ঢাকা, শুক্রবার, ২৯ ফাল্গুন ১৪৩১, ১৪ মার্চ ২০২৫, ১৩ রমজান ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

অভিন্ন আইনের পথে ইউরোপ, কঠিন হচ্ছে আশ্রয় আইন

সাগর আনোয়ার, জার্মানি থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪১৩ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৫
অভিন্ন আইনের পথে ইউরোপ, কঠিন হচ্ছে আশ্রয় আইন সংগৃহীত ছবি

পুরো ইউরোপের আশ্রয় ও অভিবাসন প্রত্যাশী এবং একই সঙ্গে আবেদন প্রত্যাখাতদের জন্য অভিন্ন আইন প্রণয়ন করতে যাচ্ছে ইউরোপীয় কমিশন।
   
খসড়া আইন মতে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোর মধ্যে পারস্পরিকভাবে আশ্রয় প্রার্থীদের ফেরত পাঠানোর জন্য অভিন্ন আদেশ স্বীকৃত হবে।

অর্থাৎ যদি একটি ইইউ দেশ কোনো অভিবাসন প্রত্যাখ্যাত ব্যক্তির জন্য বহিষ্কারের আদেশ জারি করে, তবে সেটি অন্যান্য ইইউ দেশেও স্বীকৃত হবে। এতে আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য আগের ফাঁকফোকর বন্ধ হয়ে যাবে। বর্তমানে অনেক অভিবাসী যারা ইইউ থেকে চলে যাওয়ার নির্দেশ পেয়েছেন, তারা অন্য সদস্য দেশে পালিয়ে গিয়ে নতুন করে আশ্রয়ের আবেদন করেছেন। নতুন আইনের মাধ্যমে এটি আর সম্ভব হবে না।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাংলাদেশি রাজনৈতিক কর্মী জামিল খান ২০১৬ সালে (ছদ্মনাম) রাজনৈতিক আশ্রয়ের জন্য আবেদন করেছিলেন জার্মানিতে। জার্মানিতে তার রাজনৈতিক আবেদন প্রত্যাখ্যাত হওয়ায় পরে তিনি ফ্রান্সে গিয়ে আবার রাজনৈতিক বিবেচনায় থেকে যাওয়ার আবেদন করেন। ফ্রান্স জামিল খানের আবেদন গ্রহণ করায় তিনি এখন ফ্রান্সে পরিবারসহ বসবাস করছেন।  

একই ভাবে সিলেটের তরুণ হৃদয় বহু চড়াই উতড়াই পেরিয়ে গ্রিস থেকে থেকে ইতালি, আবার ইতালি হয়ে ফ্রান্সে রাজনৈতিক আবেদন করেছিলেন। কিন্তু ফ্রান্সে তার রাজনৈতিক আবেদন প্রত্যাখাত হওয়ায় এখন তিনি পর্তুগাল বসবাস করছেন।  

এভাবে শুধু জার্মানিতেই প্রায় দুই লাখ ২০ হাজার অবৈধ আশ্রয় প্রার্থী অভিবাসী বসবাস করছেন। যাদের সরকার চাইলেও দেশে ফেরত পাঠাতে পারছে না। পুরো ইউরোপে এ সংখ্যা কয়েকগুণ বেশি।

তবে এভাবে এক দেশে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করে প্রত্যাখাত হওয়ার পর অন্য দেশে গিয়ে আবোর আশ্রয়ের সুযোগ একেবারে বন্ধ হওয়ার প্রস্তাবই উঠেছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সংসদে।  

গত মঙ্গলবার (১১ মার্চ) ইউরোপীয় কমিশনার ম্যাগনাস ব্রুনার সংসদে এ নীতিমালার চূড়ান্ত খসড়া প্রস্তাব পেশ করেন। নতুন আইন অনুসারে (ইইউ) প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের দ্রুত বহিষ্কার করা হবে। এমনকি এ প্রস্তাবে, ইইউ-এর বাইরে ফেরত পাঠানোর কেন্দ্র (ডিপোর্টেশন সেন্টার) স্থাপনের কথাও বলা হয়েছে। তবে এ পরিকল্পনার বিরুদ্ধে সমালোচনাও উঠেছে।

ইইউ কমিশনার ম্যাগনাস ব্রুনার বলেন, ইউরোপীয় আশ্রয় ও অভিবাসন নীতির অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অংশ এখন পর্যন্ত অনুপস্থিত ছিল। এটি হলো ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা। আমরা একটি সমন্বিত ফেরত পাঠানোর পরিকল্পনা উপস্থাপন করেছি, যা ন্যায়সংগত, তবে কঠোর।  

তিনি বলেন, বর্তমানে যারা ইইউ ছাড়তে বাধ্য, তাদের প্রতি পাঁচজনের মধ্যে একজন বাস্তবে ইইউ ত্যাগ করে। এ পরিস্থিতি পুরো অভিবাসন ও আশ্রয় ব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিচ্ছে।  

সম্প্রতি ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর মধ্যে বিশেষ করে জার্মানির পক্ষ থেকে চাপ ছিল, যাতে অবৈধ আশ্রয় প্রার্থীদের দ্রুত ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সমগ্র ইউরোপের জন্য প্রযোজ্য আরও কঠোর নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়।

নতুন প্রস্তাবিত খসড়া আইনকে স্বাগত জানিয়ে জার্মান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ন্যান্সি ফেজার জার্মান গণমাধ্যমকে বলেছেন, আমাদের ইউরোপীয় স্তরে কার্যকর একটি ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা দরকার। এতে প্রধানত অবৈধ অভিবাসীদের বাধ্যবাধকতা ও শাস্তির দিকটি নিশ্চিত করতে হবে।
এছাড়া খসড়া আইনে প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীরা যদি কর্তৃপক্ষকে সহযোগিতা না করে, তবে তাদের বিরুদ্ধে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ রয়েছে। যেমন, পরিচয়পত্র জব্দ করা, মোবাইল ফোন থেকে তথ্য সংগ্রহ কিংবা প্রয়োজনে আটকও করা যাবে।  
ইইউ কমিশনার ব্রুনার আরও বলেছেন, ভবিষ্যতে ইইউ-জুড়ে অভিন্ন নিয়ম অনুযায়ী অভিবাসীদের আটক করে ফেরত পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া সহজতর করা হবে, বিশেষত যদি তারা নিরাপত্তার জন্য হুমকি হয়ে ওঠে।

এছাড়া প্রথমবারের মতো ইইউ কমিশন প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের ইইউ-এর বাইরের অন্য কোনো দেশের কারাগারে বা আশ্রয়কেন্দ্রে পাঠানোর প্রস্তাবও করেছে। এখন পর্যন্ত আশ্রয় প্রার্থীদের কেবল তাদের নিজ দেশ বা সেই দেশগুলোতে ফেরত পাঠানো হতো যেখানে তারা দীর্ঘ সময় অবস্থান করেছেন। তবে, অনেক দেশ অভিবাসীদের ফিরিয়ে নিতে অস্বীকৃতি জানায়। নতুন আইন সেই পরিস্থিতির জন্যও প্রস্তুতি হিসেবে তৃতীয় দেশকে বেছে নিচ্ছে।  

অন্যদিকে ইইউ প্রধান উরসুলা ফন ডের লেয়েন জানিয়েছেন, আমরা আমাদের নিরাপত্তার ব্যাপারে আরও কঠোর হব, তবে আন্তর্জাতিক আইন ও মৌলিক অধিকারের প্রতি সম্মান জানিয়ে কাজ করব।

তবে ইউরোপীয় সংসদের গ্রিন পার্টির সংসদ সদস্য এরিক মার্কয়ার্ড গণমাধ্যমে এ কঠোর নীতির সমালোচনা করেছেন। তিনি বলেছেন, এতে করে শরণার্থীদের ন্যায়বিচারের অধিকার ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।  

উল্লেখ্য, নতুন প্রস্তাবটি বাস্তবায়নের জন্য ইইউয়ের ২৭টি সদস্য রাষ্ট্র এবং ইউরোপীয় সংসদ উভয়ের অনুমোদন লাগবে। এ নীতি বার্লিনে চলমান কোয়ালিশন সরকার গঠনের আলোচনাতেও রয়েছে। এটি বাস্তবায়নে আরও বছর খানেক লাগতে পারে।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০৫ ঘণ্টা, মার্চ ১৪, ২০২৫
এসআই

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।