ঢাকা, শনিবার, ১৪ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ২৮ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

আরবি ভাষা মুসলিম জাতিসত্ত্বার অবিচ্ছেদ্য অংশ

মুফতি মাহফূযুল হক, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২০৫৯ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৬
আরবি ভাষা মুসলিম জাতিসত্ত্বার অবিচ্ছেদ্য অংশ

আজকের সূর্যাস্ত থেকে শুরু হবে রমজানের শেষ দশক। এ দশক নাজাতের দশক।

আজকে অনুষ্ঠিত ২১তম খতমে তারাবিতে থাকবে আরবি ভাষার মর্যাদা এবং মুসলমানের জীবনে এ ভাষার প্রয়োজনীয়তা প্রসঙ্গে আলোচনা। এ প্রসঙ্গে সূরায়ে হামিম সাজদার ৩ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ ইরশাদ করেছেন, ‘এটা গ্রন্থ। এর আয়াতসমূহ কোরআনরূপে বিশদভাবে আরবি ভাষায় বিবৃত, জ্ঞানীদের জন্য। সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে। ’

বর্ণিত আয়াত ছাড়া আরও অনেক আয়াতে কোরআনের ভাষা আরবি সম্পর্কে নানা প্রসঙ্গে আলোজিত হয়েছে।
মুসলমান মাত্রই আরবি ভাষার সঙ্গে তার রয়েছে আত্মার সম্পর্ক, হৃদয়ের সম্পর্ক। প্রতিটি মুমিনের হৃদয়ে আরবি ভাষার প্রতি রয়েছে গভীর দুর্বলতা, ভালোবাসা, আকর্ষণ ও শ্রদ্ধা।

ইসলামি বিধানে অন্যতম প্রধান দু’ই উৎস কোরআন ও হাদিসের ভাষা আরবি। সঠিক ইসলামকে তার মূল থেকে শিখতে হলে আরবি ভাষার কোনো বিকল্প নেই। ইসলাম ও মুসলিম জাতি স্বত্বার সঙ্গে আরবি ভাষার সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড় ও অবিচ্ছিন্ন। তাই মহান আল্লাহ আরবি ভাষাকে বিকৃতি ও বিলুপ্তির হাত থেকে রক্ষা করেছেন এবং করবেন।

আপনি পৃথিবীর যে দেশেই যাবেন, সেখানে মুসলিম আছে, আলেম আছে। সেখানে আছে আরবি ভাষার চর্চা। আপনার যদি আরবি ভাষার নূন্যতম জ্ঞান থাকে তবে আপনি আপনার প্রয়োজনীয় কাজ সারতে পারবেন।

খোলাফায়ে রাশেদিনের আমলে সাহাবারা পৃথিবীর যে দিকে গেছেন, তারা তিনটি জিনিস সঙ্গে করে নিয়ে গেছেন। কোরআন, ইসলাম ও আরবি ভাষা। বিজিত অঞ্চলের অধিবাসীরা নবীর সাহাবিদের থেকে আগ্রহভরে ইসলাম শিখত, কোরআন শিখত আবার আরবি ভাষাও শিখত।

হজরত ওমর (রা.) বলেছিলেন, ‘আরবি ভাষা শেখ। কারণ এটা তোমার দ্বীনের অংশ। ’ উবাই ইবনে কাব বলেছিলেন, ‘ওই পরিমাণ গুরুত্ব দিয়ে আরবি ভাষা শেখ, ঠিক যে পরিমাণ গুরুত্ব দিয়ে তোমরা কোরআন হেফজ কর। ’ হজর ওমর (রা.) হজরত আবু মুসা আশআরিকে লিখেছিলেন, ‘সুন্নাহর জ্ঞানার্জন কর এবং আরবি ভাষার জ্ঞানার্জন কর। ’

আমরা যদি পার্থিব কারণে অন্যান্য বিদেশি ভাষা শিখতে পারি, তবে আমাদের আত্মার খোরাক হিসেবে, ধর্মীয় প্রয়োজনে, প্রিয়তম রাসূলের ভালোবাসার দাবিতে, কোরআনের মাধুর্য সরাসরি উপলব্ধি করার পিপাসায় আমরা আরবি ভাষা কেন শিখতে পারব না? আরবি ভাষা শেখা খুব সহজ।

এ প্রসঙ্গে আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেছেন, ‘আমি কোরআন সহজ করে দিয়েছি। ’ যেহেতু কোরআন সহজ, তাই অবশ্যই আরবি ভাষা শেখাও সহজ।

প্রতিদিন কম করেও হলে আমাদের কানে আজানের ধ্বনি ভেসে আসে। এর ভাষা আরবি। আজানে মাত্র ২০টি শব্দ রয়েছে। এ বিশটি শব্দ যদি অর্থ ও তার ব্যবহারসহ আপনি শিখেন, তবে বাক্যের অনুবাদ মুখস্থ করা ব্যতীত আজানের আবেদন আপনি সরাসরি হৃদয় থেকে অনুধাবন করতে পারবেন।

অধিকাংশ মুসলমানই নামাজের জন্য ছোট্ট এগারোটি সূরা মুখস্থ করে থাকেন, সেই সঙ্গে শিখেন সানা, তাশাহহুদ, দরুদ শরিফ, বিভিন্ন দোয়া ও রুকু-সিজদার তাসবিহ। পুনরাবৃত্তি বাদ দিলে এগুলোতে ব্যবহৃত শব্দের পরিমাণ খুব বেশি হবে না। অবসর জীবনের কিছু সময় দিয়ে এ শব্দগুলোর অর্থ ও সামান্য ব্যবহার শিখলে নামাজ পড়ার সত্যিকার স্বাদ পাওয়া যাবে। তখন আপনার কাছে মনে হবে জীবন্ত নামাজ পড়ছেন। বিশ্বাস না হয় পরীক্ষা করে দেখুন। একটা অপার্থিব তৃপ্তিতে আপনার অন্তর ভরে যাবে। আরশের আলোয় আলোকিত হবে আপনার মন।

শিক্ষিতদের জন্য কাজটা একেবারেই সহজ। শুধু সিদ্ধান্ত নিন- নামাজ বুঝে পড়ব। তবেই দেখবেন আরবি ভাষা শেখার পথে অনেকটা অগ্রসর হতে পারছেন। একদিন দেখবেন জুমার খুতবাও বুঝতে পারছেন। তারাবির কোরআন তেলাওয়াতও বুঝবেন। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।

বাংলাদেশ সময়: ২০৫৮ ঘণ্টা, জুন ২৬, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।