছে না। ঋণ ও সুদের কিস্তি বকেয়া পড়েছে ৬ হাজার ২'শ কোটি টাকা।  

আবাসিকে মিনিমাম বিল ৬৫ টাকা থেকে ২০ টাকা বাড়িয়ে ৮৫ টাকা, সার্ভিস চার্জ ১০ টাকা থেকে বৃদ্ধি করে ১৫ টাকা করার প্রস্তাব করেছে আরইবি।

২৮ সেপ্টেম্বর ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির (ডিপিডিসি) প্রস্তাবের উপর গণশুনানি নেওয়া হয়। ডিপিডিসি ইউনিট প্রতি ৪৩ পয়সা (৬.২৪ শতাংশ) বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। ক্রয়-বিক্রয়ের মধ্যে ঘাটতি থাকায় প্রতি ইউনিটে তারা দশমিক ৪৩ টাকা লোকসান দিচ্ছে। এ কারণে ২০১৬-১৭ অর্থবছরে ৩'শ ৫০ কোটি টাকা লোকসান হয়েছে। তবে বিইআরসির কারিগরি কমিটি ইউনিট প্রতি ১৫ পয়সা বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে।
 
ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানি (ডেসকো) ইউনিট প্রতি ৫২ পয়সা (৬.৩৪ শতাংশ) বাড়ানোর প্রস্তাব করে। রাষ্ট্রীয় এই কোম্পানির প্রস্তাবে বলা হয়, বিগত ৮ বছরে ৯ দফায় পাইকারি বিদ্যুতের দাম বাড়ানো হয়েছে ২০২.৯৪ শতাংশ। একই সময়ে খুচরা দাম বাড়ানো হয়েছে ৯০.৬০ শতাংশ। এতে ডেসকো আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তবে বিইআরসির কারিগরি কমিটি ৮ পয়সা হারে দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে।

খুলনা, ফরিদপুর ও বরিশাল অঞ্চলের বিতরণের দায়িত্বে থাকা ওয়েস্ট জোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি (ওজোপাডিকো) ১০.৩৬ শতাংশ দাম বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে। ইউনিট প্রতি যা দাঁড়ায় দশমিক ৬৬ টাকায়। তবে বিইআরসির কারিগরি কমিটি ইউনিট প্রতি ১১ পয়সা বাড়ানোর সুপারিশ করেছে।

রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের শহরাঞ্চল নিয়ে গঠিত নর্দার্ন ইলেকট্রিসিটি সাপ্লাই কোম্পানির (নেসকো) প্রস্তাবের শুনানির মাধ্যমে ৪ অক্টোবর গণশুনানি শেষ হয়। নেসকো ১৫.৩০ শতাংশ দাম বৃদ্ধির প্রস্তাব করেছে, যা ইউনিট প্রতি দাঁড়ায় ১ টাকা ৩ পয়সা। তবে বিইআরসির কারিগরি মূল্যায়ন কমিটি ইউনিট প্রতি ৮৯ পয়সা হারে দাম বাড়ানোর পক্ষে মত দিয়েছে।

সবক’টি বিতরণ প্রতিষ্ঠানই বলেছে, পাইকারি দাম বাড়ানো হলে যেন সেই হারেই বাড়ানো হয়।  
প্রতিদিনই কমিশনের চেয়ারম্যান মনোয়ার ইসলামসহ অপর চার সদস্য সকল পক্ষের মতামত মনোযোগ দিয়ে শোনেন। প্রতিদিনই শুনানিতে অংশ নেন ক্যাবের জ্বালানি বিষয়ক উপদেষ্টা অধ্যাপক শামসুল আলম। তার নানা রকম টেকনিক্যাল প্রশ্নে উত্তর দিতে হিমশিম খান সংশ্লিষ্টরা। অনেক সময় তার যুক্তির কাছে হারও মেনেছেন কেউ কেউ।

অধ্যাপক শামসুল আলম কোম্পানিগুলোর বোর্ডে বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তাদের থাকার বিপক্ষে জোরালো ও অকাট্য যুক্তি ‍তুলে ধরেন। তিনি বলেন, এতে অনেক সময় কোম্পানির স্বার্থের বাইরে সিদ্ধান্ত হয় কিন্তু জুনিয়র অফিসাররা সব জেনেবুঝেও তাদের মতামত ব্যক্ত করতে পারেন না।

কর্মকর্তারা একদিকে সরকার থেকে বেতন নিচ্ছেন আবার মিটিংয়ের যোগ দিলেই ১০ হাজার টাকা ভাতা নিচ্ছেন। এর যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন শামসুল আলম। তিনি শপিং মলের তুলনায় রাস্তার পাশের পান দোকানির বিদ্যুতের দাম বেশি হওয়ার ঘোর আপত্তি জানান।  

তবে এবারেই প্রথম ক্যাবের প্রস্তাবের ভিত্তিতে পাইকারি দাম কমানোর উপর গণশুনানি নিতে যাচ্ছে বিইআরসি। বৃহস্পতিবার (৫ অক্টোবর) সকাল ১০ টায় শুরু হবে এই শুনানি। সর্বশেষ ২০১৫ সালের আগস্টে বিদ্যুতের দাম গড়ে ২.৯৩ শতাংশ হারে বাড়ায় বিইআরসি। সেপ্টেম্বর মাস থেকে বর্ধিত মূল্য কার্যকর করা হয়। এর আগে ২০১৪ সালের মার্চে বিদ্যুতের পাইকারি ও খুচরা দাম বাড়ানো হয়।  

বাংলাদেশ সময়:  ১৭৩৭ ঘণ্টা, অক্টোবর ০৪, ২০১৭
এসআই/জেএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।