ঢাকা, মঙ্গলবার, ১০ ভাদ্র ১৪৩২, ২৬ আগস্ট ২০২৫, ০২ রবিউল আউয়াল ১৪৪৭

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

পেট্রোল পাম্পে তেলের সরবরাহ কমেছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ

গৌতম ঘোষ ও হোসাইন মোহাম্মদ সাগর | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০:৩৩, জুলাই ২৭, ২০২২
পেট্রোল পাম্পে তেলের সরবরাহ কমেছে ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ

ঢাকা: রাজধানীর ফিলিং স্টেশন বা পেট্রল পাম্পগুলোয় চাহিদার তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ সরবরাহ কমেছে অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেলের। ফলে গ্রাহকরা পেট্রোল বা অকটেন কিনতে এসে নিরাশ হয়ে ফিরছে।

কেউ কেউ পেট্রোলের পরিবর্তে নিচ্ছে অকটেন। কোনো কোনো পাম্প নির্দিষ্ট সময়ের আগেই আবার কোনোটা বিরতি দিয়ে চালু রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।  

এদিকে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন (বিপিসি) বলছে, ডিজেল অকটেনসহ পর্যাপ্ত জ্বালানি রয়েছে বাংলাদেশে। দেশে যে পরিমাণ তেল আছে এবং আমদানির পথে, তাতে ছয় মাসের জ্বালানি নিশ্চিত রয়েছে। যে পরিমাণ মজুদ রয়েছে, তা নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

বুধবার (২৭ জুলাই) রাজধানীর পুরান ঢাকার লক্ষীবাজার, গুলিস্তান, মৎস্য ভবন, শাহবাগ, মতিঝিল, রায়েরবাগ এলাকা ঘুরে জানা গেছে, পাম্পগুলোতে অকটেন ও ডিজেল পরিপূর্ণ থাকলেও পেট্রোল তুলনামূলক কম। কোনো কোনো পাম্পে পেট্রোল নেই। অনেক পেট্রোল পাম্প দুপুরের মধ্যে জ্বালানি শেষ হয়ে যাওয়ায় বন্ধ করে দিতে হচ্ছে। অকটেন, ডিজেলও পরিমাণে কম সরবরাহ করা হচ্ছে।  

সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, তাদের চাহিদার তুলনায় ২৫ থেকে ৩০ শতাংশ কম সরবরাহ করা হচ্ছে। ফলে পেট্রোল বা অকটেন কিনতে এসে নিরাশ হয়ে ফিরতে হচ্ছে মোটরসাইকেল চালকদের।  

প্রসঙ্গত, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়া ও বৈদেশিক মুদ্রার সঙ্কটের কারণে জুলাই মাস থেকে কৃচ্ছ্রতার পথে হাঁটতে শুরু করেছে বাংলাদেশ সরকার। সঙ্কটের জন্য বিশ্ববাজারে তেল এবং তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস বা এলএনজির চড়া দামকে দায়ী করা হচ্ছে। ডিজেল বাঁচাতে তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রগুলো আপাতত বন্ধ রেখেছে সরকার। ফলে বিদ্যুৎ ঘাটতিতে লোডশেডিং বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

বিশ্লেষকদের মতে, বাংলাদেশে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের সঙ্কট উদ্বেগজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে এবং এই সঙ্কট আরও বাড়বে। সঙ্কটের মুখে সরকার এখন ডিজেলের ব্যবহার কমানোর ওপর জোর দিচ্ছে। কিন্তু অকটেন-পেট্রোলসহ বিভিন্ন জ্বালানি তেলের তুলনায় ডিজেলের চাহিদা সবচেয়ে বেশি বাংলাদেশে।  

এ বিষয়ে রাজধানীর প্রথম পাম্প স্টেশন পুরান ঢাকার লক্ষীবাজারের কিউ. জি. সামদানি এন্ড কোং-এর ম্যানেজার মো. শাহীন বাংলানিউজকে বলেন, গত কয়েক মাস ধরে আমাদের চাহিদার তুলনায় কম অকটেন, পেট্রোল, ডিজেল সরবরাহ করা হচ্ছে। অনেক সুপারিশ করে অকটেন, পেট্রোল ও ডিজেল আনতে হয়। অকটেন ডিজেল পাওয়া গেলেও রশির ভাগ সময় পেট্রোল পাওয়া যায় না। আগে আমরা অকটেন সাড়ে পাঁচ হাজার লিটার, পেট্রোল সাড়ে ৪ হাজার লিটার, ডিজেল ৫ হাজার লিটার মোট ১৫ হাজার লিটার জ্বালানি আনতাম। এখন কোনোদিন ১০ হাজার লিটার, কোনোদিন ১২ হাজার লিটার পাচ্ছি।  

তিনি বলেন, এখন অনেক লোডশেডিং হচ্ছে ফলে ডিজেলের চাহিদা কয়েকগুণ বেড়েছে। সামনে হাসপাতাল, বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। চাহিদা অনেক বেশি, কিন্তু কিছু করার নাই। আমরা চাহিদা অনুযায়ী সরবরাহ করতে পারছি না। ফলে গত কয়েক মাসে ৬৫ টাকার ডিজেল ৮০ টাকায় ঠেকেছে। অকটেন ৮৯ টাকা এবং পেট্রোল ৮৬ টাকায় বিক্রি করছি।  

গুলিস্তানের রমনা ফিলিং স্টেশনের ম্যানেজার সবুজ বাংলানিউজকে বলেন, তিন মাসের বিক্রয় গড় করে আমাদের ৩০ শতাংশ জ্বালানি কম দিচ্ছে। ৪/৫ মাস ধরে চাহিদা অনুযায়ী পেট্রোল ও ডিজেল পাচ্ছি না। আগে ১৫ হাজার লিটার অকটেন পেতাম এখন সেখানে ৭৮০০ লিটার দিচ্ছে। ডিজেলও ১৫/১৬ হাজার ছিলো সেখানে পাচ্ছি ১০ হাজার ২০০ লিটার। আর পেট্রোলের কথা বললে বলে, ‘যদি থাকে তাহলে পাবেন’।  

তিনি বলেন, গত এক সপ্তাহ ধরে ডিজেলের চাহিদা অনেক বেড়েছে। আমরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত পাম্প খোলা রাখতাম এখন আর সেটা রাখতে হয় না। কারণ আগেই জ্বালানি শেষ হয়ে যায়। আমাদের মজুদের কোনো ব্যবস্থা নেই। আশা করছি শিগগিরই এ সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে।  

এদিকে বুধবার সকালে মৎস ভবন সংলগ্ন পেট্রোল পাম্পে তেল নিতে এসে ফিরে যান একাধিক ব্যক্তি। অনেকে আবার পেট্রোলের পরিবর্তে অকটেন নিয়ে ফিরে গেছেন।  

এ প্রসঙ্গে ভুক্তভোগী সুমিত আহমেদ বাংলানিউজকে বলেন, সকালে বাইকের জন্য পেট্রোল নিতে এসেছিলাম। তবে পেট্রোল পাইনি। এমনটা এর আগে হয়নি। পেট্রোল পাম্প থেকে বললো- পেট্রোল নেই, এর পরিবর্তে অকটেন নিয়ে যান। শেষ পর্যন্ত অকটেন নিয়ে বাইকে দেই।  

দুপুরের পর থেকে মৎস ভবন সংলগ্ন পেট্রোল পাম্পটি থেকে তেল দেওয়া কিছুক্ষণের জন্য বন্ধ রাখা হয়। এসময় অনেককে তেলের জন্য দীর্ঘ অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। এই ফিলিং স্টেশনের সংশ্লিষ্টরা জানান, চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকায় কিছুটা সমস্যা হচ্ছে। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, দ্রুত সমস্যার সমাধান হবে।

শাহবাগের মেঘনা মডেল ফিলিং স্টেশনে তেল পাওয়া গেলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা। আর এর ব্যাখ্যা হিসেবে চাহিদার তুলনায় সরবরাহ কম থাকার কথাই জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশনের (বিপিসি) চেয়ারম্যান এবিএম আজাদ জানিয়েছেন, পেট্রোল পাম্পগুলোয় গ্রাহকদের কম তেল দেওয়ার কোনো নির্দেশনা নেই। বাংলাদেশে যে পরিমাণ তেল রয়েছে এবং আমদানির পথে রয়েছে, তাতে ছয় মাসের জ্বালানি নিশ্চিত রয়েছে। আর কোনো তেল আমদানি না করলেও দেশে ৩২ দিনের ডিজেল ও ফার্নেস অয়েল রয়েছে। এর বাইরে ৪৪ দিনের জেট ফুয়েল রয়েছে। জ্বালানি তেলের আমদানি, মজুদ করা, সরবরাহ করার প্রক্রিয়াগুলো স্বাভাবিকভাবে চলমান রয়েছে। আগামী ছয় মাস এই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া চলবে। যে পরিমাণ মজুদ রয়েছে, তা নিয়ে আশঙ্কা করার বা আতঙ্কিত হওয়ার কোনো কারণ নেই।

জানা গেছে, বাংলাদেশে বছরে প্রায় ৫০ লাখ টন ডিজেল আমদানি করতে হয়। আমদানি করা ডিজেলের বড় অংশ পরিবহন খাত এবং কৃষিকাজে সেচের কাজে ব্যবহার হয়ে থাকে। বর্তমানে দেশে ডিজেল ৩১ হাজার ৮৩৫ টন, অকটেন ১২ হাজার ২৩৮ টন, পেট্রোল ২১ হাজার ৮৩৩ টন, জেট ফুয়েল ৬২ হাজার ৮৯১ টন এবং ফার্নেস অয়েল ৮৫ হাজার ৪১ টন মজুদ রয়েছে।

এছাড়া আগামী এক থেকে দুই দিনের ভেতর আরও ৫০ হাজার টন অকটেন আসবে। সেই সঙ্গে দুই দিনের ভেতর ৩০ হাজার টন ডিজেলের একটি চালান আসছে। ফলে দেশে জ্বালানি সংকট হওয়ার কোনো আশঙ্কা নেই।  

বাংলাদেশ সময়: ২০২৫ ঘণ্টা, জুলাই ২৭,২০২২
জিসিজি/এইচএমএস/এসএ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।