ঢাকা, মঙ্গলবার, ৩ বৈশাখ ১৪৩১, ১৬ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ শাওয়াল ১৪৪৫

প্রবাসে বাংলাদেশ

অবৈধভাবে তুরস্ক হয়ে ইউরোপ: পথ কতোটা কঠিন?

মাহাফুজুল হক চৌধুরী, সাইপ্রাস থেকে | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১২৮ ঘণ্টা, নভেম্বর ২, ২০২০
অবৈধভাবে তুরস্ক হয়ে ইউরোপ: পথ কতোটা কঠিন?

বর্তমানে বাংলাদেশ থেকে অনেকেই উচ্চশিক্ষার জন্য তুরস্কে আসেন। তুর্কি সরকারের বুসলারি নামক একটি শিক্ষাবৃত্তি প্রোগ্রাম আছে, ওই প্রোগ্রামের অধীনে কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সুযোগ পেলেও বাকিরা আসেন নিজস্ব খরচে।

তাদের অনেকেই মনে করেন, তুরস্কে আসা মানেই ইউরোপের দিকে পা বাড়ানোর পথে এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া। অল্প কিছু সংখ্যক মানুষ কাজের ভিসায়ও তুরস্কে আসেন। আমার কাছে বিষয়টি স্পষ্ট নয় যে তারা কি আদৌ সব কিছু বুঝে শুনে আসেন কিনা! কারণ বেশিরভাগ মানুষের ধারণা, তুরস্কে পা রাখা মানে স্বপ্নের মহাদেশ ইউরোপে পাড়ি জমানোর পথে একটি বড় সফলতা।

তুরস্কে যদি কেউ টাকা ইনকামের উদ্দেশ্যে আসেন, তাহলে তিনি ভিন্ন জগতে বাস করছেন। তুরস্কে আয় এবং ব্যয় আনুপাতিক দিক থেকে প্রায় সমান। কিছু ক্ষেত্রে আয়ের তুলনায় ব্যয় বেশিই বলা যায়। মুদ্রাস্ফীতি দেশটির একটি সাধারণ সমস্যা। আজ থেকে দশ বছর আগেও যেখানে এক ইউরোর বিপরীতে ১.৮৩ তার্কিশ লিরা পাওয়া যেতো, এখন এক ইউরোর বিপরীতে তার্কিশ লিরার মুদ্রামান পৌঁছেছে ০৭ এর কাছাকছি। কিছু মানুষ ছাড়া বেশিরভাগ মানুষ একটা  উদ্দেশ্যে তুরস্ক আসতে চান, আর সেটা হচ্ছে-
অন্তত সেখানে গেলে ইউরোপ যাওয়ার একটা লাইন পাওয়া যাবে। আসলেই কি তা সম্ভব?

আসুন জেনে নিই তুরস্ক থেকে ইউরোপ প্রবেশের পথ কতোটা কঠিন। তুরস্ক থেকে ইউরোপ প্রবেশ করতে দুইটা দেশকে ব্যবহার করতে হয়। এ দেশ দুইটি হচ্ছে বুলগেরিয়া এবং গ্রিস। তুরস্কের একটা অংশ ইউরোপ মহাদেশে পড়লেও তারা ইইউয়ের অন্তর্ভুক্ত দেশ না হওয়ায় সে দেশের ভিসাধারী কোন অভিবাসী ইউরোপের ভিসা ছাড়া ইউরোপে ঢুকতে পারবে না। বুলগেরিয়া কিংবা গ্রিসে ঢুকতে হলে অবৈধভাবেই ঢুকতে হয়। সেক্ষেত্রে কেউ বুলগেরিয়া দিয়ে তুরস্কে প্রবেশ করলে দুইটা রুট ব্যবহার করে সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত কোনও দেশে প্রবেশ করা যায়।  

রুট দুইটি হলো যথাক্রমে বুলগেরিয়া থেকে সার্বিয়া অথবা বুলগেরিয়া থেকে রোমানিয়া। রোমানিয়ার সঙ্গে সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত দেশ হাঙ্গেরি। হাঙ্গেরি ঢুকতে পারলেই হাঙ্গেরি থেকে অষ্ট্রিয়া, অষ্ট্রিয়া থেকে ফ্রান্স, ফ্রান্স থেকে পর্তুগাল, ইতালি যার যেখানে খুশি অবাধে চলে যেতে পারবে। হাঙ্গেরি যেতে পারলেই আর কোন বাধা নেই। রোমানিয়া থেকে অবৈধভাবে হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করা অনেক কঠিন। বলতে গেলে হাজারে দশজন সফল  হতে পারে। তাই রোমানিয়া দিয়ে না গিয়ে বেশিরভাগই সার্বিয়ার রুটকে বেছে নেয়।

বুলগেরিয়া থেকে সার্বিয়া দিয়ে যেভাবে সেনজেনে প্রবেশ করতে হবে:
সার্বিয়ার সঙ্গে হাঙ্গেরি এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের নন সেনজেন দেশ ক্রোয়েশিয়ার বর্ডার। সার্বিয়া থেকেও অবৈধভাবে হাঙ্গেরি প্রবেশ করা অসম্ভবই বলা যায়।  

হাঙ্গেরির সঙ্গে নন সেঞ্জেন দেশগুলোর বর্ডার এতটাই কঠিন যে শতবার চেষ্টা করেও অবৈধভাবে হাঙ্গেরিতে প্রবেশ করা সম্ভব নয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের মধ্যে হাঙ্গেরি একমাত্র দেশ যে দেশের সীমানায় কাঁটাতারের বেড়া রয়েছে। ফলে সার্বিয়া থেকে লোকজন ক্রোয়েশিয়া চলে যায়। কিন্তু সার্বিয়া থেকে ক্রোয়েশিয়া প্রবেশ করাও বর্তমানে অনেক কঠিন হয়ে পড়েছে। তাই একটু সহজে ক্রোয়েশিয়া প্রবেশের জন্য সার্বিয়া থেকে বেশিরভাগই চলে যায় সার্বিয়ার পার্শ্ববর্তী ইউরোপের দেশ বসনিয়ায়। বসনিয়ার সাথে ক্রোয়েশিয়ার সীমান্ত যোগযোগ রয়েছে। ক্রোয়েশিয়া ঢুকলেই এর সঙ্গে লাগানো সেনজেনের অন্তর্ভুক্ত দুইটি দেশ। হাঙ্গেরি এবং স্লোভেনিয়া। হাঙ্গেরিতে বর্তমানে অবৈধভাবে প্রবেশ অনেকটা জটিল হয়ে পড়েছে বলে সবাই ক্রোয়েশিয়া দিয়ে স্লোভেনিয়া হয়ে ইতালি প্রবেশ করে। ইতালি প্রবেশ করতে পারলেই ফ্রান্স, পর্তুগাল, জার্মানি, স্পেন যার যেখানে খুশি বিনা বাধায় চলে যেতে পারে।  

তবে আগে বেশিরভাগ লোকেই ক্রোয়েশিয়া দিয়ে স্লোভেনিয়া প্রবেশ করলেও বর্তমানে তা খুব কঠিন হয়ে পড়েছে।

এইবার জেনে নিন, তুরস্ক হয়ে গ্রিস থেকে কিভাবে ইতালি কিংবা ফ্রান্সে যাবেন:
গ্রিস থেকে ইতালি কিংবা ফ্রান্সে যেতে হলে প্রথমে গ্রিসের পাশের দেশ উত্তর মেসিডোনিয়াতে প্রবেশ করতে হয়। উত্তর মেসিডোনিয়া থেকে দুইটি রুট দিয়ে স্লোভেনিয়াতে যাওয়া যায়। দেশ দুইটি হচ্ছে নর্থ মেসিডোনিয়ার পার্শ্ববর্তী দেশ বুলগেরিয়া এবং সার্বিয়া।  

বুলগেরিয়া এবং সার্বিয়া দিয়ে কীভাবে স্লোভেনিয়া হয়ে ইতালি পৌঁছানো যায় তা ওপরে উল্লেখ আছে।

এই লেখাটি পড়তে পড়তে হয়তো অবৈধপথে ইউরোপ আসার স্বপ্ন মরে যেতে পারে। তুরস্ক থেকে ইতালি, ফ্রান্স, পর্তুগাল যেতে হলে কমপক্ষে ৫-৬টি দেশে অবৈধভাবে প্রবেশ করতে হবে। কখনো হেঁটে, কখনো আবার গাড়িতে। একেকটি দেশে প্রবেশ করতে ১ থেকে ৩ মাস সময় লেগে যেতে পারে। কারো কারো ভাগ্য ভালো হলে সবগুলো দেশ পেরিয়ে ২-৩ মাসের মধ্যে ইতালি কিংবা ফ্রান্স পৌঁছে যেতে পারে। আবার অনেকে ২ বছরেও যেতে পারে না। আবার কেউ কেউ তার ভেতর ক্যাম্পে মানবেতর দিন কাটায়, কাউকে খাটতে হয় জেল। সুতরাং বাংলাদেশে বসে তুরস্ক হয়ে অবৈধপথে ইউরোপ যাওয়ার চিন্তা করা বোকামি ছাড়া কিছুই নয়।

বাংলাদেশ সময়: ২১১৩ ঘণ্টা, নভেম্বর ০২, ২০২০
নিউজ ডেস্ক

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।