বার্লিন (জার্মানি) থেকে: জরুরি প্রয়োজনে দূতাবাসে ফোন করেও সংশ্লিষ্টদের পাওয়া যায় না। জাতীয় পতাকা দূরে থাক, দূতাবাসের পরিচয় বলতে এ ফোর সাইজের একটি সাদা কাগজ!
কর্মস্থলে কদাচিৎ কাউকে পাওয়া গেলে তাও ভাগ্যের ব্যাপার বলে মনে করেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা।
এমন হ-য-ব-র-ল অবস্থা ইউরোপের সমৃদ্ধ দেশ জার্মানিতে বাংলাদেশ দূতাবাসের।
প্রবাসীরা বলছেন, দূতাবাসের কর্মকর্তারা মন চাইলে কেউ অফিসে আসেন। আবার ছুটির ঘণ্টা বাজার আগেই চলে যান। এভাবে যাতে অফিসে আসতে না হয়, তা নিশ্চিত করতে এই স্টেশন একেবারে ছেড়ে যাবার জন্যে দরখাস্ত দিয়ে রেখেছেন এক কর্মকর্তা।
অন্যজনের বদলি হয়েছে একবছর আগে। কিন্তু তার স্থলিভিষিক্ত কেউ না হওয়ায় ফিরতে পারছেন না তিনি। তবে এর বাইরে দুইজনের একজন হৃদরোগে, অন্যজন প্রথমে চোখের সমস্যা পরে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় দু’মাস ধরে কর্মস্থল ছাড়া।
১৯৭৪ সালে জার্মানিতে বাংলাদেশ দূতাবাস স্থাপন করা হয়। তবে অনুমোদিত জনবল নির্ধারিত করা হয় ১৯৮২ সালে। সেই হিসেবে ২৫ জনের স্থলে দূতাবাস চলে ১৪ কর্মী নিয়ে। এরমধ্যে নেই পলিটিক্যাল ও কাউন্সিলর।
আবার কনস্যুলার স্টাফদের তিনজনকে যথাক্রমে মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট (এমআরপি), ভিসা আর কনস্যুলার সেকশনের কাজ দেওয়া হয়েছে। এর আগে দু’জন অফিস করতেন ঢিমেতালে। এখন দুইজনই অসুস্থ। আর দূতাবাস প্রধানের একান্ত সহকারী বাড়তি হিসেবে কাজ করছেন এমআরপিতে।
যে কারণে দূতাবাসে ফোন করে কেউ রাষ্ট্রদূতকে চাইলেও সেই ফোন ধরার লোক পাওয়া যায়নি। আবার দূতাবাসে তিনটি চালকের বিপরীতে দীর্ঘদিন ধরেই একটি পদে এখনও খালি।
সম্প্রতি দূতাবাসের ঠিকানা স্থানান্তর করা হয়েছে বার্লিনের ১১১, কাইজারিন অগোষ্টা আলের বহুতল ভবনের তিনতলায়।
ভবনটির সামনে নেই বাংলাদেশের লাল-সবুজের কোনো পতাকাও। আর দূতাবাসের ঠিকানা বলতে ভবনের সামনে ‘এ ফোর’ সাইজের কাগজে কম্পোজ করা দূতাবাসের নাম!
তিন মাসের অগ্রিম দিয়ে মাস প্রতি ১২ হাজার ৮০০ ইউরোতে ভাড়া নেওয়া হয়েছে ৮০০ বর্গমিটারের নতুন এই কার্যালয়।
সেখানে গিয়ে রাষ্ট্রদূতসহ পাওয়া যায়নি গুরুত্বপূর্ণ কোনো কর্মকর্তাকে। ফোন করে যোগাযোগ করা মাত্রই ছুটে আসেন তিনি। তবে অন্য সব কক্ষ তখন ফাঁকা।
‘আসলে সবে অফিস স্থানান্তর হয়েছে তো, তাই কর্মকর্তারা সেভাবে নেই’ কর্মীদের অনুপস্থিতির স্বপক্ষে সাফাই গাইলেই তা কতটা যুক্তিযুক্ত এ নিয়ে কোনো মন্তব্য করেননি রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আলী সরকার। আগে নেদারল্যান্ডাসে দায়িত্ব পালন করে আসা পররাষ্ট্র ক্যাডারের ৮৬ ব্যাচের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী সরকারের কথা সেভাবে কেউ শোনেন না বলে অভিযোগ করেছেন প্রবাসীরা।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই বাংলাদেশিরা বলছেন, রাজনৈতিক ছত্রছায়ায় আসা দূতাবাস কর্মীরা নিজেরাই এই স্টেশন ছেড়ে যেতে মরিয়া। তাই কাজে কর্মে তাদের স্বাভাবিকভাবেই মন নেই। আবার তাদের যোগ্যতা নিয়েও রয়েছে নানা মহলে সমলোচনা।
অথচ দূতাবাসটি জার্মানি ছাড়াও চেকপ্রজাতন্ত্র, শ্লোভাকিয়া ও রোমানিয়ার প্রতিনিধিত্ব করছে। মাত্র ১২ হাজার প্রবাসীর কাঙ্ক্ষিত সেবা দিতে ব্যর্থ হওয়ায় দূতাবাসটির ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে প্রবাসী বাংলাদেশিদের।
এ বিষয়ে রাষ্ট্রদূত মোহাম্মদ আলী সরকার বাংলানিউজকে বলেন, ‘জনবল সংকটের কারণে সেবা দিতে কিছুটা বিঘ্ন হচ্ছে। তা সত্ত্বেও জনভোগান্তি কমাতে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে।
তবে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আদেশ নির্দেশ অমান্য প্রসঙ্গে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি তিনি।
দূতাবাস ঘনিষ্ঠ একাধিক সূত্র বলেছে, লন্ডন বা আমেরিকায় কর্মকর্তার স্বামী বা স্ত্রী চাকরির মাধ্যমে বাড়তি আয়ের সুযোগ পান। তবে জার্মানিতে সে সুযোগ না থাকায় এখানে আসতে যতো অনীহা সংশ্লিষ্টদের।
আবার সন্তানদের শিক্ষার কথা ভেবেও অনেকে জার্মানিতে আসতে চান না। জার্মানিতে ইংরেজি শিক্ষার পরিবর্তে জার্মান ভাষা শিখে আবার বদলি হলে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে কোথায় পড়াবেন?- মূলত এসব বিষয় মাথায় রেখেই পোস্টি পেলেও তা রদ করার ব্যাপারে মরিয়া থাকেন দূতাবাস কর্মীদের অনেকে।
বাংলাদেশ সময়: ১০৩৯ ঘণ্টা, এপ্রিল ২১, ২০১৬
জেডআর/এমএ/
**‘সেই সংগ্রামই সাফল্যের পথপ্রদর্শক’