ম্যানচেস্টার: ``সিলেটিরা পড়ালেখা শিখে ভদ্র হয়ে গেছেন`` বলে কটূক্তি করায় বিলেতে বসবাসরত সিলেটিদের তোপের মুখে পড়েছেন এটিএন বাংলার চেয়ারম্যান মাহফুজুর রহমান।
গত ৩০ মে লন্ডনের বাংলা মিডিয়ার সামনে এক প্রেস কনফারেন্সে মাহফুজুর রহমান বলেন, “দেশে থাকা সিলেটি মানুষেরা এখন পড়ালেখা শিখে ভদ্র হয়ে গেছেন।
এটিএন বাংলা ইউকে ওই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে।
লন্ডন থেকে প্রকাশিত বাংলা টাইমস নামের একটি বাংলা পত্রিকায় এ খবর ছাপানো হয়। এ নিয়ে ফেসবুক, টুইটারেও চলে এটিএন বাংলা ইউকে এবং মাহফুজুর রহমানের ওপর ধবল ধোলাই।
অনেকে ফেসবুক কমেন্টে লেখেন, তার (মাহফুজুর রহমান) এই বক্তব্য আঞ্চলিকতাকে উস্কে দিতে পারে, এই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি সিলেটের মানুষকে অপমান করেছেন। এ জন্য তার ক্ষমা চাওয়া উচিত।
অনেকে আবার টুইট করেছেন, মাহফুজুর রহমান এই বক্তব্যের মাধ্যমে কি এটাই বোঝাতে চেয়েছেন যে, সিলেটের লোকেরা আগে অশিক্ষিত ও অভদ্র ছিল?
এমন বক্তব্যে সয়লাব এখন ইন্টারনেটের বিভিন্ন সামাজিক বাংলা সাইটগুলো।
পত্রিকায় প্রকাশিত খবরে কমিউনিটিতে যে বিরুপ প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়, তা সামাল দিতে ওই সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেটের এমন অনেক প্রবীণের সাক্ষাতকার প্রচার করে এটিএন বাংলা ইউকে।
ওই প্রবীণরা বলেন, মাহফুজুর রহমান যেভাবে কথাটা বলেছেন, সেভাবে পত্রিকায় প্রকাশ হয়নি। এ জন্যই ভুল বোঝাবুঝি। এটা উদ্দেশ্য প্রণোদিত এবং আঞ্চলিকতাকে উস্কে দেওয়ার জন্যই এমন অপপ্রচার। তিনি যা বলেছেন, তা সিলেটি কমিউনিটির ভালোর জন্যই বলেছেন।
এরপর সমালোচনার মুখে জার্মানি থেকে মাহফুজুর রহমান টেলিফোনে তার বক্তব্যের ব্যাখ্যা দেন, যা এটিএন বাংলা ইউকে প্রচার করে। তিনি আরো বলেন, একটি মহল উদ্দেশ্যমূলকভাবে এমন মিথ্যা, ভ্রান্ত খবর ছড়াচ্ছে।
টেলিফোন বার্তায় তিনি বলেন, ‘এদেশে বেড়ে ওঠা সিলেটি কমিউনিটির নতুন প্রজন্ম এবং মুরুব্বীরা শুদ্ধ বাংলা ভালো করে বোঝে না, তাই তাদের কথা বিবেচনা করে এটিএন বাংলা ইউকে সম্পূর্ণ সিলেটি ভাষায় একটি সংবাদ পরিবেশনের ব্যবস্থা করবে। ’
সেদিনের প্রেস কনফারেন্সে উপস্থিত ছিলেন বিলেতে বসবাসরত সিলেটের আফসার উদ্দিন। তিনি এ ব্যাপারে বলেন, ভাই, আমি অনুষ্টানের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত ছিলাম কিন্তু পত্রিকায় যা চাপা হয়েছে বা যে ধরনের কথা মানুষের মুখেমুখে বলাবলি হচ্ছে এমন কিছু আমি নিজের কানে শুনিনি।
এ ব্যাপারে এটিএন বাংলা ইউকের সিইও হাফিজ আলম বক্স বলেন, এটা নিতান্তই ভাষাগত সমস্যার কারণে বুঝতে সমস্যা হয়ে থাকতে পারে। এই অপপ্রচার উদ্দেশ্যমূলক।
হাফিজ আলম বলেন, আমরা ইতিমধ্যেই প্রেস কনফারেন্সে ধারন করা ভিডিও ফুটেজ কমিউনিটির নেতৃবৃন্দকে দেখিয়েছি। তারা এ ধরনের কোনো বক্তব্য পাননি।
অবশ্য মাহফুজুর রহমান সিলেটিদের কাছে ক্ষমা চেয়ে বলেছেন, সিলেটের মানুষকে আঘাত করে এমন কোনো বক্তব্য আমি দেইনি। তারপরও যদি আমার কোনো কথায় সিলেটের মানুষ কষ্ট পেয়ে থাকেন, আমি এর জন্য ক্ষমা প্রার্থী।
এ কথা জানিয়েছেন হাফিজ আলম বকস্।
অন্যদিকে সিলেটিদের সম্পর্কে মাহফুজুর রহমানের মন্তব্যের প্রতিবাদে সিলেটের ক্যাবল অপারেটররা সেখানে এটিএন বাংলা ও এটিএন নিউজ চ্যানেল বন্ধ রেখেছে।
উল্লেখ্য, ওই একই সংবাদ সম্মেলনে হত্যাকাণ্ডের শিকার সাংবাদিক দম্পতি সাগর-রুনি বিষয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেওয়ায় দেশে-বিদেশে সমালোচনার ঝড় বইছে। দেশের সাংবাদিকরা তাকে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন।
বাংলাদেশ সময়: ০১৩০ ঘণ্টা, জুন ০৭, ২০১২
এজে