বার্লিন, জার্মানি থেকে: ‘এই যে দেখছেন জার্মানির পাসপোর্ট। এটি দিয়ে ভিসা ছাড়াই আমি যেতে পারি যে কোনো দেশে।
বাবুল হোসেন (ছদ্মনাম) এভাবেই নিজের সদ্য নতুন পাওয়া জাতীয়তার পরিচয় মেলে ধরছিলেন সগর্বে; বুক চিতিয়ে।
তবে সোনার হরিণ এই জার্মান পাসপোর্ট বা জার্মান নাগরিকত্ব বাংলাদেশের যারা পেয়েছেন তাদের কিন্তু কাঠখড় পুড়িয়েই পেতে হয়েছে।
যেমনটা বলছিলেন সিলেটের আকুল মিয়া। বাংলানিউজকে তিনি জানান, দেশ-বিদেশে এই পাসপোর্টের মর্যাদা জাতি হিসেবে এরাই (জার্মানরা) অর্জন করেছেন তাদের কর্ম দিয়ে। আকুল মিয়া নিজের ঘরেও তুলেছেন জার্মান বউ। সেই বদৌলতে তিনি পেয়েছেন নাগরিকত্ব। বাড়তি হিসেবে পাঁচটি সন্তান।
বাংলানিউজকে আকুল তুলে ধরেন নিজের অভিজ্ঞতার কথা। বহু কষ্টে জার্মানি এলেও প্রথমে মাটি ছিল না পায়ের নিচে। পরে এদেশে থাকার জন্য গ্রহণ করেন রাজনৈতিক আশ্রয়।
এ প্রসঙ্গে কথা হয় জার্মানে বাংলাদেশ দূতাবাসে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দূতাবাসের একজন কর্মকর্তা বাংলানিউজকে জানান, রাজনৈতিক আশ্রয় পাওয়ার আশায় দেশের মান বিকিয়েই আবেদন করেন অনেকে। বলেন, দেশ তার জন্য নিরাপদ নয়- ইত্যাদি নানা কারণ।
তার কাছ থেকে মেলে আরও তথ্য। বলেন, হয়ত হতে পারে অনেকের জন্য অবশ্যই সঙ্গত অনেক কারণ আছে। তবে আমরা দেখেছি, অনেকেই রাজনৈতিক আশ্রয় লাভের জন্য নিজের দেশের মর্যাদা নামিয়ে দিতে দ্বিধাবোধ করেন না। অবশ্য জার্মানি সরকার এমন অনেকের আবেদন ফিরিয়ে দিয়ে বলেছে- বাংলাদেশে এখন তেমন অবস্থা নেই যে আবেদনকারীকে রাজনৈতিক আশ্রয় দিতে হবে। তবে কেউ কেউ ঠিকই ‘ম্যানেজ’ করে নিয়েছেন আশ্রয়।
এতো গেলো রাজনৈতিক আশ্রয়, এবার প্রয়োজন নাগরিকত্ব। প্রথমে জার্মান ভাষা শিখতেই হবে, এখানে চলার জন্য। নাগরিকত্ব পেতে প্রবাসের অনেকেই শরণাপন্ন হন জার্মানি নারীর।
বেশি বয়সের হলেও চুক্তিভিত্তিক বিয়েও করেন অনেকে। এ জন্য কাউকে কাউকে গুনতে হয় ১২ থেকে ১৫ হাজার ইউরো। অনেকে আবার টাকার বিনিময়ে কারো দত্তক সন্তান বনে যান। সেটি কিভাবে? ধরেন আপনার নিজের নাগরিকত্ব চূড়ান্ত হলো। এবার বোনকে বা ভাইকে নিয়ে আসতে চান জার্মানি। জার্মান নাগরিক কোনো নারী বা পুরুষের সঙ্গে এ ক্ষেত্রে চলে চুক্তি। এতিম বা অনাথ দেখিয়ে ওই জার্মান নাগরিক বাংলাদেশের কাউকে আনলে তাকে নাগরিকত্ব দেয় দেশটির সরকার। তবে নেপথ্যে চলে টাকার খেলা।
এদিকে বিয়ে করলেও যে সংসার টেকে না। সন্তান জন্ম দেওয়ার পর জার্মান বউ অন্যত্র চলে যায়- তার এমন বহু প্রমাণ চোখে পড়ে দেশটির নানা শহরে। তার পরেও একটু খানি ভালো থাকার প্রত্যাশায় প্রবাসীরা নিজের বহু বছরের শ্রমে সঞ্চিত অর্থ তুলে দেন অনেকের হাতে এভাবে নাগরিকত্ব পাবার আশায়। তবে বিষয়টি এখনও সীমিত পর্যায়েই রয়েছে। কারণ গোটা জার্মানিতে প্রবাসীই রয়েছেন ১২ হাজারের মতো। এর বাইরে এক হাজারের মতো রয়েছেন যারা জার্মান সরকারের ভাষায় ‘অবৈধ অভিবাসী’। তবে এই অনিয়মের বেশি চর্চা হলে আগামীতে যে এই পথও রুদ্ধ হয়ে যেতে পারে- সে চিন্তায় কপালে এখনও ভাজ পড়তে শুরু করেছে অনেক প্রবাসীর।
বাংলাদেশ সময়: ১৯১৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
আইএ