ঢাকা, শুক্রবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ২৭ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

‘তারাবিতে পঠিতব্য আয়াতের তাফসির’

আজ পাঠ জান্নাতি মানুষের গুণাবলী

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৪৪৭ ঘণ্টা, জুলাই ১৩, ২০১৫
আজ পাঠ জান্নাতি মানুষের গুণাবলী

আজ অনুষ্ঠিত হবে ২৬তারাবি। আজকের খতমে তারাবিতে ২৯নং পারা তেলাওয়াত করা হবে।

আজ তেলাওয়াত করা হবে সূরা আল মুলক, সূরা আল কলম, সূরা আল হাক্কাহ, সূরা আল আল মাআরিজ, সূরা নূহ, সূরা আল জিন, সূরা আল মুজ্জাম্মিল, সূরা আল মুদ্দাসসির, সূরা আল কিয়ামা, সূরা আদ-দাহর ও সূরা আল মুরসালাত।

সূরা আল মুলক
সূরা আল মুলক মক্কি সূরা। এর ক্রমিক সংখ্যা ৬৭, আয়াত ৩০টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য বিষয় ও বিধান হলো-

১২নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যারা নিজের প্রভুকে না দেখে ভয় করে তাদের জন্য রয়েছে ক্ষমা ও বিরাট পুরস্কার।

৩০নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, তোমরা ভেবে দেখেছ কি, যদি ভূগর্ভস্থ পানি তোমাদের নাগালের নীচে নেমে যায় তবে তোমাদের প্রবাহিত পানি এনে দিবে কে?

সূরা আল কলম
সূরা আল কলম মক্কি সূরা। এর ক্রমিক সংখ্যা ৬৮, আয়াত ৫২টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-

১০-১৫নং অবতীর্ণ হয় কোরাইশ সর্দার ওয়ালিদ ইবনে মুগিরা সম্পর্কে। আয়াতে তার যে চরিত্র বর্ণনা করা হয়েছে এ চরিত্র সে অন্ধকার যুগে অনেকেরই ছিল। ইরশাদ হয়েছে, আপনি এমন ব্যক্তির অনুসরণ করবেন না যে অত্যাধিক শপথ করে এবং সে ইতরও বটে। সে আড়ালে মানুষের নিন্দা করে। সে একের কথা অপরের নিকট বলে বেড়ায়। সে নেক কাজে বাঁধা দেয়। সীমালংঘনকারী, পাপী। রূঢ় স্বভাবের এবং তদুপরি কুখ্যাত। সে ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতিতে সমৃদ্ধশালী। যখন আমার আয়াত তার সামনে পাঠ করা হয় তখন সে মন্তব্য করে, এগুলো ভিত্তিহীন কথা। পুরুষানুক্রমে অনুসরণ করে আসা হচ্ছে। আমি অচিরেই তার নাকে খত দিব।

১৭-৩৩নং আয়াতে একটি ফল বাগানের ঘটনার উদাহরণ দিয়ে বুঝানো হয়েছে আল্লাহর ওপর ভরসা না রাখলে, অন্যদের বঞ্চিত করতে চাইলে আল্লাহতায়ালা দুনিয়াতেও শাস্তি দেন এবং পরকালেও কঠিন শাস্তি বরাদ্দ রাখেন।

৫২নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে এ কোরআন গোটা বিশ্ববাসীর জন্য উপদেশ।

সূরা আল হাক্কাহ
সূরা আল হাক্কাহ মক্কি সূরা। এর ক্রমিক সংখ্যা ৬৯। এর মোট আয়াত ৫২টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য বিষয় ও বিধান হলো-

১৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যারা হাশরের মাঠে আমলনামা ডান হাতে পাবে তারা খুশিতে আত্মহারা হয়ে আশপাশের মানুষকে ডেকে ডেকে বলতে থাকবে, নাও। এটা আমার আমলনামা। তুমিও পাঠ করে দেখ। আমি দুনিয়াতে বিশ্বাস করতাম, আমাকে আখেরাতে হিসাবের সম্মুখীন হতে হবে।

২৫-২৯নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, যে ব্যক্তির আমলনামা হাশরের মাঠে তার বাম হাতে প্রদান করা হবে সে তখন বলবে, যদি আমাকে আমলনামা দেয়া না হত তবে কতই না ভালো হতো! আমার ধন-সম্পদ আমার কোনো কাজে আসল না। আমার ক্ষমতা ও আধিপত্যও আজ নেই; হায়! আফসোস! আফসোস!!

সূরা আল মাআরিজ
সূরা আল মাআরিজ মক্কি সূরা। এর ক্রমিক সংখ্যা ৭০, আয়াত ৪৪টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কয়েকটি আয়াতের বিষয় হলো-

১০-১৪নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, সেদিন (কিয়ামতের দিন) বন্ধু বন্ধুর খোঁজ নিবে না। তারা একে অপরকে দেখবে। কিন্তু কেউ কারো প্রতি কোনো প্রকার সমবেদনা প্রকাশ করবে না। অপরাধীরা নিজের মুক্তির জন্য মুক্তিপণ হিসেবে নিজের স্ত্রী, সন্তান, ভাই, বংশ দিয়ে দিতে ইচ্ছা করবে। এমনকি পৃথিবীর সব কিছুর বিনিময়ে মুক্তি প্রার্থনা করবে। কিন্তু কোনো লাভ হবে না। কেউ তাকে মুক্তি দিতে পারবে না। এটাতো লেলিহান আগুন। যা তাকে চামড়াহীন করে ফেলবে।

২২-৩৫নং আয়াতে জান্নাতীদের কিছু গুণের উল্লেখ করা হয়েছে। তারা মন ও দেহের স্থিরতার সঙ্গে নামাজ পড়ে। তারা মনে করে তাদের সম্পদে ভিক্ষুক ও অভাবীদের হক আছে। তারা পরকালের বিচারকে স্বীকার করে। তারা আল্লাহর আজাবকে ভয় করে। তারা বিবাহ বহির্ভূত ভাবে যৌনাচার করে না। তারা আমানত ও অঙ্গীকার রক্ষা করে। তারা সঠিক স্বাক্ষ্য দেয়। তারা নামাজের হেফাজত করে।

৪১নং আয়াতে দ্বীন পালনে অলস জাতিকে সতর্ক করে বলা হয়েছে, আমি ইচ্ছা করলে তাদের স্থলে তাদের চেয়ে উত্তম মানুষ আনার ক্ষমতা রাখি। আমি অক্ষম না।

সূরা আন নূহ
সূরা আন নূহ মক্কি সূরা। এর ক্রমিক সংখ্যা ৭১। মোট আয়াত ২৮টি। এ সূরায় উম্মতের মাঝে হজরত নূহ (আ.)-এর মেহনতের ধরণ, তাদের আচরণ এবং আল্লাহর ফয়সালা বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে।

সূরা জিন
সূরা জিন মক্কি সূরা। ক্রমিক সংখ্যা ৭২, মোট আয়াত ২৮টি। এ সূরায় আল্লাহতায়ালার একত্ববাদ, নবী প্রেরণ ও পরকাল সম্পর্কে কতিপয় জিনের মন্তব্য উল্লেখ করা হয়েছে।

সূরা আল মুজ্জাম্মিল
সূরা মুজ্জাম্মিল মক্কি সূরা। এর ক্রমিক সংখ্যা ৭৩ ও আয়াত ২০টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো-

১২-১৩নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, আমার কাছে আছে শিকল ও জ্বলন্ত আগুন, গলায় আটকে যাওয়ার মতো খাবার। এছাড়াও আছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি।
 
দয়ার নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এবং অনেক সাহাবি সারারাত নফল নামাজ পড়তেন। ফলে তাদের পা ফুলে যেত। ২০নং আয়াত অবতীর্ণ করে আল্লাহতায়ালা বলেদিলেন, যতটুকু সহজসাধ্য ততটুকু রাত পর্যন্ত ইবাদত করুন।

সূরা অাল মুদ্দাসসির
সূরা অাল মুদ্দাসসির মক্কি সূরা। এর ক্রমিক সংখ্যা ৭৪ ও আয়াত ৫৬টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য বিষয় হলো-

৪০-৪ নং আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, জান্নাতীরা কাফেরদের দেখে জিজ্ঞাসা করবে, তোমরা কেন জাহান্নামী হলে? উত্তরে তারা বলবে, আমরা নামাজ পড়তাম না। দরিদ্রকে খাবার দান করতাম না। যারা ইসলামের বা ইসলামের বিধানের ক্ষতি সাধন করত আমরা তাদের সঙ্গে থেকে এ কাজই করতাম। আমরা কিয়ামত দিবসকে অবিশ্বাস করতাম। আর এ অবস্থায় আমাদের মৃত্যু এসে গেল। সুপারিশকারীদের সুপারিশ তাদের কোনো উপকার করবে না।
 
সূরা আল কিয়ামা
সূরা আল কিয়ামা মক্কি সূরা। এর ক্রমিক সংখ্যা ৭৫ ও আয়াত সংখ্যা ৪০টি। এ সূরায় কিয়ামতের দৃশ্য বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা হয়েছে।

সূরা আদ দাহর
সূরা আদ দাহর মাদানি সূরা। এর ক্রমিক সংখ্যা ৭৬। এ সূরার আয়াত ৩১টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-

৭-৮নং আয়াতে জান্নাতীদের কয়েকটি গুণ উল্লেখ করা হয়েছে। তারা মান্নত পূর্ণ করে, পরকালকে ভয় করে, আল্লাহর ভালোবাসায় গরিব, এতিম ও বন্দীদের খাবার দেয়।

সূরা আল মুরসালাত
সূরা আল মুরসালাত মক্কি সূরা। এর ক্রমিক সংখ্যা ৭৭ ও আয়াত সংখ্যা ৫০টি। এ সূরার উল্লেখযোগ্য কিছু বিষয় হলো-

৪৬নং আয়াতে তিরষ্কার করে কাফেরদের বলা হয়েছে, তোমরা দুনিয়াতে কিছুদিন আরাম-আয়েশ করো, ভোগ-বিলাসে মত্ত থাকো। নিঃসন্দেহে তোমরা অপরাধী।

বাংলাদেশ সময়: ১৪৪৭ ঘন্টা, জুলাই ১৩, ২০১৫
এমএ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।