ঢাকা, শনিবার, ১২ শ্রাবণ ১৪৩১, ২৭ জুলাই ২০২৪, ২০ মহররম ১৪৪৬

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

‘কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক বিদ্যুতের বিকল্প নেই’

স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট  | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২৩১৭ ঘণ্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
‘কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক বিদ্যুতের বিকল্প নেই’

ঢাকা: কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদনে পারমাণবিক বিদ্যুতের বিকল্প নেই বলে জানিয়েছেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান। আগমী ১৬ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল বসানো হবে বলেও জানান তিনি ৷

শনিবার (১৭ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান নভোথিয়েটার মিলনায়তনে এক সেমিনারে এসব কথা জানান ইয়াফেস ওসমান।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি খাত নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্মরত সংবাদকর্মীদের সংগঠন এটমিক রিপোর্টার্স বাংলাদেশ (এআরবি) 'নতুন বিশ্ব বাস্তবতায় বাংলাদেশে পরমাণু শক্তির সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ' শীর্ষক এই সেমিনার আয়োজন করে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, 'সবচেয়ে কম খরচে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে হলে পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র প্রয়োজন। যে মধ্যপ্রাচ্য তেলে ভাসছে তারাও এখন নিউক্লিয়ার পাওয়ারের দিকে চলে যাচ্ছে। আগামীতে এই প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। '

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণ কাজের অগ্রগতি তুলে ধরে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী বলেন, 'আগামী ১৬ অক্টোবর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের দ্বিতীয় ইউনিটের রিঅ্যাক্টর প্রেসার ভ্যাসেল বসানো হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি এটি উদ্বোধন করবেন ৷'

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নিরাপত্তার বিষয়ে ইয়াফেস ওসমান বলেন, 'দেশের মানুষের নিরাপত্তা প্রধানমন্ত্রীর কাছে সবচেয়ে প্রধান গুরুত্বের বিষয়। নিরাপত্তার নিশ্চিত করার জন্য সর্বশেষ প্রযুক্তি যেটা কোরক্যাচার, সেটা বসানো হচ্ছে; যেটা কখনো ব্যবহার নাও হতে পারে। তবে যদি কোনো কারণে কোনো সমস্যা দেখা দেয় তাহলে এই কোরক্যাচার নিরাপত্তা দেবে বলে জানিয়েছে রাশিয়ান ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান। '

তিনি আরও বলেন, 'জাপানের ফুকুসিমা পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে সুনামির কারণে যে দুর্ঘটনা ঘটে তখন আমি সেখানকার পরিস্থিতি দেখতে গিয়েছিলাম। সুনামিতে ওই এলাকার ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছিল। কিন্তু বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপর্যয়ের কারণে একটি লোকও মৃত্যুবরণ করেননি, অসুস্থ হননি বলে তারা আমাকে জানিয়েছিলেন। এটা নিয়ে নানা অপপ্রচার হয় তখন। ফুকুসিমা নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্টে কোরক্যাচার ছিল না। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য এই ব্যবস্থাও রাখছেন। '

মন্ত্রী বলেন, 'আমরা ছাত্র-ছাত্রীদের রাশিয়াতে পাঠিয়ে সংশ্লিষ্ট বিষয়ের উপরে শিক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। তারা সেখান থেকে লেখাপড়া শেষ করে রাশিয়ার বিভিন্ন পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজ করে দেশে এসে রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের কাজে অংশ নিচ্ছে। রাশিয়ার বিশেষজ্ঞরা আমাদেরকে জানিয়েছেন এই ছাত্র-ছাত্রীদের ৫০ ভাগই এ গ্রেট মানের। আমার ভয় হয় যে মধ্যপ্রাচ্য তেলের উপরে ভাসছে তারা যখন নিউক্লিয়ার পাওয়ারের দিকে চলে যাচ্ছে তখন আমরা এই ছেলে-মেয়েদেরকে ধরে রাখতে পারব কিনা। '
 
সেমিনারে বিশেষ অতিথি হিসেবে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান এনডিসি, সম্মানিত অতিথি হিসেবে পরমাণু বিজ্ঞানী এবং এনপিসিবিএল'র ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের প্রকল্প পরিচালক ড. মো. শৌকত আকবর বক্তব্য রাখেন।

নিজের বক্তব্যে সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, 'কার্বন নিঃসরণ নিয়ন্ত্রণে সরকারের লক্ষ্য অর্জনে গতানুগতিক জীবাশ্ম জ্বালানি থেকে বেরিয়ে পারমাণবিকের মতো গ্রীন এনার্জিতে যেতে হবে। বিদ্যুৎকেন্দ্র চালুর দুই বছর পর থেকে রাশিয়ার ঋণ রিপেমেন্ট শুরু হবে বলে জানান তিনি।

ড. শৌকত আকবর বলেন, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিনিয়োগ ব্যয় কখনোই অন্য দেশের চেয়ে বেশি নয়। আর প্রতি ইউনিটের উৎপাদন খরচ সাড়ে চার টাকার বেশি হবে না বলে জানান তিনি।

শৌকত আকবর বলেন, 'সরকারের উন্নয়নের যে লক্ষমাত্রা, সেটা অর্জন করতে হলে গ্যাসের বিকল্প বিদ্যুৎ উৎপাদনের চিন্তা করতে হবে, কারণ দেখে গ্যাসের মজুদ কমে আসছে। সাশ্রয় এবং পরিচ্ছন্ন জ্বালানি হিসেবে পারমাণবিক প্রযুক্তি ছাড়া স্থানীয় গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুতের বিকল্প নেই। '

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নিউক্লিয়ার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শফিকুল ইসলাম সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন। এসময় তিনি বিভিন্ন উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচ এবং পারমাণবিক বিদ্যুৎ উৎপাদনের খরচের চিত্র তুলে ধরেন।

শফিকুল ইসলাম বলেন, 'দেশীয় গ্যাস ছাড়া অন্য যে কোনো উৎস থেকে বিদ্যুৎ উৎপাদনের চেয়ে পারমাণবিক বিদ্যুৎ অনেক বেশি সাশ্রয়ী। '

এটমিক রিপোর্টার্স বাংলাদেশ'র জেনারেল সেক্রেটার ফজলে রাব্বির সঞ্চালনায় সেমিনারে আলোচক হিসেবে সংগঠনের প্রেসিডেন্ট মো. আরিফুল সাজ্জাত বক্তব্য রাখেন। শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সংগঠনের ভাইস প্রেসিডেন্ট জিন্নাতুন নূর ।

আরিফুল সাজ্জাত বলেন, বিদ্যুৎ উৎপাদনের পাশাপাশি অন্যান্য খাতে কীভাবে পারমাণবিক শক্তির ব্যবহার করে সুবিধা পাওয়া যায় সে বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে কাজ করতে হবে।

বাংলাদেশ সময়: ২৩১৭ ঘন্টা, সেপ্টেম্বর ১৭, ২০২২
এসকে/এমএইচএম 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।