ঢাকা, শনিবার, ৭ বৈশাখ ১৪৩১, ২০ এপ্রিল ২০২৪, ১০ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রবাসে বাংলাদেশ

লক্ষ্য ব্রিটেন, ট্রানজিট পয়েন্ট পর্তুগাল

সৈয়দ আনাস পাশা, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০৫৩ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৬
লক্ষ্য ব্রিটেন, ট্রানজিট পয়েন্ট পর্তুগাল

লিজবন, পর্তুগাল থেকে: ১৯৯১ সালে মাত্র ৬ জন অভিবাসীর বসবাসের মাধ্যমে পর্তুগালের বাংলাদেশি কমিউনিটির যে যাত্রা শুরু হয়েছিলো, গত ২৫ বছরে তা প্রায় ৩০ হাজারে পৌঁছলেও এই সংখ্যা কখনও স্থিতিশীল থাকেনি।

বর্তমানে এই সংখ্যা নেমে এসেছে হাজার দশেকের নিচে।

নাগরিকত্ব পেয়ে অনেকেই ব্রিটেনে গিয়ে স্থায়ী বসবাস শুরু করায় এই সংখ্যা কমে আসে। মূলত ব্রিটেনকে টার্গেট ধরে এই ২৫ বছর পর্তুগালকে ট্রানজিট পয়েন্ট হিসেবেই ব্যবহার করেছেন অভিবাসী বাংলাদেশিরা।

পর্তুগালের মূলধারার রাজনীতিতে সক্রিয় বাংলাদেশি রানা তসলিম উদ্দীন ও লিজবনে বসবাসরত আরও কয়েকজন বাংলাদেশির সঙ্গে কথা বলে এমন তথ্যই জনা যায়।

লিজবনে বাংলাদেশি কমিউনিটির প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিচিত মারটিম মনিজে শনিবার বিকেলে কথা হয় বেশ কয়জন বাংলাদেশির সঙ্গে। এদের সবাই কাজ করেন বিভিন্ন গ্রোসারি বা কাবাব শপে। কেউ-কেউ আবার এসব দোকানের মালিক। কিন্তু কারও নেই নিশ্চিন্ত জীবন।

গত ১০ বছরে স্টুডেন্ট ভিসায় ব্রিটেন ঢুকেছিলেন যেসব তরুণ, তাদের এক বিরাট অংশ এখন পর্তুগালে। এদের মধ্যে যারা স্টুডেন্ট ভিসার বৈধতা থাকাকালীন ভিজিট ভিসা নিয়ে ঢুকেছিলেন, পর্তুগালে স্থায়ী বসবাসের সুযোগ তাদের জন্যে খুব কঠিন না হলেও সহজ নয়।

মারটিম মনিজে গ্রোসারি দোকানগুলোতে কর্মরত যে কজন বাংলাদেশি তরুণের সঙ্গে কথা হয়। তারা এক সময় ছিলেন ব্রিটেনে। স্টুডেন্ট ভিসা নিয়ে এসে এর মেয়াদ শেষ হলে কেউ কেউ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ ঘুরে আশ্রয় নিয়েছেন পর্তুগাল, আবার কেউ কেউ সরাসরি চলে এসেছেন ব্রিটেন থেকে। কিন্তু এদের সবারই চূড়ান্ত টার্গেট আবার ব্রিটেন।

পর্তুগালের নাগরিকত্ব পাওয়ার পর ব্রিটেনে গিয়ে স্থায়ী বসবাসের স্বপ্ন নিয়ে এরা ঢুকেছিলেন পর্তুগাল। কিন্তু ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন (ইইউ) থেকে ব্রিটেন বেড়িয়ে যাওয়ার পর তাদের স্বপ্ন বাস্তবায়ন কতটুকু সম্ভব তা নিয়ে সবাই দুশ্চিন্তাগ্রস্ত।

এতদিন কাজ করে বছর খানেক নিয়মিত ট্যাক্স পরিশোধ করলে পর্তুগালের রেসিডেন্টশিপ পাওয়ায় ইউরোপের অন্যান্য দেশের তুলনায় সহজ হলেও ইদানিং এটিও কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এ নিয়েও দুশ্চিন্তায় অনেকে।

কারও-কারও মতে পর্তুগালের প্রধানমন্ত্রী এন্টনিও কস্টার নেতৃত্বাধীন সোসালিস্ট পার্টির ক্ষমতাসীন সরকার ইমিগ্রেন্ট বান্ধব নয়, বলেই ইদানিং পর্তুগালের ইমিগ্রেশন আইনে কড়াকড়ি হচ্ছে।

এই অভিযোগ অবশ্য মানতে নারাজ সোসালিস্ট পার্টির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নেতা রানা তসলিম উদ্দিন। বাংলানিউজকে তিনি বলেন 'সারা ইউরোপের মধ্যে পর্তুগালই হলো সেই ইমিগ্রেন্টবান্ধব দেশ, যে দেশটিতে মানবিকতার স্থান ইমিগ্রেশন আইনেরও ঊর্ধ্বে। আর এ কারণেই বৈধ মেয়াদ শেষ হয়ে যাওয়ার পরও প্রচুর ইমিগ্রেন্ট দেশটিতে অবৈধভাবে বসবাস করলেও বড় ধরনের কোনো ইমিগ্রেশন রেইড চোখে পড়ে না'।

রানা বলেন, 'যেহেতু ইউরোপীয় ইউনিয়নের একটি সদস্য দেশ পর্তুগাল, সেহেতু স্বাভাবিক কারণেই ইউনিয়নের অনেক নিয়ম কানুন মেনে চলতে হয় দেশটিকে'।

প্রধানমন্ত্রী এন্টনিও কস্টার সরকার ইমিগ্রেশন সিস্টেমকে একটু গতিশীল করার চেষ্টা করছেন বলে অনেকেই এটিকে ভুলভাবে ব্যাখ্যা করছেন বলে বাংলানিউজের কাছে অভিযোগ করেন রানা তসলিম উদ্দিন।

প্রধানমন্ত্রী কস্টার ঘনিষ্ঠ এই বাংলাদেশী রাজনীতিক বলেন, 'সরকার চায় ইমিগ্রেন্টরা পর্তুগালকে ভালোভাবে চিনুক, নিজের দেশ হিসেবে হৃদয়ে গ্রহণ করুক দেশটিকে। আর এজন্য যে সময়ের প্রয়োজন। সেই সময়টি দিতেই হয়তো ইমিগ্রেশন সিস্টেমে সাম্প্রতিক সময়ে একটু ধীরগতি হচ্ছে। এর মানে এই নয় যে, এই সরকার ইমিগ্রেন্টবান্ধব নয়'।

রানা তসলিম উদ্দিন বলেন, 'আমি মনেকরি, বর্তমান সোসালিস্ট সরকার ইমিগ্রেন্ট কমিউনিটিকে পর্তুগালে ধরে রাখতে চায়। দেশটিকে ব্রিটেন বা ইউরোপে ঢোকার ট্রানজিট হতে দিতে চায় না। আর এ কারণেই আমাদের কমিউনিটির যারা রেসিডেন্টশিপ পাওয়ার অপেক্ষায় আছেন, তাদের ধৈর্য ধরার জন্য আমি অনুরোধ জানাই। তাদের প্রতি আমার একটিই পরামর্শ, ঠিকমত সোস্যাল ট্যাক্স দিন এবং কোনো ধরনের অপরাধের সংস্পর্শ থেকে দূরে থাকুন'।

বাংলাদেশ সময়: ১০৪৫ ঘণ্টা, অক্টোবর ২৩, ২০১৬
আরআই/টিআই

 

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।