ঢাকা, রবিবার, ৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ২২ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

প্রবাসে বাংলাদেশ

ডিশ ওয়াশার থেকে ২ রেস্টুরেন্টের মালিক আকুল মিয়া

জাহিদুর রহমান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৬ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
ডিশ ওয়াশার থেকে ২ রেস্টুরেন্টের মালিক আকুল মিয়া ছবি: বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম

বার্লিন, জার্মানি থেকে: জীবনে অনেক কষ্ট করেছেন। এমনকি ধুয়েছেন হোটেলের থালা বাসন।

যাকে বলে ডিশ ওয়াশার। এখন তিনি নিজেই ইউরোপে দু’দুটি বিশাল হোটেলের মালিক। তাও জার্মানির বার্লিনের মতো শহরে। অনেক মানুষ কাজ করে এখন তার প্রতিষ্ঠানে। তিনি আকুল মিয়া। সিলেটের দিরাই উপজেলার কুলঞ্চি ইউনিয়নের হাতিয়া গ্রাম গোলাপ মিয়ার ছেলে।

১৯৮০ সাল। ১১ ভাই বোনের বিশাল সংসার। ভাইদের মধ্যে বড়। ভাগ্য অন্বষণে তাই এসএসসি পরীক্ষা দিয়েই বিদেশে পাড়ি জমান আকুল। পর্যটক হিসেবে জার্মানিতে প্রবেশ। তখন পূর্ব আর পশ্চিম- দুই জার্মানি। লক্ষ্য ছিলো জার্মানির সে সময়ের অভিজাত শহর ফ্রাঙ্কফুট। সঙ্গী চারজন। সবার উদ্দেশ্য আর গন্তব্যই অভিন্ন। তবে বার্লিনে পা রাখা মাত্রই ধরা পড়ে যান পাসপোর্ট কন্ট্রোল বিভাগের হাতে।

অবৈধ অভিবাসী হিসেবে আটক করে থানায় নিয়ে রেখে দেয় সবার পাসপোর্ট। অজানা শহর। খাবার দাবারের কষ্ট। তিনটি দিন কাটলো রুটি খেয়ে। দেখা হলো সিলেটি একজনের সঙ্গে। তার পরামর্শে যান ফয়রিক স্ট্রাচে। সেখানে একটি হোস্টেলে দেখা বেশ কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে। ভরসা পেলাম। অন্যদের পরামর্শে চাইলাম রাজনৈতিক আশ্রয়। পেটের তাগিদে কাজ নিলাম একটি রেস্টুরেন্টে।

তিনি বলেন, বাসন ধোয়া মোছার কাজ। মানে ডিশ ওয়াশার। চার মাসের পর সালাদ ডিপার্টমেন্টে। মাসিক বেতন সাতশো মার্ক। মাস ছয় পর আর্জেন্টাইন একটি স্টেক হাউজে কাজ নিলাম। বেতন নয়শো মার্ক। বছর খানেক পর আরেকটি কফিশপে কাজ নিলাম। ৮৩ সালে পরিচয় হয় একজন জার্মান নারীর সঙ্গে। আঙ্গেলা পুরমান। ৮৪ সালে বিয়ে।

এরপর ১৯৮৯ সালে নিজ উদ্যোগে শুরু করেন রেস্টুরেন্ট ব্যবসা। নাম দেন সিমলা রেস্টুরেন্ট। তারপর আর পিছে ফিরে তাকাতে হয়নি। পরে প্রতিষ্ঠা করেন সিমলা-২ নামের আরেকটি রেস্টুরেন্ট। আট সন্তানের বাবা আকুল মিয়া এখন কমিউনিটিতে প্রতিষ্ঠিত। তবে আন্তরিক। রক্তের সম্পর্ক না হলেও অনেকের প্রিয়জন, প্রিয় স্বজন। জন্মসূত্রে সন্তানরা জার্মান নাগরিক।

কিন্তু কথা বার্তায় আকুল মিয়া এখনো পুরোদস্তুর সিলেটি। আঞ্চলিক ভাষাতেই কথা বলেন কমিউনিটির মানুষদের সঙ্গে। অতীতকে সযত্নে লালন করেন। বলেন, আমি সেই আকুল মিয়া। যে ডিশওয়াশার থেকে এতোটা দূর এসেছি।

আর এভাবেই আকুল মিয়ারা প্রবাসে এগিয়ে নেন বাংলাদেশকে। অনেকেই প্রবাসে আসেন ভাগ্য অন্বেষণে। কেউ ছিঁটকে পড়েন জীবনের লক্ষ্য থেকে। কেউ বা হারিয়েই যান। অনেকে চাকরি করে অর্জনের চেষ্টা করেন নাগরিকত্ব। কিন্তু লক্ষ্য যদি স্থির থাকে তবে আকুল মিয়ার মতো অন্যদের চাকরি দেওয়া যায়। সেটাই কেবল ভাবনায় থাকে না অনেকের।

আকুল মিয়ার ভাষায়, স্বপ্নটা থাকতে হবে আকাশ ছোঁয়ার। সঙ্গে চেষ্টা। তবেই না মাথার ওপর ছাদ ছোঁয়া সম্ভব!

**জার্মানিতে বিয়ে বা দত্তক- এতে যায় কষ্টের বহু অর্থ
**পেট্রোলপাম্পেও নিজের কাজ নিজে করো নীতি

**সততা-একাগ্রতাই এগিয়ে নিয়েছে কাজী সুরুজকে

**‘সেই সংগ্রামই সাফল্যের পথপ্রদর্শক’

** আস্থার সংকটে বাংলাদেশ–জার্মানি সম্পর্ক!
** বিমানবন্দরে বাংলাদেশের হাসি

** নিজেই মুমূর্ষু জার্মানির বাংলাদেশ দূতাবাস

 

বাংলাদেশ সময়: ২১০০ ঘণ্টা, এপ্রিল ২২, ২০১৬
এএ

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।