লন্ডন: এ যেন একখণ্ড বাংলাদেশ। পহেলা বৈশাখে রমনার বটমূল।
প্রতিবছরের মত এবারও বৈশাখী মেলাটি পরিণত হয়েছিল বিশ্ব-বাঙালির মিলনমেলায়। মেলায় যোগ দিতে ইউরোপ, আমেরিকা, মধ্যপ্রাচ্য এমন কি বাংলাদেশ থেকেও এসেছিলেন সংস্কৃতিপ্রেমী আনন্দপিপাসু বিপুল সংখ্যক মানুষ। দীর্ঘদিন পর পরিচিত বন্ধুবান্ধব একে অপরের সাক্ষাৎ পান মেলায়। সৃষ্টি হয় এক আবেগ আর আনন্দঘন পরিবেশ। পশ্চিমা ধারায় বেড়ে ওটা প্রজন্মের শেকড়মুখি হওয়ার একটি উপলক্ষ্যও যে এই মেলা--সেটাই লক্ষ্য করা গেছে।
উইভার্স ফিল্ডে স্থাপিত মঞ্চ থেকে দিনব্যাপী প্রচারিত সঙ্গীতানুষ্ঠান দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে উপভোগ করেন উপস্থিত দর্শক শ্রোতারা। আর এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বিলেতের খ্যাতিমান শিল্পীরাসহ উদীচী শিল্পী গোষ্ঠী ও সত্যেন সেন স্কুল অব পারফর্মিং আর্টস এর শিল্পীরা সঙ্গীত পরিবেশন করেন।
স্থানীয় বাংলা টিভি চ্যানেল ‘চ্যানেল এস’ মেলার এই দিনব্যাপী অনুষ্ঠানটি সরাসরি প্রচার করে। বিবিসি এশিয়ান নেটওয়ার্কও ছিল উইভার্সফিল্ডে।
সকাল ১১টায় বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা দিয়ে শুরু হয় বৈশাখী মেলার আনুষ্ঠানিকতা। রঙ-বেরঙের সাজে সজ্জিত হাজারও মানুষ বিভিন্ন রঙের ব্যানার, ফেস্টুন ও প্রতিকৃতি নিয়ে শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করেন। বাঙালি ছাড়াও শ্বেতাঙ্গ ও কৃষ্ণাঙ্গ অনেক তরুণ তরুণীকেও শাড়ী ও লুঙ্গি পড়ে শোভাযাত্রায় অংশ নিতে দেখা গেছে।
বাংলা বর্ণমালাখচিত বড় বড় ব্যানার ফেস্টুন ও বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার উপস্থিতি বৈশাখী মেলার মোভাযাত্রাকে করে তোলে আরও বর্ণময়, আরও আকর্ষণীয়।
তরুণ-তরুণী, মধ্যবয়সী এমকি অনেক বয়স্ক মানুষও সমবেত হয়েছিলেন বাঙালির এই প্রাণের উৎসবে। মেলা উপলক্ষে বিভিন্ন ধরনের স্টল বসেছিল বৈশাখী মেলাপ্রাঙ্গনে। এগুলোর মধ্যে ছিল বই, পেইন্টিং, বাঙালি পোশাক-আশাক, বাচ্চাদের খেলনা ইত্যাদি।
বিভিন্ন সামাজিক, সাস্কৃতিক ও সাহিত্য সংগঠনও নিজেদের প্রতিষ্ঠানের স্টল নিয়ে বসেছিল মেলায়। মেলাস্থলের অংশ ‘কারি-ক্যাপিট্যাল’ বলে খ্যাত ব্রিকলেনে বসেছিল সুস্বাদু বাঙালি খাবারের স্টল। অবাঙালি ভোজনরসিকদের উপচেপড়া ভিড় লক্ষ্য করা গেছে এসব স্টলে।
মেলায় উপস্তিত অনেকে বাংলানিউজের কাছে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এভাবে, `বাংলা সংস্কৃতি আজ বিশ্ব সংস্কৃতির অংশ, আজকের বৈশাখী মেলায় ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে বিপুল জনসমাগম এরই প্রমাণ দিচ্ছে। ’
সংস্কৃতিকর্মী ও কলামিস্ট ফারুক যোশি বসেছিলেন `পলল’ নামক একটি স্টল নিয়ে। বাংলানিউজকে তিনি বললেন, ‘বাঙালির অসাম্প্রদায়িক সাংস্কৃতিক চেতনা আজ বিশ্ববাসীকেও আকৃষ্ট করছে, এই চেতনা বিস্তৃত করার, বিশ্বময় ছড়িয়ে দেওয়ার সংগ্রাম আমাদের অব্যাহত রাখতে হবে। ’
বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে প্রবাসী বাঙালিদের সহযোগিতা কামনা করে সংস্কৃতি ও মানবাধিকার কর্মী আনসার আহমেদ উল্লা বলেন, ‘বিশ্বের অন্যতম সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ‘বাঙালিয়ানা’ আমাদের সাহস যোগায়’।
সন্ধ্যা ৭টায় আনুষ্ঠানিকভাবে মেলা কার্যক্রম শেষ হলেও বাংলাটাউন এলাকায় মধ্যরাত পর্যন্ত ছিল মানুষের উচ্ছলতা।
উল্লেখ্য, প্রতি বছর এক দিন বৈশাখী মেলা অনুষ্ঠিত হলেও এবারই প্রথম দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় বৈশাখী মেলা। ১৯ মে শনিবার মেলার প্রথম দিন হলেও এদিন শুধু প্রস্তুতিই চলে দিনব্যাপী। মানুষের কোন সমাগম ছিল না। দ্বিতীয় দিনই মেলায় নামে মানুষের ঢল। এবার দু’দিনব্যাপী মেলা হওয়ায় লন্ডনের বাইরের অনেকেই বিভ্রান্তিতে পড়েছিলেন বলে কেউ কেউ অভিযোগ করেছেন বাংলানিউজের কাছে। মেলা কমিটি মেলা পরিচালনায় সুশৃংখলার পরিচয় দিতে পারেননি বলেও অনেকে অভিযোগ করেছেন। এপ্রিলের মধ্যভাগে বাংলা নববর্ষ হলেও সুন্দর আবহাওয়ার আশায় লন্ডনে প্রতিবছর মে মাসের দ্বিতীয় বা তৃতীয় সপ্তাহে বৈশাখী মেলা বসে। আর এর মূল খরচটা বহন করে টাওয়ার হ্যামলেটস কাউন্সিল। ব্রিটেনে যে কয়টি উৎসবকে মূলধারায় স্বীকৃতি দেওয়া হয় বৈশাখী মেলা তারই একটি।
বাংলাদেশ সময়: ১৪৩৭ ঘণ্টা, মে ২১, ২০১২
সম্পাদনা: জাকারিয়া মন্ডল, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর