ঢাকা, মঙ্গলবার, ১১ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ২৪ জমাদিউল আউয়াল ১৪৪৬

অপার মহিমার রমজান

দ্রুত ইফতারকারী আল্লাহতায়ালার অধিক প্রিয়

আতাউর রহমান খসরু, অতিথি লেখক, ইসলাম | বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম
আপডেট: ১০০৪ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৭
দ্রুত ইফতারকারী আল্লাহতায়ালার অধিক প্রিয় রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দ। এক আনন্দ ইফতারের সময় এবং অপর আনন্দ আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়

সারাদিন আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য বৈধ বিষয় থেকে বিমুখ থাকার পর মুমিন যখন পানাহারের অনুমতি পায়, স্বাভাবিকভাবেই ক্ষুধা-তৃষ্ণায় ক্লান্ত দেহ-মন আনন্দের ভরে ওঠে।

ইসলাম এ আনন্দকে পবিত্র বলে স্বীকৃতি দিয়েছে। ঘোষণা দিয়েছে, আরও বড় আনন্দ রোজাদারের জন্য অপেক্ষা করছে।

হজরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘রোজাদারের জন্য দু’টি আনন্দ। এক আনন্দ ইফতারের সময় এবং অপর আনন্দ আল্লাহর সঙ্গে সাক্ষাতের সময়। ’ -সহিহ মুসলিম

হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইফতারের এ পবিত্র আনন্দে অংশগ্রহণ করতেন, তিনি দ্রুত ইফতার গ্রহণ করতেন। কখনও বিলম্ব করতেন না। কেননা আল্লাহতায়ালা দ্রুত ইফতারকারীকে পছন্দ করেন। তিনি বলেন, আল্লাহ বলেছেন, ‘আমার নিকট দ্রুত আমার ইফতারকারী বান্দা অধিক প্রিয়। ’ -জামে তিরমিজি

হরজত রাসূলুল্লাহ (সা.) ভেজা খেজুর (পাকা ও রসালো) ও পানি দিয়ে ইফতার করতে পছন্দ করতেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ (সা.) নামাজের পূর্বে পাকা রসালো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। পাকা খেজুর না থাকলে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। আর তাও না থাকলে পানি পান করতেন। ’ -মুসনাদে আহমদ
 
অন্য হাদিসের বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) খেজুরের সঙ্গে অন্যান্য ফল দিয়েও ইফতার করতেন। হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) তিনটি খেজুর অথবা আগুন স্পর্শ করেনি এমন জিনিস দ্বারা ইফতার করতেন। ’ -কানজুল উম্মাল
 
হাদিস বিশারদদের মতে আগুন স্পর্শ করেনি দ্বারা উদ্দেশ্য হলো- তাজা ফল অথবা মধু ও দুধ। হজরত আনাস (রা.) অন্য বর্ণনায় বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, ইফতারে হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) দুধও পছন্দ করতেন।
 
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) মাগরিবের নামাজের পূর্বেই ইফতার করতেন। তবে ইফতারে এতো বেশি সময় দিতেন না যাতে নামাজে বিলম্ব হয়। বরং তিনি সামান্য ইফতার গ্রহণ করে নামাজ আদায় করে নিতেন। অতপর রাতের খাবার গ্রহণ করতেন। হজরত ইবনে আতিয়্যাহ (রা.)-এর হাদিসে হজরত আয়েশা (রা.) বলেছেন, হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইফতার ও নামাজ উভয়টিই দ্রুত করতেন। অর্থাৎ সামান্য খাবার গ্রহণ করে নামাজে অংশ নিতেন। -সহিহ মুসলিম

ইফতার নিজে করা যেমন পুণ্যের তেমনি অন্যকে ইফতার করানোও পুণ্যের কাজ। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) রোজাদারকে ইফতার করাতে উদ্বুদ্ধ করেছেন। হজরত জায়েদ বিন খালেদ জুহনি (রা.) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি কোনো রোজাদারকে ইফতার করালো তার জন্য রয়েছে অনুরূপ প্রতিদান, অথচ রোজাদারের প্রতিদান কমানো হবে না। -জামে তিরমিজি

ইফতার আল্লাহর পক্ষ থেকে বান্দার জন্য অনুগ্রহ। বান্দার কর্তব্য হলো- অনুগ্রহের কৃতজ্ঞতা আদায় করা। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইফতার গ্রহণের সময় দোয়া পাঠের মাধ্যমে আল্লাহর কৃতজ্ঞতা আদায় করতেন এবং রোজা কবুলের দোয়া করতেন। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.) ইফতারের নিম্নের দোয়া পাঠ করতেন-

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা লাকা সুমতু, ওয়া আলা রিজকিকা আফতারতু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি, ইন্নাকা আনতাস সামিউল আলিম। ’

অর্থ: হে আল্লাহ! আমি আপনার জন্য রোজা রেখেছি, আপনার দেওয়া জীবিকা দিয়ে ইফতার করছি, সুতরাং তা আমার পক্ষ থেকে কবুল করে নিন। নিশ্চয় আপনি সব শোনেন ও জানেন। -কানজুল উম্মাল

যখন কেউ হজরত রাসূলুল্লাহকে (সা.) ইফতার করাতেন, তখন রাসূলুল্লাহ (সা.) তার জন্য দোয়া করতেন। হজরত সাদ বিন উবাদা (রা.)-এর ঘরে রাসূল (সা.) দোয়া করেন-

উচ্চারণ: আফতারা ইন্দাকুমুস সায়িমুন, আকালা তয়ামাকুমুল আবরার, ওয়া সাল্লাত আলাইকুমুল মালায়িকা।

অর্থ: তোমাদের সঙ্গে রোজাদাররা ইফতার করেছে, পুণ্যবান ব্যক্তিরা তোমাদের খাবার খেয়েছে এবং ফেরেশতাগণ তোমাদের জন্য দোয়া করেছেন। -রিয়াদুস সালিহিন
 
হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর সাহাবিগণ ইফতারের সময় ঘনিয়ে এলে পার্থিব কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তির দোয়া করতেন। কেননা রাসূল (সা.) বলেছেন, ‘আল্লাহতায়ালা ইফতারের সময় অগণন মানুষকে ক্ষমা করে দেন। ’ -মাজমাউত তিবরানি

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) ইফতারের সময় নিম্নোক্ত দোয়া পাঠ করতেন-

উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা বিরহমাতিকাল্লাতি ওয়াসাত কুল্লা শাইয়িন, আন তাগফিরালি জুনুবি।

অর্থ: হে আল্লাহ! নিশ্চয় আমি আপনার অনুগ্রহ প্রার্থনা করছি যা সবকিছুকে আচ্ছন্ন করে আছে। আপনি আমার পাপ মার্জনা করুন।

আসুন! আমরা হজরত রাসূলুল্লাহ (সা.)-এর অনুকরণে দ্রুত ইফতার সেরে মাগরিবের জামাতে অংশগ্রহণ করি। সম্ভব হলে, খেজুর ও অন্যান্য ফল দিয়ে ইফতার করি। প্রতিবেশিদের ইফতার করাই এবং ইফতারের সময় মাসনুন দোয়াগুলো পাঠ করি। আল্লাহ আমাদের তওফিক দান করুন। আমিন।

ইসলাম বিভাগে লেখা পাঠাতে মেইল করুন: [email protected]

বাংলাদেশ সময়: ১৬০৫ ঘণ্টা, মে ৩০, ২০১৭
এমএইউ

বাংলানিউজটোয়েন্টিফোর.কম'র প্রকাশিত/প্রচারিত কোনো সংবাদ, তথ্য, ছবি, আলোকচিত্র, রেখাচিত্র, ভিডিওচিত্র, অডিও কনটেন্ট কপিরাইট আইনে পূর্বানুমতি ছাড়া ব্যবহার করা যাবে না।