ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘রমজান ঐতিহ্য’

আম্মানবাসী প্রথম চাঁদ দেখাকে সৌভাগ্য মনে করে

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৫০৪ ঘণ্টা, জুলাই ৭, ২০১৫
আম্মানবাসী প্রথম চাঁদ দেখাকে সৌভাগ্য মনে করে

জর্দান মধাপ্রাচ্যের একটি রাজতান্ত্রিক রাষ্ট্র। জর্দানের ভূপ্রকৃতি ঊষর মরুভূমিময়।

এখানে প্রাকৃতিক সম্পদের পরিমাণও কম। কিন্তু মধ্যপ্রাচ্যের ইতিহাসে দেশটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। জর্দানের আয়তন ৮৯,৫৫৬ বর্গকিলোমিটার। আম্মান জর্দানের বৃহত্তম শহর ও রাজধানী।

রাজকীয় আম্মানে রমজানের আমেজটাই ভিন্ন। আম্মানের অধিবাসীগণ পৃথিবীর অন্যান্য অঞ্চলের মুসলিমদের থেকে একটু ভিন্ন রমজান সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের চর্চা করেন।

আম্মানের জগদ্বিখ্যাত রমজান সংস্কৃতির একটি হলো, গোশতের শরবত। দেশি গম ও গোশত দিয়ে তৈরি করা হয় এই শরবত। রমজানে হরেক রকম কফিও তৈরি হয় আম্মানে। অতিথিদের বিভিন্ন রঙের কয়েক প্রকার কফি পরিবেশন করা আম্মানি সংস্কৃতির অংশ। রমজানে মসজিদে ইফতারের সাধারণ আয়োজনেও থাকে গরম কফি।

শুধু খাদ্য-খাবারের ঐতিহ্য নয়, ইবাদত-বন্দেগি, দোয়া ও জিকির এবং দান ও আতিথেয়তায়ও আছে আম্মানবাসীর নিজস্ব ঐতিহ্য। আনন্দ উল্লাসে রমজানকে গ্রহণ করে তারা। রমজানে চাঁদ দেখতে পুরুষরা পাহাড়ের চূড়ায় আরোহন করে এবং নারীরা বাড়ির ছাদে। রমজানে চাঁদ প্রথম দেখতে পারাকে তারা সৌভাগ্যের প্রতীক মনে করে। এমনকি যে ব্যক্তি প্রথম রমজানের চাঁদ দেখতে পায়, তার নাম চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে।

রমজান মাসে আম্মানবাসী প্রচুর দান করেন। বিশেষত তারা খেজুরসহ অন্যান্য ইফতার সামগ্রী দরিদ্র মানুষের মাঝে বিতরণ করেন।

শাবান মাসের শেষ দিক থেকেই আমলের প্রস্তুতি নেয় সবাই। তাহাজ্জুদের সময় মসজিদগুলো খুলে দেয়া হয়। জামাতে মুসল্লিদের উপস্থিতি বাড়তে থাকে। আম্মানের প্রায় শতভাগ পুরুষই তারাবির জামাতে অংশগ্রহণ করে। আম্মানে একই মহল্লায় ভিন্ন ভিন্ন মাজহাবের একাধিক মসজিদ রয়েছে। প্রত্যেক মসজিদের ইমাম নিজ মাজহাব অনুযায়ী তারাবির নামাজ আদায় করেন। প্রত্যেকেই অন্যের মতাদর্শকে সহনশীলতার সাথে গ্রহণ করে। প্রতিটি মসজিদে ফজর ও আসরের পর পবিত্র কোরআনে কারিমের দরস হয়। এছাড়াও মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হয়, হিফজুল কোরআন, হিফজুল হাদিস, হামদ-নাত ও বিতর্ক প্রতিযোগিতা।

প্রতিটি মসজিদেই ইফতারের আয়োজন করা আম্মানের সংস্কৃতির অন্যতম দিক। প্রতিটি বাড়িতেই মসজিদের জন্য দান বাক্স থাকে। একজন ব্যবস্থাপক সে অর্থ সংগ্রহ করেন এবং মসজিদে উম্মুক্ত ইফতারের আয়োজন করেন। আম্মানবাসী খেজুর ও কফি দিয়ে ইফতার করে এবং জামাতের সাথে মাগরিবের নামাজ আদায় করে। এরপর রাতের খাবার গ্রহণ করে। রাতের খাবারে তারা আম্মানি রুটি, গোশত এবং মাছ গ্রহণ করে। তারাবির নামাজ আদায় করার পর তারা পুনরায় খেজুর ও কফি খায়। এ সময় মসজিদেও মুসল্লিদের জন্য খেজুর ও কফির ব্যবস্থা করা হয়। এরপর অনেকেই আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা করতে যান।

রমজানে আম্মানিদের জীবনযাত্রা অনেকটাই স্বাভাবিক থাকে। সকাল বেলা উঠে কাজে যায় এবং বিকেলে ঘরে ফিরে। আসর থেকে মাগরিব পর্যন্ত সময়টা তারা ইবাদত-বন্দেগি ও দোয়ার জন্য ফ্রি রাখে। ইফতারের সময়টা সবচেয়ে বেশি উপভোগ করে শিশুরা। তারা খেলনা ও খাবার নিয়ে আশ-পাশের উপত্যকায় খেলতে চলে যায়। মাগরিবের আজান হওয়ার সাথে সাথে সমস্বরে স্থানীয় কিছু সংগীত গাইতে থাকে। যেমন, ‘উজুনুন! উজুনুন!! ওয়া লুবুন! ওয়া লুবুন!!’ অর্থাৎ আজান হয়েছে হে উপত্যকাবাসী তোমরা দুধ গ্রহণ কর। ইফতার কর। এ সংগীত শুনে আম্মানবাসী ইফতার শুরু করে।

আসরের পর থেকে শুরু হয় প্রতিবেশীদের মাঝে ইফতার বিতরণ। সবাই নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী প্রতিবেশীদের মাঝে ইফতার বিতরণ করে। অনেকেই ঘরে তৈরি ইফতার মসজিদে পাঠিয়ে দেন সবার জন্য।

বাংলাদেশ সময়: ১৪০০ ঘন্টা, জুলাই ০৭, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।