ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

প্রবাসে বাংলাদেশ

ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসের একুশে উদযাপন

নিউজ ডেস্ক | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৭৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০
ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসের একুশে উদযাপন ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে ব্রাজিলে এবারের দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল।

ঢাকা: ২১শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে এ বছরের ইউনেস্কো প্রতিপাদ্য ‘ল্যাঙ্গুয়েজ উইদাউট বর্ডার্স’- এর আলোকে ব্রাজিলে এবারের দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছিল। প্রথম পর্বে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের অংশগ্রহণ আরও সম্প্রসারিত করার লক্ষ্যে এবার ১২টি দেশের ১৫টি সাংস্কৃতিক উপস্থাপনায় সাজানো হয়েছিল ২০ ফেব্রুয়ারির সন্ধ্যার অনুষ্ঠান।

গত বছরের ধারাবাহিকতায় এবারের আয়োজনেও ইউনেস্কো ও ব্রাজিল সরকারের সংস্কৃতি ও শিক্ষা বিভাগ দূতাবাসের এ উদ্যোগে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয়। ব্রাজিলে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উদযাপনে এ দু’টি সংগঠনের অংশীদারিত্ব এখন একটি প্রাতিষ্ঠানিক রূপ পেয়েছে।

ব্রাজিলের ২১ কোটি জনগণ এবং এদেশে বসবাসকারী লাখ লাখ বিদেশির কাছে একুশের বার্তা পৌঁছে দিতে এ যৌথ উদ্যোগ আগামীদিনগুলোতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।

২০ ফেব্রুয়ারির অনুষ্ঠানে ব্রাজিলে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান তার স্বাগত বক্তব্যে ভাষাসংগ্রাম থেকে শুরু করে বাঙালির স্বাধীনতা সংগ্রামে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য বাঙালি জাতির বীরত্বগাঁথা তুলে ধরেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের ২১শে ফেব্রুয়ারি কীভাবে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হলো, সে গৌরবের দিনগুলোও তিনি তুলে ধরেন আন্তর্জাতিক এ সমাবেশে।

তিনি বলেন, ভাষা একটি জাতিগোষ্ঠীর সাংস্কৃতিক বা জাতিগত পরিচয় বংশপরম্পরায় বয়ে নেওয়ার সবচেয়ে শক্তিশালী বাহন এবং পৃথিবীর সব জাতিগোষ্ঠীর সংস্কৃতি বাঁচিয়ে রাখার জন্য সবার ভাষা বাঁচিয়ে রাখা জরুরি।

বাঙালির মাতৃভাষায় কথা বলার অধিকার রক্ষায় শহীদদের স্মৃতিবিজড়িত ২১শে ফেব্রুয়ারি আজ আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের মর্যাদায় অভিষিক্ত। একসময়ের একান্তভাবেই বাংলাদেশের এ দিবসটি রাজনৈতিক সীমান্ত ছাড়িয়ে এখন পালিত হচ্ছে পৃথিবীর সর্বত্র। এভাবেই ব্রাজিলে এবার বৃহত্তর পরিসরে একুশে ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস পালনের আয়োজনের প্রাসঙ্গিকতা বর্ণনা করলেন রাষ্ট্রদূত মো. জুলফিকার রহমান।

অনুষ্ঠানে বিপুল দর্শক উপস্থিতির সুযোগ নিয়ে রাষ্ট্রদূত জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে মুজিববর্ষে বাংলাদেশ দূতাবাসের আয়োজনগুলোতে অংশ নেওয়ার জন্যও সবার প্রতি আহ্বান জানান।

ইউনেস্কো ও ব্রাজিল সরকারের প্রতিনিধিরা তাদের বক্তব্যে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের গুরুত্বের প্রতি আলোকপাত করে এ বিষয়ে কাজ করে যাওয়ার জন্য তাদের অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন। এ ধরনের একটি সত্যিকারের আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে দিনটিকে সবার মধ্যে পরিচিত করার এ প্রয়াসের জন্য ধন্যবাদ জানিয়ে তারা বলেন, ব্রাজিলে বাংলাদেশ দূতাবাসের এ উদ্যোগে তারা ভবিষ্যতেও সহযোগিতা করবেন।

ইউনেস্কো-ব্রাজিলের পরিচালক দেশটির সরকারের গভর্নরের প্রতিনিধি, ব্রাজিল পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এশিয়া বিভাগের মহাপরিচালকসহ অন্য কর্মকর্তা, ব্রাজিল সরকারের বিভিন্ন স্তরের সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, রাষ্ট্রদূতসহ শতাধিক কূটনীতিক, ব্রাজিলিয়ান ও অন্য বিদেশিসহ চারশতাধিক দর্শকশ্রোতা এ আয়োজনে উপস্থিত থেকে বাঙালির প্রিয় একুশেকে সত্যিকারভাবেই সেদিন আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে রূপান্তর করেছিলেন। বিশ্ব-সংস্কৃতির এক মিলনমেলা যেন বসেছিল সে সন্ধ্যায়।

বাংলাদেশের উপস্থাপনায় ‘আমার ভায়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ বা ‘চলো বাংলাদেশ, চলো বিশ্ব উঠানে, চলো বাংলাদেশ, চলো বিজয়ের টানে’, স্প্যানিশ ফ্ল্যামিংগো, ব্রাজিলের ইউনেস্কোস্বীকৃত ঐতিহ্য কাপোয়েইরার বা ফোঁহো অ্যান্ড সাম্বার মনমাতানো পরিবেশনা, জাপানের হিকারিদাইকো-তাইকো ড্রামের উচ্চনিনাদের পরিবেশনা, অ্যাঙ্গোলার আফ্ৰিকান ঐতিহ্যবাহী  নাচ, আর্জেন্টিনার বিশ্বখ্যাত ট্যাংগো, গ্রিসের পরিবেশনায় হেলেনিক সংস্কৃতির একগুচ্ছ উপস্থাপন, কিউবার মনমাতানো আর রুদ্ধশ্বাস ব্যালে পরিবেশনা, ব্রাজিলের স্বনামধন্য সঙ্গীতশিল্পী আনা লেইলার পরিবেশনায় শান্তির গানের মূর্ছনা, দর্শকমাতানো মিসরের লোকনৃত্য, জ্যামাইকার পরিবেশনায় ‘সিয়ার স্বপ্ন’, সংযুক্ত আরব আমিরাতের পরিবেশনায় ঐতিহ্যবাহী আরব নৃত্য, সিরিয়ার কণ্ঠশিল্পী দিয়ালা ফায়াদের সুরেলা আরবি সঙ্গীতের পরিবেশনা, এসবই উপভোগ করেন হলভর্তি চার শতাধিক দর্শক তিনঘণ্টাব্যাপী এ অনুষ্ঠানে। মুহুর্মুহু করতালিতে সিক্ত হন শিল্পীরা। দূতাবাসের এ অনন্য আয়োজনের জন্য প্রবাসী বাংলাদেশি, কূটনৈতিক কোরের সদস্য, ব্রাজিলিয়ান ও অন্য বিদেশিরা দূতাবাসকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানান।

আয়োজনের দ্বিতীয় পর্বে একুশের সকালে রাষ্ট্রদূত জাতীয় পতাকা অর্ধনমিত করে দিনের কর্মসূচির সূচনা করেন। এরপর প্রবাসী বাংলাদেশি ও দূতাবাস পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দূতাবাসে স্থাপিত শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করেন। দূতাবাসে আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রীর বাণীগুলো পড়ে শোনানো হয়। দূতাবাসের এ আয়োজনের শেষ পর্যায়ে ভাষা শহীদদের জন্য বিশেষ মোনাজাত করা হয়।

বাংলাদেশ সময়: ১২৪১ ঘণ্টা, ফেব্রুয়ারি ২৪, ২০২০
এফএম

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।