ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

আজকের তারাবিতে জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানীদের নিয়ে থাকছে বিশেষ অালোচনা

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১৬৩৭ ঘণ্টা, জুন ১৩, ২০১৬
আজকের তারাবিতে জ্ঞানার্জন ও জ্ঞানীদের নিয়ে থাকছে বিশেষ অালোচনা

পবিত্র রমজান মাসের প্রথম দশক রহমতের আজ ৭ম দিন। আজকের তারাবিতে পবিত্র কোরআনে কারিমের তেলাওয়াতকৃত অংশের বিশেষ উল্লেখযোগ্য একটি বিষয় হচ্ছে দ্বীনী শিক্ষার গুরুত্ব।

সূরা তওবার ১২২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘তাদের প্রত্যেক দলের এক অংশ বের হয় না কেন, যেন তারা দ্বীন সম্বন্ধে জ্ঞান অর্জন করতে পারে এবং নিজেদের সম্প্রদায়কে সতর্ক করতে পারে, যখন তারা তাদের নিকট ফিরে আসবে। যাতে তারা সতর্ক হয়। ’

ইসলাম ধর্মে জ্ঞার্নাজনের জন্য বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে। জ্ঞান অর্জনের জন্য হিজরত বা ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার গুরুত্ব জিহাদের চেয়ে কোনো অংশে কম নয়। এই আয়াতে ঈমানদারদেরকে উদ্দেশ্য করে বলা হয়েছে, ধর্মীয় বিধি-বিধান গভীরভাবে উপলব্ধির জন্য এবং জ্ঞান অর্জনের জন্য যোগ্য-সামর্থবান একদল মুসলমানকে ঘর থেকে বের হয়ে যেতে হবে এবং সুদূর কোনো দেশ  বা শহরে গিয়ে হলেও জ্ঞান অর্জন করতে হবে। এরপর নিজ এলাকায় ফিরে এসে জ্ঞানের আলো বিতরণের কাজে নিযুক্ত হতে হবে এবং নিজের গ্রাম বা শহরের মানুষকে ধর্মীয় বিধি-বিধান সম্পর্কে সচেতন করার জন্য কাজ করতে হবে।   ইসলাম ধর্মে  জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারে খুব বেশি গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। এমনকি যুদ্ধ চলাকালীন সময়েও জ্ঞান চর্চার ব্যাপারে উদাসীন না থাকার জন্য সতর্ক করা হয়েছে।
দ্বীনী জ্ঞান অর্জন প্রসঙ্গে কোরআনে কারিমের আরও অনেক স্থানে আলোচনা করা হয়েছে। ওই সব স্থানে ইরশাদ করা হয়েছে, ‘তোমাদের মধ্যে যারা ঈমান এনেছে এবং দ্বীনী জ্ঞান দান করা হয়েছে মহান আল্লাহ মর্যাদায় তাদের উন্নত করবেন। ’ –সূরা মুজাদালা: ১১

‘হে আমার প্রভু আমার দ্বীনী জ্ঞান বৃদ্ধি কর। ’ –সূরা ত্বহা: ১১৪

‘নিশ্চয়ই আল্লাহর বান্দাদের মধ্যে দ্বীনের জ্ঞানীরাই তাকে ভয় করে। ’ –সূরা ফাতির: ২৮

‘যারা দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করেছে, আর যারা দ্বীনী জ্ঞান অর্জন করেনি তারা কি সমান (মর্যাদার অধিকারী)?’ –সূরা যুমার: ৯

মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, ‘আল্লাহ যার কল্যাণ কামনা করেন তাকে দ্বীনের জ্ঞান দান করেন। ’ –সহিহ বোখারি: ৭১

‘দ্বীনী জ্ঞান শিক্ষা করা প্রত্যেক মুসলমানের ওপর ফরজ। ’ -ইবনে মাজাহ: ২২৪

‘যারা জনসাধারণকে দ্বীন শেখায় আল্লাহর তাদের ওপর রহমত বর্ষণ করেন। ফেরেশতারা তাদের জন্য মগফেরাতের দোয়া করে। আকাশবাসী ও পৃথিবীবাসীরা তাদের জন্য রহমতের দোয়া করে। এমনকি গর্তের পিঁপড়া ও পানির মাছও তাদের জন্য রহমতের দোয়া করে। ’ –সুনানে তিরমিজি: ২৬৮৫

‘যে ব্যক্তি দ্বীন শেখার জন্য পথে বের হয়, আল্লাহ তার জন্য জান্নাতের পথ সহজ করে দেন। তালেবে ইলমের সম্মানার্থে ফেরেশতারা তাদের ডানা অবনত করেন। আকাশ ও পৃথিবীর অধিবাসীরা আলেমের জন্য মাগফেরাতের দোয়া করেন। এমনকি, পানির মাছও তার জন্য মাগফেরাতের দোয়া করে। আবেদের ওপর আলেমের শ্রেষ্ঠত্ব তারকারাজির ওপর পূর্ণিমার রাতের চাঁদের শ্রেষ্ঠত্বের মতো। আলেমরা নবীদের উত্তরাধিকারী। নবীগণ সোনা-রূপার মহর রেখে যান না। তারা দ্বীনের শিক্ষা রেখে যান। যে ব্যক্তি তা গ্রহণ করে, সে বিশাল সৌভাগ্যের অধিকারী হয়। ’ –সুনানে আবু দাউদ: ৩৬৪৩

ইসলামের অস্তিত্ব ও ভবিষ্যৎ নির্ভর করে ইসলামের শিক্ষার ওপর। ইসলামের সঠিক শিক্ষা যদি থাকে তবে ইসলাম থাকবে। আর যদি ইসলামী জ্ঞানের সঠিক চর্চা ও শিক্ষা না থাকে তবে ইসলাম বিলুপ্ত হবে, নিশ্চিহ্ন হবে। তাই মহান আল্লাহ ও তার রাসূল দ্বীনের জ্ঞান অর্জন ও শেখানোকে অত্যাধিক গুরুত্ব দিয়েছেন। সূরায়ে তওবার ১২২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ দ্ব্যার্থহীন ভাষায় নির্দেশ দিয়েছেন, মুসলমানদের একটি বড় অংশ যেন সবসময় দ্বীনী জ্ঞানের চর্চায় আত্মনিয়োজিত থাকে। একদল সাহাবা কোরআন ও হাদিস শেখার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পবিত্র মসজিদের বারান্দায় দিন-রাত পড়ে থাকতেন। তারা ব্যবসা-বাণিজ্য করতেন না। কোনো চাকরি করতেন না। শ্রম বিনিয়োগও করতেন না। হাদিস ও ইতিহাসের বইয়ে তারা আসহাবুস সুফফা নামে পরিচিত।

প্রতেকের জন্য তার কাজ ও অবস্থা সম্পর্কিত দ্বীনের জ্ঞান শিক্ষা করা ফরজ। যে ব্যক্তি ব্যবসা করা তার জন্য ব্যবসা, বেচা-কেনা ইত্যাদির শরয়ি বিধান শিক্ষা করা ফরজ। যে ব্যক্তি বিয়ে করবে, তার জন্য সংসার বিষয়ক ধর্মীয় জ্ঞান শিক্ষা করা ফরজ। যে ব্যক্তি হজে যাবে তার জন্য হজের বিধানসমূহ শেখা ফরজ। এভাবে প্রত্যেক মুসলমানের ওপর প্রয়োজনীয় ধর্মীয় জ্ঞান অর্জন কার ফরজে আইন। প্রয়োজন তার পরিস্থিতি ও অবস্থার সঙ্গে সম্পৃক্ত।

কিন্তু দ্বীন ইসলামের সামগ্রিক জ্ঞানে বুৎপত্তি ও পাণ্ডিত্য অর্জন করা, কোরআন-হাদিসের অগাধ জ্ঞান শিক্ষা করা সমাজের সব মুসলমানদের ওপর ফরজে কেফায়া। পর্যাপ্ত সংখ্যক মুসলমান এ কাজে নিয়োজিত হলে, বাকিরা গুনাহ থেকে মুক্তি পাবে। নচেৎ সব মুসলমান গুনাহগার হবে। তবে মর্যাদা, সম্মান ও ফজিলত তাদের জন্য যারা দুনিয়ার ঐশ্চর্য, বিলাসিতা আর অঢেল সম্পদের পথকে সচেতনভাবে, জ্ঞাতসারে প্রত্যাখ্যান করে দ্বীনী জ্ঞানের সেবা করার জন্য নিজের পূর্ণ জীবন উৎসর্গ করে দেয়। যারা কোনোভাবে পেটে ভাতে বেঁচে থেকে কোরআন-হাদিসের চর্চাকে নিজের জীবনের একমাত্র লক্ষ্য স্থির করে। সূরা তওবার ১২২ নম্বর আয়াতে, সূরা জুমারের ৯ নম্বর আয়াতে ও সূরা মুজাদালার ১১ নম্বর আয়াতে তাদের কথাই আলোচনা করা হয়েছে।

বাংলাদেশ সময়: ১৬৩৫ ঘন্টা, জুন ১৩, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।