ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি

ঠেকানো যাচ্ছে না রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ চুরি!

এস এস শোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬০৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২২
ঠেকানো যাচ্ছে না রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ চুরি!

বাগেরহাট: কোনোভাবেই বন্ধ করা যাচ্ছে না বাগেরহাটের রামপাল কয়লা ভিত্তিক তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের যন্ত্রাংশ চুরি। প্রতিনিয়ত মূল্যবান যন্ত্রাংশ চুরির ঘটনা ঘটছে।

ফলে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়ছে গুরুত্বপূর্ণ এ প্রতিষ্ঠানটি।  

গেল ছয় মাসে চুরি হওয়া চার হাজার কেজি তামার তার এবং প্লেন শিট, টিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জামাদি জব্দ করেছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এ সময়ে চোর চক্রের অর্ধ শতাধিক সদস্যকে আটকও করা হয়েছে। তারপরও থেমে নেই চুরি। এ অবস্থায় নিরাপত্তা জোরদারের দাবি জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ চুরি শুধু চলতি বছর নয়, রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের জন্য ভূমি উন্নয়ন থেকেই শুরু ‍হয়েছে ছোটখাট চুরি। অবকাঠামো উন্নয়ন কাজ চলমান অবস্থায়ও চুরির ঘটনা ঘটেছে। চুরি বন্ধ ও রাষ্ট্রীয়ভাবে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানটির নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিদ্যুৎ কেন্দ্রের ভেতরে পুলিশ ক্যাম্প, আনসার ক্যাম্প, বেসরকারি নিরাপত্তা কর্মী রয়েছে। তারপরও সীমানা প্রাচীরের ভেতর থেকে তামার তার, জিআই পাইপ, লোহার পাইপ, অ্যালুমিনিয়াম টিন শিটসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম চুরি ও পাচার হয়ে আসছে।

জানা যায়, নির্মাণাধীন বিদ্যুৎ কেন্দ্রটির ৯১৫ একর সীমানার মধ্যে ৪৫০ একর জায়গায় প্রাচীর রয়েছে। এ প্রাচীরে নয়টি গেট রয়েছে। এছাড়া ডি ব্লকে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের ৩০০ একর জায়গায় তিন থেকে সাড়ে তিন ফুট উঁচু কাঁটাতারের বেড়ার ভেতরে যন্ত্রাংশ রাখা হয়েছে। তবে বেড়াগুলো খুবই নাজুক। বড় বড় আগাছা জন্ম নেওয়ায় জঙ্গলে পরিণত হয়েছে। এছাড়া সেখানে নিরাপত্তা কর্মীদের সংখ্যাও কম। ফলে প্রতিনিয়ত চুরির ঘটনা ঘটছে বলে  মনে করেন তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের আশপাশের বাসিন্দারা।

সংশ্লিষ্ট দপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের মে থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)-৬  চোর চক্রের ১৯ জনকে আটক করেছে। এসব অভিযানে দুই হাজার ১৫০ কেজি তামার তারসহ বিপুল লোহার পাইপ জব্দ করা হয়।
এছাড়া তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে দায়িত্বরত খুলনা আনসার ব্যাটালিয়ন-৩ অভিযান চালিয়ে ২৩ চোরকে আটক করেছে। এসময় প্রায় ৩৩ লাখ টাকার চোরাই মালপত্র উদ্ধার করা হয়। এর মধ্যে ১৬৪২ কেজি তামার তার ও জিআই পাইপ, কপ্টার টিনসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম রয়েছে।

খুলনা আনসার ব্যাটালিয়ন-৩ এর অধিনায়ক চন্দন দেবনাথ বলেন, তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের নিরাপত্তায় ৭৫ জন আনসার-ব্যাটালিয়ন সদস্য দায়িত্ব পালন করছেন। এলাকার আয়তনের তুলনায় নিরাপত্তা কর্মীর এ সংখ্যা অপ্রতুল। কেন্দ্রের পশ্চিম পাশের নদী পথ অরক্ষিত থাকাটাও চোরদের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করছে। তারপরও চুরির সঙ্গে জড়িত ২৩ জনকে গ্রেফতার করতে পেরেছি। এ সময় অন্তত ৩৩ লাখ টাকার মালামাল উদ্ধার করা হয়।

রামপাল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ শামসুদ্দিন বলেন, গেল দুই বছরে পুলিশসহ বিভিন্ন বাহিনীর হাতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রে চুরির সঙ্গে জড়িত শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করা হয়। এর মধ্যে দুই-চারজন জেল থেকে ছাড়া পেয়ে আবার চুরি করছেন। তবে চুরি আগের তুলনায় কমেছে।
রামপাল তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের উপ-ব্যবস্থাপক আনোয়ারুল আজিম বলেন, নিরাপত্তা জোরদার করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে। ভবিষ্যতে তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্র এলাকায় চুরি রোধে সবাই সতর্ক অবস্থায় রয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৫৫৮ ঘণ্টা, অক্টোবর ১২, ২০২২
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।