ঢাকা, বৃহস্পতিবার, ১৪ চৈত্র ১৪৩০, ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৭ রমজান ১৪৪৫

অপার মহিমার রমজান

ইতিকাফের প্রয়োজনীয় মাসয়ালা

| বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ২১০৮ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
ইতিকাফের প্রয়োজনীয় মাসয়ালা

পবিত্র রমজান মাসের শেষ ১০ দিন মসজিদে ইতিকাফ করা সুন্নতে মোয়াক্কাদা কেফায়া। যারা ৩ দিন ইতিকাফ করার দ্বারা সুন্নত আদায় হয়ে যাবে বলে তাদের কথা সঠিক নয়।

কেউ যদি রমজানের শেষ দশদিন ইতিকাফ করতে চায় তাহলে সে ২০ রমজান সূর্যাস্তের পূর্বেই ইতিকাফের নিয়ত মসজিদে প্রবেশ করবে। -সহহি বোখারি, হাদিস: ২০২৭, আদ্দুররুল মুখতার: ২/৪৪২

মাসয়ালা: ইতিকাফ সহিহ হওয়ার জন্য শরিয়তের সংজ্ঞায় মসজিদ হওয়া শর্ত। -আল বাহরুর রায়েক: ৫/৪১৭

মাসয়ালা: এক মহল্লায় একাধিক মসজিদ থাকলে প্রত্যেক মসজিদে ইতিকাফ করা উত্তম হলেও জরুরি নয়। বরং যেকোনো এক মসজিদে ইতিকাফ করলে মহল্লাবাসীর পক্ষ থেকে যথেষ্ট হয়ে যাবে। স্থানীয় লোকের মধ্যে যে স্থানটি মহল্লা বা গ্রাম হিসাবে পরিচিত তাই মহল্লা বা গ্রামের পরিধি বা সীমা। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪২, ২/৪৫, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৭/১৬৯

মাসয়ালা: কোনো গ্রামের মসজিদে অন্য গ্রামের লোকের ইতেকাফের দ্বারা ওই গ্রামের সবার পক্ষ থেকে ইতিকাফের সুন্নতে মোয়াক্কাদায়ে কেফায়া আদায় হয়ে যাবে। তবে গ্রামবাসীর জন্য উচিত তাদের মধ্য হতে কারো ইতিকাফে বসা। -ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৭/১৭১

মাসয়ালা: ইতিকাফ একটি মহৎ ইবাদত। এ ইবাদত প্রত্যেক মুসলমান স্বেচ্ছায় পালন করার চেষ্টা করতে হবে। ইসলামি শরিয়তে বিনিময় দিয়ে ভাড়া করে ইবাদত পালন করার কোনো সুযোগ নেই। টাকার বিনিময়ে ইতিকাফ করা এবং করানো সম্পূর্ণ নাজায়েয, এভাবে ইতিকাফ করানোর দ্বারা মহল্লাবাসী দায়মুক্ত হবে না। -রদ্দুল মুহতার: ২/৫৯৫, ফাতাওয়ায়ে মাহমুদিয়া: ১৭/১৭১

দশ দিনের কম ইতিকাফ
মাসয়ালা:
আমাদের দেশের অনেক এলাকায় দেখা যায়, তারা রমজানের শেষ দশকের ইতেকাফ না করে শুধুমাত্র ২৭ তারিখে ইতিকাফ করে থাকে। এমনকি অনেক এলাকায় ২৭ তারিখের ইতিকাফ জরুরিও মনে করে। নফলের নিয়তে জরুরি মনে না করে ২৭ তারিখ বা অন্যকোনো দিনে ইতিকাফ করলে তাতে কোনো সমস্যা নেই। অবশ্য শুধু ২৭ তারিখে ইতিকাফকে জরুরি মনে করার অবকাশ নেই। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২১১, ফাতাওয়ায়ে রশিদিয়া, পৃ: ৪৬১

মাসয়ালা: যে ব্যক্তি সুন্নত ইতিকাফ শুরু করে ভেঙে ফেলেছে, রমজানের পর রোজাসহ একদিন ও এক রাত ইতেকাফ করবে। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪৫

মাসয়ালা: যে নিয়মে নবী করিম (সা.) রমজানের শেষ দশকে ইতিকাফ করেছেন, ঠিক সেভাবে আদায় করলেই তা সুন্নত ইতিকাফ বলে গণ্য হবে। এর বিপরীত কোনো শর্ত যুক্ত করলে তা নফল ইতিকাফ বলে বিবেচিত হবে, সুন্নত ইতিকাফ হবে না। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২১২, আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৫০৯

মসজিদ থেকে বের হওয়া
মাসয়ালা:
প্রাকৃতিক, মানবীয় ও শরয়ি প্রয়োজনে মসজিদ থেকে বের হতে পারবে। যদি মসজিদের সীমানার ভিতরে অজুর ব্যবস্থা না থাকে, তাহলে শুধু অজুর জন্য বের হওয়ার অনুমতি রয়েছে। -আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৫১০

মাসয়ালা: মসজিদের আদবের খেলাফ কোনো কাজ করা বা মুসল্লিদের ও ফেরেশতাদের কষ্ট হয়, এমন কোনো কাজ করার অনুমতি নেই। তাই নির্ভরযোগ্য বর্ণনা অনুযায়ী ইতিকাফকারী ব্যক্তি বায়ু নির্গমনের জন্য মসজিদ থেকে বের হয়ে যাবে। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ৫/৩৬১, ইমদাদুল ফাতাওয়া: ২/১৫২

মাসয়ালা: শেষ দশকের সুন্নত ইতিকাফকারীর জন্য মানবীয় ও শরয়ি বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া অন্য কোনো কারণে মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নেই, বের হলে ইতেকাফ ভেঙে যাবে। সুতরাং ফরজ গোসল ছাড়া গরম ও গায়ের দুর্গন্ধের কারণে গোসল করার জন্য বের হওয়া জায়েয নেই। হ্যাঁ, যদি অতীব প্রয়োজন হয় এবং মসজিদে গোসলের পানি না পড়ার মতো গোসলের ব্যবস্থা থাকে তাহলে মসজিদেই গোসল করবে, অথবা ভিজা গামছা দিয়ে শরীর মুছে ফেলবে। আর প্রস্রাব-পায়খানা করতে গিয়ে অজু পরিমাণ স্বল্প সময়ের মধ্যে সাবান ইত্যাদি ছাড়া স্বাভাবিক গোসল করতেও কোনো অসুবিধা নেই। -রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪০, ২/৪৪৫, আহসানুল ফাতাওয়া: ৪/৫১৫

মাসয়ালা: রমজান মাসে ইতিকাফকারী মসজিদের মোয়াজ্জিন হোক বা না হোক বিদ্যুত থাকুক বা না থাকুক সর্বাবস্থায় মসজিদের বাইরে গিয়ে আজান দিতে পারবে। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২১২, রদ্দুল মুহতার: ২/৪৪৬

মাসয়ালা: ইতিকাফকারীর জন্য জানাজা বা রোগী দেখার জন্য মসজিদ থেকে বের হওয়া জায়েয নেই। তবে প্রস্রাব-পায়খানা বা অন্য কোনো প্রয়োজনে বের হয়ে পথিমধ্যে রোগী দেখা এবং জানাজায় শরিক হওয়া জায়েয আছে। -ফাতাওয়ায়ে হিন্দিয়া: ১/২১২, মাআরিফুস সুনান: ৫/৫৪০

বাংলাদেশ সময়: ২১০৭ ঘণ্টা, জুন ২৮, ২০১৬
এমএইউ/

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।