ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রবাসে বাংলাদেশ

পার্থে মঞ্চস্থ ‘জ্ঞান বৃক্ষের ফল’

শর্মিষ্ঠা সাহা, পার্থ(অস্ট্রেলিয়া) থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৩০৯ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১২
পার্থে মঞ্চস্থ ‘জ্ঞান বৃক্ষের ফল’

বাঙালি সংস্কৃতির একটি শক্তিশালী মাধ্যম মঞ্চনাটক। পাত্র-পাত্রীদের অভিনয় কুশলতার সঙ্গে আলো ও শব্দের বর্ণিল মিশ্রণে মঞ্চকে নাটকের মায়াময় জগতে নিয়ে যাওয়ার পারদর্শিতার ওপরেই মঞ্চনাটকের সফলতা নির্ভর করে।



বাংলা মঞ্চনাটকের ইতিহাস দীর্ঘ দিনের। নাটক পাগল বাঙালিই জন্ম দিয়েছে ‘নটি বিনোদিনী’র। বাংলার সীমানা ছাড়িয়ে সংস্কৃতির এ মাধ্যমটিতে অনেক দিন ধরেই কাজ করছেন প্রবাসী বাঙালিরাও।

এরই ধারাবাহিকতায় গত ১৯ মে সন্ধ্যায় অস্ট্রেলিয়ার পার্থের জন কার্টিন থিয়েটার হলে মঞ্চস্থ হয়েছে পার্থ প্রবাসী বাংলাদেশিদের দ্বিতীয় প্রযোজনা বাংলা মঞ্চনাটক ‘জ্ঞান বৃক্ষের ফল’। অভিনয় শিল্পী এবং কলাকুশলী মিলিয়ে ত্রিশ জন মঞ্চকর্মীর দীর্ঘ চারমাসের প্রচেষ্টার ফসল নাটকটি।

দুই বছর আগে পার্থের এ বাংলাদেশি সংস্কৃতি কর্মীরাই মঞ্চস্থ করেছিলেন প্রথম মঞ্চনাটক ‘দেওয়ান গাজীর কিচ্ছা’।

দুটি নাটকই মঞ্চস্থ করেছে বাংলাদেশ-অস্ট্রেলিয়া অ্যাসোসিয়েশন অব ওয়েস্টার্ন অস্ট্রেলিয়া (বাওয়া)।

প্রায় চারশ’ দর্শকের উপস্থিতিতে নাটকটি শুরুর আগে তাসনুভা খালেকের উপস্থাপনায় স্বাগত বক্তব্য রাখেন আহ্বায়ক নাজমুস সাদাত শিবলী এবং বাওয়া’র সভাপতি হাবিবুল হক আহমেদ।

জনপ্রিয় রুশ লেখক লিও তলস্তয়ের ‘ফ্রুটস অব কালচার’ অবলম্বনে রচিত বাংলা নাটক ‘জ্ঞান বৃক্ষের ফল’। বাংলায় রূপান্তর করেছেন পশ্চিমবঙ্গের বরেণ্য নাট্যাকর চন্দন সেন। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নাটকটির রূপান্তর এবং নির্দেশনা দিয়েছেন বাপি মাজহার।

পুজিবাদী অর্থনীতি সম্প্রসারণের সন্ধিক্ষণে কৃষকদের ওপরে সামন্তবাদী ও জার শক্তির অমানবিক নির্যাতনের বিরুদ্ধে তলস্তয় ছিলেন বরাবরই সোচ্চার। সামন্তবাদী শক্তির উপমহাদেশীয় প্রতিচ্ছবি জমিদারি প্রথা। চন্দন সেন তাই নাটকটির রূপান্তরকালে জমিদার এবং কৃষকের শ্রেণী সংগ্রামের চিত্র তুলে ধরেছেন।

নাটকটির মূল কাহিনী আবর্তিত হয়েছে জমিদার মহিউদ্দিন চৌধুরী, তার পরিবার ও বন্ধুদের ঘিরে। সংস্কৃতির  মায়াজালে আবৃত এ জমিদার জ্ঞানী পণ্ডিত হিসেবে পরিচিত হয়েও কূপমণ্ডুকতার চূড়ান্ত প্রমাণ দিয়েছেন প্ল্যানচেটে বিশ্বাস করে। পাশাপাশি অঢেল সম্পদের মালিক হয়েও দরিদ্র কৃষকদের কাছে দেওয়া ছয় বিঘা জমি বিক্রির প্রতিশ্রুতি রাখতে চাননি।

এ ঘটনাটি নাড়া দেয় তার বাড়িতে ছেলেবেলা থেকে আশ্রিতা চাষীর ঘরের মেয়ে কুসুমকে। আশ্রয়দাতা জমিদারের বিরুদ্ধে সরাসরি না গেলেও বুদ্ধি দিয়ে সে জমিটা পাইয়ে দেয় কৃষকদের। এভাবেই ধনী ও দরিদ্রের, জমিদার এবং কৃষকের শ্রেণী দ্বন্দ্বের চিত্র ফুটে উঠেছে নটিকটিতে।

প্রায় প্রতিটি দৃশ্যের শেষে করতালির মধ্য দিয়ে দর্শকরা অভিনন্দিত করেন নাটকের পাত্র-পাত্রী এবং কলাকুশলীদের। দুই ঘণ্টার এ নাটকে অভিনেতা-অভিনেত্রীদের সাবলীল পদচারণা দেখে মনেই হয়নি, তারা অপেশাদার নাট্যকর্মী- বহু দশর্কই এমন মন্তব্য  করেছেন। সার্বিকভাবে প্রবাসে এমন প্রচেষ্টা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার বলেও উল্লেখ করেন তারা।

নাটকের বিভিন্ন চরিত্রে রূপদান করেছেন, মোয়াম্মের রেজা বিন ওয়ালী, দিশারী সরকার, আরিফ কোরেশী, প্রিয়ঙ্কর ঘোষ, নাবিল জাহাঙ্গীর, সোয়েব আহমেদ  রোমেল, হাসিনা মুনমুন, আরিফ হোসেন সরকার, শর্মিষ্ঠা সাহা,  মো: রবিউল হাসান রবিন, মুহাম্মদ খালেদুজ্জামান হিমেল, ফারহানা মাহতাব, মোহাম্মদ বারী রনী, পলাশ বড়ুয়া, বিদ্যুৎ কুমার বণিক, শামসুল ইসলাম পান্না, বিশ্বজিৎ বসু ও আশেকুল হক রাজ।

নেপথ্যে ছিলেন মিতালি মনজুর, নওশিন আজিজ, তামান্না রাব্বি, ফারহানা সুমী, শাওলি শহিদ, সমরজিৎ দেব, লাবনী ওমর, তানভির শহিদ, আফনান খন্দকার, মুহাম্মদ গণি, শিপলু কিবরিয়া এবং বাপি মাজহার।

বাংলাদেশ সময় : ১৩০০ ঘণ্টা, মে ২৯, ২০১২
সম্পাদনা : অশোকেশ রায়, অ্যাসিসট্যান্ট আউটপুট এডিটর

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।