ঢাকা, শুক্রবার, ১৭ কার্তিক ১৪৩১, ০১ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ রবিউস সানি ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

বার্লিন থেকে জাহিদুর রহমান

‘সেই সংগ্রামই সাফল্যের পথপ্রদর্শক’

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ০৮১৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
 ‘সেই সংগ্রামই সাফল্যের পথপ্রদর্শক’

বার্লিন (জার্মানি) থেকে: ছিলেন রেস্তোঁরার সামান্য ওয়েটার। এখন নিজেই একাধিক বিশাল রেস্টুরেন্টের মালিক।

চড়েন লেটেস্ট মডেলের দামি বিএমডব্লিউ গাড়িতে। তবে এতো কিছু হওয়ার পরও ভোলেননি নিজের প্রবাস জীবনের সেই সংগ্রামের কথা। অকপটেই বলেন, ‘সেই সংগ্রামই আমার সাফল্যের পথপ্রদর্শক’।

তিনি মুন্সীগঞ্জ জেলার শ্রীনগরের মদনখালি গ্রামের মোস্তাক খান। এখন ইউরোপের জার্মানিতে সবাই তাকে চেনেন সংগ্রামী সফল ব্যবসায়ী হিসেবে।

বাবা আব্দুল মান্নান। জগন্নাথ কলেজ থেকে হিসাব বিজ্ঞান বিষয়ে মাস্টার্স পরীক্ষা দিয়ে ২০০৪ সালে পর্যটক হিসেবে পাড়ি জমান জার্মানিতে। ভাগ্য অন্বেষণে কাজ নেন রেস্টুরেন্টে সামান্য ওয়েটার হিসেবে।

নিজের সততা আর একাগ্রতায় পরে ভাগ্যে জোটে সোনার হরিণ জার্মানির নাগরিকত্ব। তারপর পেয়ে যান ড্রাইভিং লাইসেন্স। একের পর এক সাফল্যের দুয়ার খুলে যাওয়ায় নিজেই উদ্যোগী হয়ে শুরু করেন ব্যবসা।

মোস্তাক খান বাংলানিউজকে বলেন, ‘সততা ছিলো। তাই বিশ্বাস ছিলো, আমাকে জয়ী হতেই হবে। আর এটাও ভাবনায় ছিলো, যদি ব্যবসা কোনো রকম হোঁচট খায়, তবে আমার সঞ্চয়ের সবকিছুই বরবাদ হয়ে যাবে’।

সেটা মাথায় রেখেই নতুন উদ্যমে বার্লিনের ক্রইসবার্গ এলাকায় ‘আরমান’ নামে চালু করেন তখনকার সময়ে বাঙালিদের গড়া সবচেয়ে বড় রেস্টুরেন্টটি। যেখানে একসঙ্গে দুইশ’ জন ভোজনবিলাসী খাবার গ্রহণ করতে পারেন।

রেস্টুরেন্টটিতে শুরু থেকেই পরিবেশন করা হতে থাকে রকমারি স্বাদের ভারতীয় নানা পদের খাবার।

তবে কি ভারতীয়রাই এ রেস্টুরেন্টের বড় ক্রেতা?

‘একেবারে না’-সহাস্যে জবাব দেন মোস্তাক খান। আসলে ইন্ডিয়ান চিকেন কারি, লাম্ব, ভেজিটেবল, ফিস, তন্দুরি, গ্রিল, রুটিসহ নানা পদের এসব খাবারের বড় ক্রেতাই ছিলেন জার্মান তথা ইউরোপ আর আমেরিকার নাগরিকরা।

গুণগত মান, স্বাদে-গন্ধে ঐতিহ্য আর ভালো ব্যবহারের মাধ্যমেই এই রেস্টুরেন্টের খাবার মন জয় করে ভিনদেশি নাগরিকদের। তারপর আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি উদ্যমী এই তরুণকে।

এর সফলতায় চালু করেন মেক্সিকান খাবারের আরেকটি রেস্টুরেন্ট।

যে ছেলেটি এক সময় ভাগ্য অন্বেষণে ভিনদেশে এসেছিলেন, আজ কর্মগুণে তার হাতে গড়া রেস্টুরেন্টেই স্বদেশি ছাড়াও কাজ করেন জার্মানি, ভারত, পাকিস্তান, যুগোশ্লোভিয়া ও বুলগেরিয়ার নাগরিকরা।

ক্রেতাদের সবার কাছে প্রিয় যেমন এই রেস্টুরেন্ট, তেমনি প্রিয় রেস্টুরেন্টের মালিক মোস্তাক খান। যিনি এক সময় ঘণ্টা ধরে ওয়েটারের কাজ করে মাত্র ৫ ইউরো আয় করতেন, সেই ব্যক্তিটিই আজ চালান লেটেস্ট মডেলের বিএমডব্লিউ গাড়ি।

মোস্তাক খানের মতে, ‘আমার কারণে ভিনদেশি অনেকেই বাংলাদেশকে চেনেন। আর এটাই আমার গর্ব। তাদের কাছে আমি বাংলাদেশি’।

মোস্তাক খান এখন বিয়ের জন্য পাত্রী খুঁজছেন। তার এ স্বপ্ন পূরণ হলে পরবর্তী স্বপ্ন বাস্তবায়নে হাত দেবেন তিনি।

সে স্বপ্ন হচ্ছে, নিজ দেশেই আন্তর্জাতিক মানের খাবারের দোকান খোলা।

বাংলাদেশ সময়: ০৮১৫ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
জেডআর/এএসআর
** আস্থার সংকটে বাংলাদেশ–জার্মানি সম্পর্ক!

** বিমানবন্দরে বাংলাদেশের হাসি

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।